শুক্রবার, ২২ আগস্ট, ২০২৫
23 Aug 2025 03:54 am
![]() |
প্রশ্ন: বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
সুমন: দেশের রাজনীতি এখন আস্থাহীনতার মধ্যে আছে। মানুষ বিশ্বাস করতে পারছে না রাজনীতিবিদদের প্রতিশ্রুতি। গণতান্ত্রিক চর্চার জায়গায় ক্ষমতার দ্বন্দ্ব প্রাধান্য পাচ্ছে। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ হতাশ, আর তরুণ সমাজ রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে—যা দেশের জন্য বড় সংকেত।
প্রশ্ন: জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির বর্তমান দুরবস্থা কেন তৈরি হলো বলে আপনি মনে করেন?
সুমন: একাধিক কারণে এ অবস্থা। প্রথমত, নেতৃত্বে স্থিতিশীলতা ছিল না। দ্বিতীয়ত, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব দলকে দুর্বল করেছে। তৃতীয়ত, সাংগঠনিক কাজকে অবহেলা করা হয়েছে। আমার সময়ে আমরা প্রতিটি জেলায় কমিটি গড়ে তুলেছিলাম, নিয়মিত কর্মসূচি চালু ছিল। এখন সেই ধারাবাহিকতা ভেঙে গেছে।
প্রশ্ন: আপনার সময়ে সংগঠন কীভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল?
সুমন: আমরা তৃণমূলকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। কমিটি গঠনের সময় স্থানীয় নেতাদের মতামত নিয়েছি। তরুণ ও শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করেছি। শুধু রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, মানবিক কর্মকাণ্ডকেও সামনে এনেছি। এতে সংগঠনের ভাবমূর্তি জনগণের কাছে ইতিবাচক হয়েছিল।
প্রশ্ন: বর্তমান নেতৃত্বকে নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
সুমন: নেতৃত্বে এখন উদ্দীপনার অভাব আছে। কর্মীদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ কমে গেছে। যারা দায়িত্বে আছেন, তারা যদি তৃণমূলে ফিরে যান এবং মাঠের কর্মীদের মূল্যায়ন করেন, তবে এখনো ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব।
প্রশ্ন: ভবিষ্যতে জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টিকে শক্তিশালী করতে হলে কী পদক্ষেপ জরুরি?
সুমন:
১. সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে।
২. তৃণমূল পর্যায়ে সক্রিয় কমিটি গঠন করতে হবে।
৩. জনগণের জীবনযাত্রার সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মসূচি চালু করতে হবে।
৪. তরুণ নেতৃত্বকে গুরুত্ব দিতে হবে।
৫. দলীয় বিভাজন ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
প্রশ্ন: তরুণ প্রজন্ম কেন রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে বলে আপনি মনে করেন?
সুমন: কারণ তারা বিশ্বাসযোগ্য নেতৃত্ব পাচ্ছে না। রাজনীতি আজ কেবল ক্ষমতা ভাগাভাগির লড়াইয়ে সীমাবদ্ধ। কর্মসংস্থান, শিক্ষা, অর্থনীতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যকর পরিকল্পনা নেই। তরুণরা যদি দেখে রাজনীতি তাদের সমস্যা সমাধান করছে, তবে তারা আবারও যুক্ত হবে।
প্রশ্ন: ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচনকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
সুমন: এ নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। যদি এটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়, তবে আস্থা ফিরবে। আর যদি ব্যর্থ হয়, তবে রাজনৈতিক সংকট আরও তীব্র হবে। আমি এটাকে একই সঙ্গে সংকট ও সম্ভাবনার মোড় বলব।
প্রশ্ন: আপনার মতে, দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সমস্যা কী?
সুমন: আস্থা সংকট এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দুর্বলতা। দলগুলো জনগণের কাছে নয়, বরং ক্ষমতার কাছে বেশি দায়বদ্ধ। এই প্রবণতা বদলাতে না পারলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে না।
প্রশ্ন: জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির ভবিষ্যৎ আপনি কোথায় দেখছেন?
সুমন: আমি বিশ্বাস করি, সঠিক নেতৃত্ব ও পরিকল্পনা পেলে দল আবারও শক্তিশালী হবে। সংগঠনের শিকড় আছে জনগণের মধ্যে, কেবল সেই শিকড়কে শক্ত করতে হবে। তরুণদের সম্পৃক্ত করতে পারলে স্বেচ্ছাসেবক পার্টি ভবিষ্যতে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে।
প্রশ্ন: আপনাকে অনেক কর্মী এখনো নেতৃত্বে দেখতে চান। আপনি কি আবার সক্রিয়ভাবে নেতৃত্বে ফিরতে চান?
সুমন: আমার রাজনীতি কোনো পদ-পদবির জন্য নয়। জনগণ ও কর্মীরা যদি আমাকে প্রয়োজন মনে করেন, আমি অবশ্যই দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। আমার লক্ষ্য সবসময় জনগণের সেবা করা।
প্রশ্ন: শেষ প্রশ্ন—বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনার আশাবাদ কী?
সুমন: সংকট যতই থাকুক, আমি আশাবাদী। কারণ আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্ম খুবই শক্তিশালী। তারা যদি রাজনীতিতে সক্রিয় হয়, তবে নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠবে এবং দেশ এগিয়ে যাবে।
মোঃ আজিজুল হুদা চৌধুরী সুমনের বক্তব্যে স্পষ্ট—তিনি রাজনীতিকে দেখেন জনগণের কল্যাণের হাতিয়ার হিসেবে। তার মতে, স্বেচ্ছাসেবক পার্টির দুরবস্থা কাটাতে দরকার ঐক্য, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা এবং তরুণ নেতৃত্বের সম্পৃক্ততা। আর জাতীয় রাজনীতির জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো গণতান্ত্রিক আস্থা ফিরিয়ে আনা।
মোঃআজিজুল হুদা চৌধুরী সুমন,সদস্য,জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটি ,সাবেক সহসভাপতি,জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টি ,সাবেক সভাপতি, জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সাবেক প্রচার সম্পাদক জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ