শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
22 Nov 2024 05:10 am
জাহাঙ্গীর আলম মানিক,সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি:- স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৩ বছর পর আবারো ফিরে এলো সেই ভয়াল ১৩’সেপ্টেম্বর। ১৯৭১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সাপাহার উপজেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটি ঐতিহাসিক স্মরনীয় দিন।
প্রতি বছর এ দিনটি আসলেই উপজেলার মুক্তিসেনা ও স্বাধীনতাকামী লোকজনের মাঝে সেই ভয়াল ১৩ সেপ্টেম্বরের কথা স্মরনে আসে।১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধার একটি সু-সজ্জিত দল সাপাহার উপজেলাকে শক্রু মুক্ত করতে পাকসেনার বিরুদ্ধে দূর্বার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। সেই দিনের যুদ্ধে ২১জন বীর মুক্তি সেনা দেশ মাতৃকার টানে হাসি মুখে তাদের তাজা প্রান বিসর্জন দিয়েছিলেন। যুদ্ধে আহত হয়ে ছিলেন অনেক দেশ প্রেমিক বীর মুক্তি যোদ্ধা। তাই ১৩’সেপ্টেম্বর সাপাহার বাসীর জন্য ইতিহাসের ভয়াল দিন হিসেবে আজও পরিচিত।
প্রতিবছর এই দিনটি স্মরনে অনেক সন্তান হারা মা’ ভাইহারা বোন ও তাদের আত্মীয় স্বজনরা অঝোর ধারায় তাদের চোখের পানি ফেলেন। ঘটনার প্রত্যদর্শী সে দিনের যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মনছুর আলী, আঃ রাজ্জাক সহ একাধীক মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকার প্রবীণদের নিকট থেকে জানাগেছে, দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে পাকহানাদার বাহিনী ও তার দোসররা সাপাহার সদরের পূর্বদিকে একটি পুকুর পাড় ও পাড় সংলগ্ন স্কুলে (বর্তমানে পাইলট উচ্চবিদ্যালয়) একটি শক্তিশালী ক্যাম্প স্থাপন করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।
এখান থেকেই তারা এলাকার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে অসহায় মা বোনদের সম্ভ্রমহানি নিরহী লোকদের ব্রাশফায়ার করে হত্যা ও বাড়ী ঘরে অগ্নি সংযোগ করে থাকত। দেশের এই অবস্থায় বর্বর হানাদার বাহিনীর কবল থেকে সাপাহারবাসীকে মুক্ত করার জন্য সাপাহার এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে তৎকালীন পাকহানাদার বাহিনীর লেঃশওকত আলীর অধীন সাপাহারে ওই শক্তিশালী ক্যাম্পটিকে উৎখাত করার জন্য ১৩’সেপ্টম্বর রাতে আক্রমন চালানোর সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। সিদ্ধান্ত মোতাবেক ওই দিন রাতে মুক্তিযোদ্ধা মেজর রাজবীর সিংএর আদেশক্রমে ও ইপিআর হাবিলদার আহম্মদ উল্লাহর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধার সংঘটিত দলটিকে ৩টি উপদলে বিভক্ত করে একটি দলকে সাপাহার- পত্নীতলা রাস্তার মধইল ব্রিজে মাইন বসানোর কাজে নিয়োজিত করা হয়, যাতে পত্নীতলা হতে শক্রুসেনারা সাপাহারে প্রবেশ করতে না পারে।
অন্য একটি দলকে নিয়োজিত করা হয় সার্বনিক টহল কাজে। আর মূল দলটি অবস্থান নেয় শক্রু শিবিরের একেবারে কাছাকাছি একটি ধানেেত। কিন্তু হাজারো সর্তকতা ও নিñিদ্রতার জাল ভেদ করে মোনাফেক রাজাকার আলবদর মারফত মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনের খবর পৌঁছে যায় শক্রু শিবিরে। তাৎনিক ভাবে পাকসেনারও যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। চলতে থাকে উভয় পরে মধ্যে যুদ্ধের নানা পরিকল্পনা। অবশেষে শেষ রাতের দিকে ধানেেত অবস্থান নেয়া মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র গর্জে ওঠার সাথে সাথে বেজে ওঠে যুদ্ধের দামামা। শুরু হয় উভয় পরে মধ্যে তুমুুল লড়াই।
লড়ায়ের একপর্যায়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার দলটি যখন শত্র“সেনাদের প্রায় কোন ঠাসা করে ফেলেছিল ঠিক এমনি অবস্থায় ভোরের আভাস পেয়ে ব্রীজে মাইন বসানোর দলটি সেখান থেকে সরে পড়লে তার কিছুন পরই পতœীতলা হতে অসংখ্য শক্রু সেনা আরোও ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সাপাহারে প্রবেশ করে। এর পর শক্রুপরে অত্যাধুনিক ভারী অস্ত্রের মুখে হিমশিম খেয়ে এক সময় বাধ্য হয়ে পিছু হটতে হয় মুক্তিযোদ্ধাদের।
এ সময় শক্রু পরে গুলির আঘাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান, আইয়ুব আলী, আব্দুল হামিদসহ ১৫জন ঘটনা স্থলেই শাহাদাতবরন করেন। আহত হন মনছুর আলী , এস,এম জাহিদুল ইসলাম,দলনেতা আহমদ উল্লাহ সোহরাব আলী, নুরুল ইসলাম সহ অনেকে। এছাড়া শক্রুদের হাতে জীবিত ধরা পড়েন ৮জন মুক্তিযোদ্ধা। আটক ৮জনের ৪জনকে পত্নীতলার মধইল স্কুলের ছাদে তুলে কুপিয়ে হত্য করে লাশগুলি লাথি মেরে নিচে ফেলে দেয়।
২জনকে ধরে এনে মহাদেবপুরের একটি ক‚পে ফেলে দিয়ে জীবন্ত কবর দেয় এবং সাপাহারের তিলনা গ্রামের আবু ওয়াহেদ গেটের ও মহাদেবপুর উপজেলার জোয়ানপুর গ্রামের মৃত এস, এম আবেদ আলীর পুত্র এস,এম জাহিদুল ইসলামকে ধরে এনে নাটোরের রাজবাড়ীতে তৈরীকৃত জেলখানায় বন্দি করে রাখে। সেই ভয়াল ১৩’সেপ্টেম্বরের স্মৃতি চারণ করতে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজো নিরবে চোখের জল ফেলেন।
১৯৭১সালে ১৩ সেপ্টেম্বর স্মরনে সাপাহারে কোন প্রকার আনুষ্ঠানিকতা না থাকলেও সাপাহারে কর্মরত সাংবাদিকগন প্রতিবছর পত্রিকায় এ সংক্রান্ত লেখা প্রকাশ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের শ্রোদ্ধাভরে স্মরন করে আসছে। এ বিষয়ে সাপাহার উপজেলার সদ্য সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলহাজ্ব ওমর আলী জানান, ২১ বীর সেনার স্বরনে ্এ দিন মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে স্বরন সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে।