বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২৩
23 Nov 2024 03:30 pm
ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধাঃঐতিহাসিক নিদর্শন কুঠিবাড়ীর ‘ডিসপেনসারি’ নামের ঘরটি আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ইতোমধ্যে ডিসপেনসারির কিছু মালামাল লুটপাট কাণ্ডে সেটি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
সম্প্রতি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিস ও অফিসার্স কোয়ার্টারের পেছনে জরাজীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য দেখা যায় এই ডিসপেনসারিতে।জানা যায়, নীলকরদের রাজত্ব শেষে গোবিন্দগঞ্জের এই ‘কুঠিবাড়ী’ মহারাজা স্যার প্রদোৎ কুমার ঠাকুরের অধীনস্থ হয় এবং মহারাজা প্রদোৎ কুমার ঠাকুর বাহাদুর এই কুঠিবাড়ীতেই তার জমিদারি প্রশাসনের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিণত করেন। এই কুঠিবাড়ীতে মহারাজা তার রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি বেশকিছু উন্নয়নমূলক ও সেবামূলক কর্মকাণ্ড শুরু করেন। অনেকের ধারণা, এসময়ই মহারাজা তার কর্মচারী ও প্রজাদের চিকিৎসা সেবার জন্যই লোহার শিকলে বাঁধা এই ডিসপেনসারিটি প্রতিষ্ঠা করেন।জনশ্রুতি আছে, একসময় জনসাধারণের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানের অন্যান্য স্থাপনা লোহার শিকলে বাঁধা ‘ডিসপেনসারি’।
ছোট-খাট অসুখে বিনামূল্যে ওষুধ পাওয়া যায়—এ কারণে ব্যাপক পরিচিতি ছিল এই ‘ডিসপেনসারি’র। ইট সিমেন্টের ঢালাই করা মেঝে, চারিদিকে অর্ধেক ইট ও আরেক অর্ধেক টিনের দেয়াল আর ওপরে বাংলা টিনসেড এ ঘরটিতে ৩ কক্ষ ছিল। উত্তর-দক্ষিণে লম্বা এ ঘরটি উত্তর দক্ষিণে ২টি ও পূর্ব পশ্চিমে ২টি মোট ৪টি বড় বড় মোটা শিকল দিয়ে মাটির সঙ্গে বাঁধা ছিল। ঝড়ে যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় এজন্যই সম্ভবত ৪টি লোহার শিকল দিয়ে মাটির সঙ্গে বাঁধা হয় এ ডিসপেনসারি’র ঘরটি। এরপর সরকারিভাবে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা হলে এই ডিসপেনসারির কদর কমে যায় এবং কার্যক্রম বন্ধ করে তালা বদ্ধ করা হয়।
দীর্ঘদিন তালাবদ্ধ থাকা অবস্থায় এক সময় গঙ্গাজলি নামের এক সুইপার তার স্বামী সন্তানদের নিয়ে এই ডিসপেনসারির বারান্দায় বসবাস শুরু করে এবং এখনও তার পরবর্তী পরিবার এই ডিসপেনসারির সামনে আরেকটি টিনের ঘর তুলে বসবাস করে চলেছে। কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে, কিছু নেশাখোর ডিসপেনসারির দরজা, জানালা, টিনসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র চুরি করে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে তাদের নেশার অর্থ জুগিয়েছে। এরই মধ্যে লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ৪টি লোহার শিকলও কে বা কারা চুরি করে নিয়ে গেছে তা কেউই জানে না।স্থানীয়দের অভিযোগ, শুধুমাত্র প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তাদের সুদৃষ্টির অভাবে তাদের চোখের সামনেই দিন দিন কে বা কারা এই ডিসপেনসারির আসবাবপত্রসহ দরজা-জানালা, টিন খুলে নিয়ে গেছে। বর্তমানে ঐতিহাসিক নিদর্শন এই ডিসপেনসারি এখন ধ্বংস হতে চললেও দেখার কেউ নেই।
স্থানীয় খয়বর রহমান নামের এক ব্যক্তি জানান, কিছুদিন আগেও এ ঐতিহাসিক ডিসপেনসারির দরজা, জানালা, টিনের চালা, লোহার শিকল সবই ছিল। কিন্তু এখন দেখছি অনেক কিছুই নেই। উপজেলার প্রশাসনিক চত্বরে অবস্থিত প্রশাসনের কর্মকর্তা- কর্মচারীদের সামনে থেকেই জমিদারি আমলের ঐতিহাসিক নিদর্শনটি দিন দিন হরিলুট হয়ে যাওয়া দুঃখজনক।
ডিসপেনচারির পাশে বসবাসরত সুইপার গণেশ বাসফোর ও জনি বাসফোর জানান, কে বা কারা দরজা জানালা, টিন, লোহার শিকল খুলে নিয়ে গেছে আমরা জানি না।
এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস.এম আব্দুল্লা-বিন শফিক বলেন, ওই ডিসপেনসারির মালামাল হরিলুটের ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।