শুক্রবার, ০১ আগস্ট, ২০২৫
02 Aug 2025 03:12 am
![]() |
আবু ইউসুফ নওগাঁ প্রতিনিধি:- নওগাঁয় অপহরণ করে হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদন্ড এবং ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলায় দুই আসামির যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। রায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার নির্দেশ, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামিদের ১ লাখ টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
অপহরণ ও হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মিশু (১৯) পিংকি (৩০)। এছাড়ও এ মামলায় দুই আসামি হুজাইফা এবং সাজু আহমেদ এর ১৮ বছর পূর্ন না হওযায় তাদের ১০ বছর আটকাদেশ দেওয়া হয়।
যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-মোরশেদ (৩৫) রবিউল (৩৮)। এ মামলায় সুলতানা পারভিন নামে এক নারীকে খালাস প্রদান করা হয়েছে।
হত্যা মামলার এজাহার সুত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৭ নভেম্বর নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার খাদাইল গ্রামের নাজমুল নামের এক স্কুল ছাত্রকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অপহরণ করে তার বাবার কাছ ১৫লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন কয়েকজন যুবক। মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে পরের দিন আসামিরা নাজমুলকে হত্যা করে প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে আসামিরা আক্কেলপুর রেলগেটের উত্তর পাশে ডোবার মধ্যে ফেলে রাখে। পরে নাজমুলের বাবা বদলগাছী থানায় অভিযোগ করলে তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা থাকায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২০ জনের সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন শেষে আজ দুই আসামি মিশু ও পিংকিকে মৃত্যুদন্ড দেয় বিচারক। একই সাথে তাদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ মামলার আরও দুই আসামির ১৮ বছর পূর্ন না হওযায় তাদের ১০ বছর আটকাদেশ দেওয়া হয়।
ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলার এজাহার সুত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মান্দা উপজেলার চকদেবীরাম গ্রামের এক মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে উপজেলার বালুবাজার গ্রামের মোরশেদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ওই মেয়েকে ধর্ষণ করে আসামি রবিউল ইসলাম। এসময় তিনি মোবাইলে ধর্ষণের ভিডিও ধারন করে রেখে দেয়। পরবর্তীতে ওই মেয়েকে রবিউল বিয়ে না করলে মেয়ের পরিবার তাকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিলে আসামি রবিউল ওই মেয়ের স্বামীর কাছে ধর্ষণের ভিডিও পাঠায়। ধর্ষণের ভিডিও এবং ছবি দেখে ওই মেয়ের স্বামী তাকে তালাক দেন। কিছুদিন পরে ঢাকার বিক্রমপুরে ওই মেয়ের দ্বিতীয় বিয়ে হলে রবিউল তার দ্বিতীয় স্বামীর কাছেও ধর্ষণের ভিডিও পাঠায়। তখন তার দ্বিতীয় স্বামী আইনি পরামর্শের কথা বলে ওই মেয়েকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। ধর্ষণের শিকার ওই মেয়ে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করলে মান্দা থানা পুলিশ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগে সংশ্লিষ্টতা থাকার রিপোর্ট প্রদান করেন। দীর্ঘদিন ধরে চলা এ মামলায় ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন শেষে মোরশেদ এবং রবিউল ইসলামকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড এবং অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদন্ড প্রদান করেন। এ মামলায় সুলতানা পারভিন নামে আরেক আসামীর অভিযোগ প্রমাণিত না হয় আদালত তাকে খালাস প্রদান করেছেন।
উভয় মামলার রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এর বিশেষ কুশলি এডভোকেট রেজাউল করিম সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।