সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৩
26 Nov 2024 04:29 pm
৭১ভিশন ডেস্ক:- মনোনয়নপত্র যাচাই–বাছাই শেষে ২ হাজার ৭১৬ জনের মধ্যে ৭৩১ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। সোমবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ এ তথ্য জানান।
অশোক কুমার জানান, যাচাই–বাছাই শেষে ২ হাজার ৭১২ জনের মধ্যে ৭৩১ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। আর ১ হাজার ৯৮৫ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
মনোনয়নপত্র বাতিলের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইসির যুগ্ম সচিব (আইন) মো. মাহবুবার রহমান বলেন, মনোনয়ন বাতিলের বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনের তথ্যে গরমিলের কারণে অনেকের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া দ্বৈত নাগরিকত্ব, ঋণখেলাপী, বিল খেলাপের কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল হতে পারে।
কোন দলের কতজনের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে—জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার বলেন, এই মুহূর্তে এই তথ্য নেই। পরবর্তীতে এই তথ্য জানানো হবে।
আপিলের ব্যাপারে ইসির অতিরিক্ত সচিব বলেন, আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীরা আপিল করতে পারবেন। এরপর ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপিলের শুনানি হবে।
মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের শেষ দিন সোমবার দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে বরিশালে নৌকার প্রার্থী ড. শাম্মী আহমেদের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। এছাড়া ঋণখেলাপী, তথ্যে গরমিলসহ নানা অভিযোগে মনোনয়নপত্র বাতিল ও স্থগিত হয়েছে অনেকের।
বরিশালের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকায় সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী শাম্মী আহমেদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।’
তথ্যে গরমিল, প্রয়োজনীয় সমর্থন না থাকাসহ নানা কারণে চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, জামালপুর, খুলনা, সুনামগঞ্জে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ৬১ জনের।
কুমিল্লার ১১টি আসনে মোট ৪৮ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে সোমবার কুমিল্লা ৬–১১ আসনে মোট ২২ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।
খুলনা-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফাতেমা জামান সাথী বলেন, ‘আমার সকল কাগজপত্র ঠিক ছিল। এখানে সমর্থক যে ১০ জন আছেন, তারা ৫ জন বলেছেন চেনেন, আর ৫ জন বলেছেন না। এটা একটা ক্ষুদ্র ব্যাপার।’
গোপালগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা হলেও বাতিল হয়েছে ৩ জনের।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, বাংলাদেশ কংগ্রেস মনোনীত প্রার্থী শাহেদুল ইসলাম মিঠু, জাতীয় পার্টির শিশির চৌধুরী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কামাল হোসেনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। এসব প্রার্থী হলফনামায় তথ্য গোপন, আয়কর রিটার্ন দাখিল না করা এবং ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থকের তালিকা সঠিক না থাকায় মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
বগুড়ায় বাতিল হয়েছে ১৬ জনের মনোনয়নপত্র। তবে স্থগিত পটুয়াখালী-১ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এবং রাজশাহী-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা শামীম আহমেদ বলেন, নানা অসংগতির কারণে ২২ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তবে তারা আপিল করতে পারবেন। আশা করি, যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে তারা আপিলের সুযোগ নেবেন।
কিশোরগঞ্জের ৬টি আসনের প্রার্থীদের মনোনয়ন যাচাই-বাছাই শেষে ১৬ জনের প্রার্থিতা বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এর মধ্যে সোমবার বাতিল হয়েছে ৬ জনের।
গাজীপুরের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, সোমবার গাজীপুর-৪ ও ৫ আসনের প্রার্থীদের তথ্য যাচাই–বাছাই করা হয়। এর মধ্যে ঋণখেলাপীর অভিযোগে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলম আহমেদ ও পৌর কর না দেওয়ায় আমজাদ হোসেনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
নাটোরের ৪টি আসনের মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে ১২ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল এবং ৩১ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু নাসের ভুঁঞা। তিনি বলেন, যাচাই–বাছাইয়ের শেষ দিনে ১২ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্রে জাল তথ্য উপস্থাপন করাসহ অনেক স্থানে তথ্য উপস্থাপন না করা বা নিজের স্বাক্ষর না করা এবং ঋণখেলাপী থাকায় ১২ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
ফেনীর ৩টি আসনে ৩৮ জন প্রার্থীর মধ্যে ২১ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ও ১৭ জনের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার। জেলা প্রশাসক বলেন, আগামী ৫ থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবেন।
শেরপুরে তিনটি আসনে ২২ প্রার্থীর মধ্যে ৬ জনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে আজ সোমবার বাতিল হয়েছে তিনজনের। সোমবার শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনের তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মুহসিনুল বারী রুমি, এএইচ এম ইকবাল হাসান অন্তর ও মিজানুর রহমান রাজার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। ভোটারদের স্বাক্ষর সঠিক না থাকায় তাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়।
নওগাঁর ছয়টি আসনে ২২ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। নওগাঁর জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. গোলাম মওলা জানান, নানা অসংগতির কারণে এসব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার) আসনে নিয়ামতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য খালেকুজ্জামান তোতা ও সোহরাব হোসেনের পক্ষে সংসদীয় এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরসংবলিত সমর্থনসূচক তালিকায় ত্রুটিযুক্ত স্বাক্ষর ও মামলার তথ্য গোপন রাখায় তাঁদের মনোনয়ন ফরম বাতিল করা হয়।
হবিগঞ্জের ৪টি আসনে ৪০ জন প্রার্থীর মধ্যে ৪ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। সোমবার প্রার্থিতা যাচাই-বাছাই শেষে বিকেলে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক দেবী চন্দ তাঁদের প্রার্থিতা বাতিল করেন।
লক্ষ্মীপুরে ৪টি আসনে ৪৩ প্রার্থীর মধ্যে ২৫ জনের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর আবদুল মান্নানসহ আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র ৪ জনসহ ১৪ জনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। স্থগিত করা হয়েছে ৪ জনের মনোনয়নপত্র।
মৌলভীবাজারের চারটি আসনে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ৭ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল ও ২৫ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম। এর মধ্যে মৌলভীবাজার–৩ আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ আব্দুর রহিম শহিদ রয়েছেন।
বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসনে ঋণখেলাপী হওয়ায় জাতীয় পার্টি, স্বতন্ত্রসহ ছয় প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। গত দুইদিন মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই শেষে রিটার্নীং কর্মকর্তা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. খালিদ হোসেন এই ঘোষণা দেন।
চাঁদপুরের ৫টি আসনে ৪৩ জনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ১১ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান।
চাঁদপুর-১ আসনে পাঁচজন, চাঁদপুর-২ আসনে একজন, চাঁদপুর-৪ আসনে দুইজন ও চাঁদপুর-৫ আসনে তিনজনসহ মোট ১১ জনের ঋণখেলাপীসহ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত গরমিল থাকায় মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
ফরিদপুর ৩ ও ৪ আসনের মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ের শেষে ১১ জনকে বৈধ ও ৩ প্রার্থীর বাতিল এবং ১ জনের প্রার্থিতা স্থগিত করেছে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. কামরুল হোসেন তালুকদার।
ভোটারের তথ্যে গরমিল থাকায় জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ ফারুক হোসেন, হলফনামায় ও সম্পদ বিবরণীতে স্বাক্ষর না থাকায় বিএনএম থেকে গোলাম রাব্বানী খান মুন এবং হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকায় কংগ্রেসের প্রার্থী আব্দুল আওয়াল মিয়ার মনোনয়ন বাতিল করা হয়।