অফিস ডেস্ক
বগুড়া সেনানিবাসের ‘পরিচ্ছন্নতাকর্মী’ পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত এবং তদন্ত সাপেক্ষে হরিজনদের ৮০% অগ্রাধিকার বিষয়ক প্রজ্ঞাপন বাস্তবায়নের দাবীতে বগুড়ার শেরপুরে মানববন্ধন, সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান
বগুড়া সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগে জাত-সুইপারদের বাদ দিয়ে অ-হরিজনদের চুড়ান্ত করার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিতকরন এবং ৮০% অগ্রাধিকার বিষয়ক প্রজ্ঞাপন বাস্তবায়নের দাবীতে বগুড়ার শেরপুরে মানববন্ধন, সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম)।
অদ্য (০৬ নভেম্বর ২০২৫ ইং) বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টায় বগুড়ার শেরপুর উপজেলা পরিষদের গেটের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিডিইআরএম- কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি শিপন কুমার রবিদাস।
বিডিইআরএম- বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুজন কুমার রাজভর এর সঞ্চালনায় মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)- শেরপুর উপজেলা শাখার সভাপতি হরিশংকর সাহা, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি- শেরপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নিমাই ঘোষ, বিডিইআরএম- শেরপুর উপজেলা শাখার সভাপতি নিশিকান্ত মালী, সাধারণ সম্পাদক সুব্রত দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক দিলিপ বাঁশফোর, নারী বিষয়ক সম্পাদক মিনতি রানী বাঁশফোর, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ- শেরপুর উপজেলা শাখার সভাপতি বাবলু দাস, আইন বিষয়ক সম্পাদক মিতা দাস, শেরপুর পৌর কমিটির সভাপতি নয়ন কবিরাজ, বিডিইআরএম- শেরপুর উপজেলা শাখার সহ সভাপতি নিরঞ্জন দাস রনি, সহ সাধারণ সম্পাদক সুবদন কুমার, আদিবাসী পরিষদ নেতা কমল সিং, আদিবাসী নেত্রী বাসন্তী দাস, হরিজননেত্রী শেফালী রানী বাঁশফোর, লীলা রানী বাঁশফোর, হরিজন শিক্ষার্থী শাওন বাঁশফোর, শিবা বাঁশফোর প্রমুখ। কর্মসূচি শেষে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বগুড়া জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন বিডিইআরএম নেতৃবৃন্দ ও ভূক্তভোগী সদস্যগণ।
বক্তাগণ বলেন, গত ২২ অক্টোবর ২০২৫ বগুড়া সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মী (মহিলা) নিয়োগের লক্ষ্যে উল্লেখিত ইউনিটের প্রধান কার্যালয়ে পরীক্ষা (লিখিত ও মৌখিক) অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরীক্ষায় প্রকৃত সুইপার প্রার্থীদের বাদ দিয়ে অন্যদের নিয়োগ দেওয়ার লক্ষ্যে তালিকা চুড়ান্ত করার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান না হলে আগামীতে রাজপথে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষনা দেন উপস্থিত নেতৃবৃন্দ।
ভূক্তভোগী সূত্রে আমরা জানা গেছে, উক্ত পদে মোট ১৩০ জন প্রার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
এরমধ্যে বগুড়া, কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মোট ২০ জন জাত-সুইপার বা বংশ পরম্পরায় পরিচ্ছন্নতা কাজে যুক্ত প্রার্থীও ছিলেন। কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় ২৯ জনকে কৃতকার্য/ উত্তীর্ন হিসেবে ফল জানিয়ে বাকি ১০১ জনকে বিদায় জানানো হয়। এরপর কৃতকার্য ২৯ জনের মৌখিক পরীক্ষা/ সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যার মধ্যে কেবলমাত্র ০১ (এক) জন হরিজন প্রার্থী উত্তীর্ন হন। তিনি হলেন বগুড়ার শেরপুর উপজেলার রামচন্দ্রপুর এলাকার মিনতী রানী বাঁশফোর। সারাদিন গড়িয়ে রাত পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষা চলে।
এরপর নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ চুড়ান্তভাবে কৃতকার্যদের পরদিন জানিয়ে দিবেন বলে তাদের বিদায় দেন। মিনতি বাঁশফোর নিয়োগের চুড়ান্ত তালিকায় থাকবেন বলে স্বাভাবিকভাবেই আশা করেছিলেন। কেননা তার লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষা বেশ ভালো হয়েছিল। কিন্তু শেষ অবদি তার নাম চুড়ান্ত তালিকায় না আসায় খুব হতাশ হবার পাশাপাশি অবাক হন। একইসাথে প্রত্যাখ্যাত বাকি ১৯ জন হরিজন প্রার্থী পরীক্ষাশেষে তাদের প্রবেশপত্র কেউ ছিঁড়ে ফেলে আবার কেউবা আগুনে পুড়িয়ে ফেলে।
তাদের বক্তব্য: কঠিন-জটিল প্রশ্নের উত্তর করা তাদের সাধ্যের বাইরে। কিন্তু যে পদের জন্য পরীক্ষা দিতে এসেছেন তাতে বাস্তবিক অর্থে তারাই সিদ্ধহস্ত। অথচ এ পদে পরীক্ষা দিতে এসেছেন উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক এমনকি স্নাতকোত্তর পর্যায়ের প্রার্থীরাও।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন মতে, পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে জাত-সুইপারদের ৮০% অগ্রাধিকার নিশ্চিতের বিধান রয়েছে। সে হিসেবে নিয়োগ পরীক্ষায় ২০ জন জাত-সুইপার প্রার্থী অংশ নিলেও তাদের ক্ষেত্রে বিধানটির ব্যতয় ঘটেছে। তাছাড়া সর্বশেষ ০১ জন হরিজন প্রার্থী লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েও কেনও চুড়ান্ত তালিকায় তার নাম আসলো না, এটি সত্যিই ভাববার বিষয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে হরিজন সম্প্রদায়ের অবদান ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত। তারাই এ বিষয়ে যুগের পর যুগ সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে।
সভ্যতার ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন। একদিন শহর পরিষ্কার না করলে আমাদের নগর জীবন ব্যহত হবে- এমনটাই স্বাভাবিক। অথচ সেবামূলক পেশায় যুক্ত এ জনগোষ্ঠীকে মর্যাদাহীন করে দেখানো হয় সর্বত্রই।
মানববন্ধন ও সমাবেশে উত্থাপিত দাবিসমূহ:
১. ২২ অক্টোবর ২০২৫ বগুড়া সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগে চলমান বিতর্কিত নিয়োগ প্রক্রিয়া অনতিবিলম্বে স্থগিত করতে হবে;
২. জাত-সুইপারদের বাদ দিয়ে অ-হরিজনদের চুড়ান্ত করার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে;
৩. জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় কর্তৃক প্রকাশিত ৮০% অগ্রাধিকার বিষয়ক প্রজ্ঞাপনের পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে;
৪. ‘পরিচ্ছন্নতাকর্মী’ পদে নিয়োগের পরীক্ষায় জাত-সুইপার প্রার্থীদের জন্য পরীক্ষা পদ্ধতি শিথিল এবং সহজীকরণ করতে হবে;
৫. ভবিষ্যতে সারাদেশে ‘পরিচ্ছন্নতাকর্মী’ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বার্র্তা প্রেরক,সুজন কুমার রাজভর,সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম)বগুড়া জেলা শাখা।