বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
25 Nov 2024 02:20 am
৭১ভিশন ডেস্ক:- লিবিয়ায় ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল ও বন্যার তাণ্ডবে রাজবাড়ী জেলার দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের ফেসবুক পেইজে দেয়া এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
রাজবাড়ী জেলার নিহতরা হলেন- রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার হাবাসপুর ইউনিয়নের হাবাসপুর গ্রামের আরশেদ প্রামাণিকের ছেলে শাহিন প্রামাণিক (৩৫) এবং একই উপজেলার যশাই ইউনিয়নের ধোপাকেল্লা গ্রামের মৃত দুলাল খানের ছেলে সুজন খান (২৫)।
জানা গেছে, লিবিয়ার ত্রিপোলি শহর থেকে ১৩৪০ কিলোমিটার দূরের শহর দারনায় রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতে ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল আঘাত হানে।
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যমতে ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের প্রভাবে দারনা শহরে বসবাসরত ছয়জন বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে চার জনের প্রাথমিক পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- রাজবাড়ী জেলার শাহিন প্রামাণিক ও সুজন খান এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার মামুন ও শিহাব। তবে দূতাবাসের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত বাকি দুই জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি।
এছাড়া দারনা শহরে বসবাসরত আরও কিছু সংখ্যক বাংলাদেশি নিখোঁজ থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নিহত শাহিনের দুলাভাই শাকির আহমেদ বলেন, শাহিন প্রায় ১২-১৩ বছর লিবিয়ায় ছিল। লিবিয়ায় থাকা অবস্থায় সে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিয়ে করে। ২০২০ সালে সে দেশে আসে। দেশে আসার পর তার এক ছেলে সন্তান হয়। ওই ছেলের বর্তমান বয়স প্রায় দুই বছর। ১০ মাস আগে সে স্ত্রীকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় রেখে আবারও লিবিয়ায় চলে যায়। লিবিয়ায় যাওয়ার পর তার আরও একটি ছেলে সন্তান হয়। এই সন্তানের বর্তমান বয়স ছয় মাস।
তিনি বলেন, সবশেষ রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে শাহিনের কথা হয়। শাহিনের বড় ভাই জামাল প্রামাণিকও লিবিয়ায় থাকে। মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে জামাল বাড়িতে ফোন করে জানায় শাহিন ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে মারা গেছে। তাকে লিবিয়াতেই দাফন করা হয়েছে।
নিহত অপর যুবক সুজনের বড় ভাই জুবায়ের খান বলেন, আমরা চার ভাইবোন। সুজন আমার ছোট। ২০০৯ সালে সুজনকে ছোট রেখে আমার বাবা মারা যান। এরপর থেকে আমি বাবার রেখে যাওয়া জমিতে কৃষিকাজ করে সুজনকে এসএসসি পাশ করাই। পরে ধারদেনা করে চার লাখ টাকা খরচ করে ২০১৯ সালে সুজনকে লিবিয়া পাঠাই। লিবিয়া যাওয়ার পর সেখানে সুজন একটি ব্যাংকে অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করতো। তিন বছর ভালোভাবেই কাজকর্ম করে বাড়িতে টাকা পাঠাতো। হঠাৎই লিবিয়া থেকে সে ইতালি যেতে গিয়ে দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে। দালালরা তাকে গেম ঘরে আটকে রেখে মুক্তিপণের জন্য নির্যাতন চালাতো। আমরা বাড়ি থেকে জমিজমা বিক্রি করে কয়েক ধাপে ২৩ লাখ টাকা দালালদের দিয়ে তাকে গেম ঘর থেকে মুক্ত করি। এরপর সে আবারও ব্যাংকের কাজে যোগ দেয়। পাশাপাশি সে রঙ মিস্ত্রির কাজও করতো। সবশেষ গত রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) রাত ১০ টার দিকে তার সঙ্গে আমাদের কথা হয়। মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে লিবিয়া প্রবাসী আমার মামাতো ভাই হাসান ফোন করে জানায়, ঘূর্ণিঝড়ে বিল্ডিংয়ের ছাদ ধসে তাতে চাপা পড়ে সুজন মারা গেছে। তার মরদেহ নাকি সেখানেই দাফন করা হয়েছে।
জুবায়ের আরও বলেন, আমার ভাইটা মারা যাওয়াতে আমাদের পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে গেল। আমাদের সহায়-সম্বল সবকিছু ওর পেছনেই খরচ করে ফেলেছি। ওই ছিল আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল।
হাবাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আল মামুন খান বলেন, আমার ইউনিয়নের শাহিন নামের এক যুবক লিবিয়ায় মারা গেছেন। আমি তার বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিয়েছি।
যশাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু হোসেন খান বলেন, আমার ইউনিয়নে সুজন খান নামের এক যুবক লিবিয়ায় মারা গেছেন। আমি তার বাড়িতে গিয়েছিলাম। তার অকাল মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, হাবাসপুর ও যশাই ইউনিয়নের শাহিন ও সুজন নামে দুই যুবক লিবিয়ায় ঘূর্ণিঝড়ে মারা গেছেন। আমরা তাদের পরিবারের পাশে থাকবো।