মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৩
24 Nov 2024 09:06 am
সঞ্জু রায়, নয়াদিল্লী (ভারত) থেকে:- মুঘল সাম্রাজ্যের অন্যতম নিদর্শন দিল্লীর রেড ফোর্ট/লাল কেল্লা পরিদর্শন করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে ভারত সফররত বাংলাদেশী সাংবাদিক প্রতিনিধি দল। মঙ্গলবার বিকেলে ভারতের স্বাধীনতা ও সংগ্রামের ইতিহাস জড়িয়ে থাকা ও বিশ্ব মানচিত্রের ইতিহাসে স্থান করে নেয়া এই স্থানটি পরিদর্শন করে বাংলাদেশী সাংবাদিকরা।
পরিদর্শন শেষে সাংবাদিক প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বলেন, লাল কেল্লার অলঙ্করণ ও শিল্পকর্ম সত্যি মুগ্ধ করার মতো। পারসিক, ইউরোপীয় ও ভারতীয় শিল্পকলার সংমিশ্রণে তৈরি এই অভিনব শিল্পকলা সারাবিশ্বের নজর কেড়েছে। স্থাপত্য শিল্পের বিচারেও এই দুর্গটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সব কিছুর মাঝেও প্রশংসনীয় যে বিষয়টি তা হলো আজ ছুটির দিন হলেও আগামী প্রজন্মে যারা নেতৃত্ব দিবে সেই শিশু থেকে শুরু করে তরুণ প্রজন্মের অনেকে লাল কেল্লা পরিদর্শনে এসেছে যা তাদের ছোট থেকেই নিজ দেশের প্রতি ভালবাসা ও ইতিহাস জানার মধ্য দিয়ে আগামীর সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের শিক্ষা দিচ্ছে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সকল দেশের নাগরিকদেরই উচিত ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্বাক্ষ্য বহন করা এই স্থানটি একবার হলেও ভ্রমণ করা যা ভ্রমণকারী যে কাউকে আরো সমৃদ্ধ করবে।
ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি প্রেস অফিসার শিলাদিত্য হালদারের নেতৃত্বে পরিদর্শনকালে বাংলাদেশী সাংবাদিকদের মাঝে এসময় ছিলেন জনকণ্ঠের সম্পাদক ওবায়দুল কবির মোল্লা, ডিবিসি নিউজের প্রণব সাহা, মাছরাঙা টিভির রেজওয়ানুল হক রাজা, একাত্তর টিভির শাকিল আহমেদ, নিউজ২৪ টিভির রাহুল রাহা, দিপক আচার্য্য, বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাজী শাহেদ, দেশ টিভি ও দৈনিক চাঁদনী বাজারের রিপোর্টার সঞ্জু রায়, যমুনা টিভির শিবলী নোমান, ডিবিসি নিউজের সিলেট প্রতিনিধি প্রত্যুশ তালুকদার, আলোকিত বাংলাদেশের দিপক দেব, জাগো নিউজের আসিফ আজিজসহ মোট ২৮ জনের প্রতিনিধি দল।
উল্লেখ্য, লাল কেল্লা সপ্তদশ শতাব্দীতে মুঘল সম্রাট শাহজাহান দিল্লিতে নির্মাণ করেন। এটা বিশাল প্রাচীর বিশিষ্ট একটি দুর্গ। ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত এই দুর্গটি ছিল মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে। অপূর্ব নির্মাণশৈলীর লাল রঙের বিশাল এ স্থাপনাটি ভারতের সমৃদ্ধ প্রাচীন স্থাপত্যকলার অন্যতম উদাহরণ। ১৬৩৮ সালে সম্রাট শাহজাহান এই কেল্লাটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। প্রথম দিকে এর নাম ছিল কিলা-ই-মুবারক। কারণ এই দুর্গে সম্রাটের পরিবারবর্গ বাস করতেন। দুর্গটি যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত। এই নদীর পানিতে পুষ্ট হতো দুর্গের পরিখাগুলো।
লাল কেল্লার পরিকল্পনা ও সাজসজ্জা শাহজাহানের শাসনকালে মুঘল স্থাপত্য ও চিত্রকলার উৎকর্ষের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। প্রকৃতপক্ষে লাল কেল্লা ছিল দিল্লি ক্ষেত্রের সপ্তম নগরী তথা শাহজাহানের নতুন রাজধানী শাহজাহানাবাদের রাজপ্রাসাদ। পরবর্তীকালে অবশ্য তিনি দিল্লি থেকে আগ্রা শহরে রাজধানী স্থানান্তরিত করেছিলেন। লাল কেল্লায় বসবাসকারী শেষ মুঘল সম্রাট ছিলেন দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফর। দুর্গের প্রাচীর মসৃণ এবং দৃঢ়। এর দুটি প্রধান দরজা হলো দিল্লি গেট ও লাহোর গেট। লাহোর গেট প্রধান দরজা। এই গেট দিয়ে ঢুকলে একটি লম্বা আচ্ছাদিত বাজার পথ পড়ে। এর নাম চট্টা চক। এই পথের দু’দিকের দেয়াল দোকানের মতো করে স্টল দিয়ে সাজানো। চট্টা চক ধরে সোজা এলে উত্তর-দক্ষিণ পথ পাওয়া যায়। এই পথটি আসলে দুর্গের পশ্চিমের সামরিক ক্ষেত্র ও পূর্বের রাজপ্রাসাদের সীমানা।
এই পথের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত দরজাটিই হলো দিল্লি গেট। দিল্লি গেটের বাইরে একটি বড় মুক্তাঙ্গন রয়েছে। এটি এককালে দিওয়ান-ই-আম-এর অঙ্গন হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এখানে ঝরোখা নামে একটি অলঙ্কৃত সিংহাসনে বসে সম্রাট জনসাধারণকে দর্শন দিতেন। এই স্তম্ভগুলো সোনায় চিত্রিত ছিল এবং সোনা ও রুপার রেলিং দিয়ে সাধারণকে সিংহাসনের থেকে পৃথক করে রাখা হতো। আর দিওয়ান-ই-খাস ছিল পুরোপুরি শ্বেতপাথরে মোড়া একটি কক্ষ। এর স্তম্ভগুলো পুষ্পচিত্রে সজ্জিত ছিল। ভেতরের অলঙ্করণের কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল মহামূল্যবান ধাতুসমূহ।
ইতিহাসে মোড়া সৌন্দর্য্যের ধারক এই স্থাপনাটি পরিদর্শনে তাইতো সারাবিশ্বের হাজারো মানুষ প্রতিদিন আসে লাল কেল্লাতে আর মুগ্ধতা নিয়ে ফিরে যায়। আর ভারত সরকার যেভাবে এই স্থাপনাগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করছেন তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন সফররত বাংলাদেশী সাংবাদিক প্রতিনিধি দল।