চট্টগ্রামের নদী রক্ষায় সব উন্নয়ন অধিদপ্তরকে একীভূত করতে হবে: সবুজ আন্দোলন

অফিস ডেস্ক
প্রতিবেদন প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বার ২০২৫ | সময়ঃ ১১:৩০
photo

প্রেস বিজ্ঞপ্তি:-পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের ৭ ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা শাখার উদ্যোগে " চট্টগ্রামের নদী ও খাল পুনরুদ্ধারে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা ও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী" আয়োজন করা হয়। চট্টগ্রাম মহানগরে সভাপতি অধ্যক্ষ ডক্টর মোহাম্মদ সানাউল্লাহ'র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সবুজ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান পরিবেশবিদ বাপ্পি সরদার।

 

প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ডক্টর মনজুরুল কিবরিয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন সবুজ আন্দোলন মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ নুরুল কবির,চট্টগ্রাম উত্তর জেলার আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল ইসলাম মামুন, বিশিষ্ট কবি ও সমাজসেবক মোঃ কামরুল ইসলাম, গ্রিন অ্যালায়েন্সের সরোয়ার আমিন বাবু।

 

প্রধান অতিথি বলেন, মুলত চট্টগ্রাম জেলা ৭০ ,মহানগরীর মধ্য  দিয়ে ২২টি খাল প্রবাহিত হচ্ছে । তবে এসব খালের মধ্য দিয়ে পানি কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়ত। নগরীর পানি যাতে দ্রুত নেমে যেতে পারে তার জন্য পরিকল্পিতভাবে এসব খাল খনন করা হয়। ব্রিটিশ আমলের এসব খালের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে এগুলো নালায় পরিণত হয়েছে। দখল ও দূষণের কারণে খাল দিয়ে আর পানি নিষ্কাশন হয় না। এর ফলে জলাবদ্ধতা, পরিবেশ দূষণ ও চরম গণভোগান্তি। জেলার নদী ও খাল পুনরুদ্ধারে সকল দপ্তরকে একীভূত করলে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব।

 

প্রধান আলোচক বলেন, প্রভাবশালী মহল খালের জায়গা দখল করে নিয়ে নিজেদের সীমানা বাড়িয়েছে। কেউ কেউ তুলেছে দেয়াল। আর কেউ কেউ ভবনের অংশবিশেষ। অনেকাংশে আদালতের দোহাই দিয়ে জিইয়ে রাখা হয়েছে দখলস্বত্ব।

 

বর্তমানে অল্প বৃষ্টি হলেই নগরীর বেশির ভাগ এলাকা তলিয়ে যায় পানির নিচে।সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হালিশহর, আগ্রাবাদ ও নাসিরাবাদ এলাকায়। অনেক সময় জোয়ারের পানি ও বৃষ্টির পানি এক হয়ে পানির উচ্চতা ৫ থেকে ৬ ফুট পর্যন্ত বেড়ে যায়। সাগরের পানির জোয়ার খাল দিয়ে ভাসিয়ে নেয় হালিশহর ও আগ্রবাদের বড় একটি অংশ। পানির কারণে বিশাল এলাকাজুড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একটু ভারী বৃষ্টি হলেই নগরীর কোথাও গলা পানি, আবার কোথাও কোমর পানিতে ডুবে যায়। বিশেষ করে নগরীর বাকলিয়া, আগ্রাবাদ, পাহাড়তলী, কালামিয়া বাজার, মুরাদপুর, শুলকবহর, রামপুরা, কাতালগঞ্জ, চকবাজার, বহদ্দারহাট, নাসিরাবাদ, জালালাবাদ, কাপাসগোলা, ডিসি রোড, পাহাড়তলী প্রায় পুরো নগরীই পানিতে নিমজ্জিত থাকে। এসব এলাকার অধিকাংশ বাসা-বাড়িতে ঢুকে পড়ে বৃষ্টির পানি। কোমর সমান পানিতে ডুবে যায় নগরীর বিভিন্ন মার্কেটেও।

 

নগরীর খাতুনগঞ্জ, টেরিবাজার, আছাদগঞ্জ, চাক্তাই, রেয়াজুদ্দিন বাজার, ষোলশহর শপিং কমপ্লেক্সসহ বেশ কিছু মার্কেটের দোকান ও গুদাম অল্প বৃষ্টিতে তলিয়ে যায়। অথচ এমনটি হওয়ার কথা নয়। বছরের পর বছর ধরে বাড়ছে এ প্রবণতা।বিশেষ করে বিগত ২০ বছর ধরে চলছে নগরীর খাল-নালা দখলের প্রতিযোগিতা। চলছে পাহাড় কাটা। ফলে বৃষ্টি আর জোয়ারে পানি সহজে নামতে পারে না।

 

নগরীর প্রধান প্রধান এলাকা আগ্রাবাদ, সদরঘাট, ফিরিঙ্গিবাজার, হালিশহর, বাকলিয়া, দেওয়ানহাট, বন্দর, কাট্টলী, ফৌজদারহাট, কুলগাঁও, চান্দগাঁও, ষোলশহর, মুরাদপুর ও নাসিরাবাদ ঘিরে বৃটিশ আমলেই নির্মিত হয় বেশ কয়েকটি বড় বড় খাল। চট্টগ্রাম শহর জুড়ে ২২টি প্রাকৃতিক খাল হিসেবে চিহ্নিত।

 

এসব খালের মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো চাক্তাই খাল। বাকি খালগুলো হলো মির্জা খাল, সদরঘাট খাল, হিজরা খাল, ত্রিপুরছড়া খাল, শীতল ঝর্ণা খাল, নোয়া খাল, ঢাকা ট্রাংক লেইন খাল, রামুপুর খাল, নাছির খাল, পাকিজা খাল, মহেশ খাল।কালীর ছড়া খাল, গইন্যাচড়া খাল, কাট্টলী খাল, জামাল খান খাল, চট্টেশরী খাল, নেভাল খাল, মুন্সী খাল, উত্তরা খাল, গুপ্ত খাল ও জেলেপাড়া খাল। এসব খালের প্রতিটি প্রস্ত ছিল ১৫ থেকে ২০ ফুট। চাক্তাই খালের আরও বেশি। মূলত নগরীর ব্যবসা –বাণিজ্য ও পানি নিস্কাশন দ্রুত হওয়ার জন্য এসব খাল বানানো হয়। এক সময় নৌকা যোগে শহরে ব্যবসায়ীরা পণ্য আনা নেয়া করতেন। বর্তমানে প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে এসব খাল। এগুলো এখন নালায় পরিণত হয়েছে। বর্তমানে যতটুটু অবশিষ্ট আছে এখন পানি নিষ্কাশনের পরিবর্তে বড় আকারের আবজর্নার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

 

অন্যান্য বক্তারা বলেন, দখল হয়ে যাওয়া খাল উদ্ধারের জন্য সিটি কর্পোরেশনের তেমন কোনো তৎপরতা নেই। নগরীর সবচেয়ে বড় খাল ‘চাক্তাই খাল’ এর দখল উচ্ছেদ মাঝে মাঝে হয়ে থাকলেও বাকিগুলো উদ্ধারের কোন তৎপরতা নেই। ফলে যে যেভাবে পারছে দখল জিইয়ে রেখেছে।
 

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৯৯৩ সালে ২২ বছর মেয়াদী একটি মহাপরিকল্পনা হাতে নেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। পরিকল্পনায় নগরীর ২২টি খাল উদ্ধারসহ নগরীকে জলাবদ্ধতা মুক্ত করতে ৩টি নতুন খাল ও ৩০টি নতুন সেকেন্ডারি খাল খননের সুপারিশ ছিল।এছাড়া বিদ্যমান খাল ও সেকেন্ডারি খালের সংস্কার, জলাধার নির্মাণ ও কর্ণফুলী নদীর উভয় তীরে পতেঙ্গা হতে ড্রাইডক পর্যন্ত বর্তমান রাস্তার স্তর উঁচু করে বাঁধ নির্মাণ, ড্রাইডক হতে কর্ণফুলী ব্রিজ পর্যন্ত রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ। শিট পাইলিং নির্মাণ করে বাঁধ নির্মাণ, কর্ণফুলী হতে কালুরঘাট ব্রিজ পর্যন্ত বাঁধ ও হাইওয়ে নির্মাণ, কালুরঘাট হতে হালদা পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণ, কর্ণফুলী নদীর বাম তীরে বাঁধ নির্মাণ, বাঁধ সংলগ্ন খালে টাইডেল রেগুলেটর নির্মাণ ও চাক্তাই-রাজাখালি খালের নেভিগেশন গেইট নির্মাণ করার প্রস্তাবনাও ছিল এই প্ল্যানে।এই মাস্টার প্ল্যানটি সরকার অনুমোদন দিলেও তা বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দ না দেওয়ায় এটি এখন ফাইলবন্দি। ফলে নগরবাসী মুক্তি পাচ্ছে না জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে।

 

নদী দূষণ ও খাল পুনরুদ্ধারে সবুজ আন্দোলনের পক্ষ থেকে বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়:
* নদী ও খালের  দুই ধারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ,
* নদীর প্রবাহ ঠিক রাখা,
*বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণ,
*রাসায়নিক বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ,
*প্লাস্টিক বর্জ্য রোধ,
*স্যানিটারি বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ,
*আইনের কার্যকর প্রয়োগ,
*শক্তিশালী নদী কমিশন,
*নদী আদালত গঠন,
*বৃক্ষরোপণ,জনসচেতনতা বৃদ্ধি।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা, মহানগরের পেশাজীবী ও  বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ।

 

বার্তা প্রেরক,সোহেল রানা,দপ্তর সম্পাদক,সবুজ আন্দোলন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ

শেয়ার করুন