সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৫
19 Aug 2025 01:46 am
![]() |
নাজমুল হক নাহিদ,আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি:- নওগাঁর আত্রাই নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে আত্রাই উপজেলার প্রায় সাড়ে ১০ হাজার বিঘা জমির ধানসহ অন্যান্য ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া চলাচলের পাকা সড়ক পানিতে ডুবে যাওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় ৮/১০টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রেখেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, আর বৃষ্টিপাত না হলে হয়তো খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পানি কমা শুরু হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, একটানা ভারী বৃষ্টিপাত এবং উত্তরের উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। একইসঙ্গে নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আত্রাই উপজেলায় বন্যার পানিতে শত শদ বিঘা রোপনকৃত ধান এবং বিভিন্ন ফসল নিমজ্জিত হয়ে যায়। এর আগে গত শনিবার আত্রাই নদীর আত্রাই রেলওয়ে স্টেশন পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও আজ তা বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রবিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ওই পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। ফলে নদী তীরবর্তী এলাকায় বেশ কিছু বাড়িঘর পানিতে ডুবে গেছে। এছাড়া আত্রাই উপজেলার পতিসর-সমসপাড়া সড়কের ৩ কিলোমিটার পানিতে ডুবে গেছে। ফলে ওই সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
এতে ওই এলাকার মাঝগ্রাম, হেঙ্গলকান্দি, পৈসাওতা, জগন্নাতপুর এলাকার কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া ফটকিয়া, বাঁশবাড়িয়া, বিশা, দমদত্তবাড়িয়াসহ আরো কয়েক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। নদীর ¯øুইচ গেট, ব্রিজ, কালভার্ট দিয়ে হু হু করে পানি ডুকছে। এতে কাশিয়াবাড়ি, ভোঁপাড়া, পালশা, কচুয়া, মারিয়া, নওদুলি, নৈদীঘি, মনিয়ারী, হেঙ্গলকান্দি, মাঝগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় সাড়ে ১০ হাজার বিঘা জমির রোপনকৃত আমন ধান ও বিভিন্ন ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
আত্রাই উপজেলার ভোঁপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দীন জানান, তার রোপনকৃত ১৬ বিঘা জমির ধান ডুবে গেছে।
আত্রাই উপজেলার পালশা গ্রামের কৃষক আব্দুল হালিম জানান, তিনি প্রায় ৯৫ বিঘা জমিতে ধান রোপন করেছিলেন। গত কয়েক দিনে সব ধান পানিতে ডুবে গেছে। এতে প্রায় ৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
আত্রাই উপজেলার হেঙ্গলকান্দি গ্রামের কৃষক রুবেল চৌধুরী জানান, তিনি প্রায় ২২ বিঘা জমিতে আমন ধান রোপন করেছিলেন, কিন্তু বন্যার পানিতে সব ধান ডুবে গেছে।
আত্রাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রসেনজিৎ কুমার জানান, গত এক সপ্তাহে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শনিবার দুপুর পর্যন্ত সাড়ে ১০ হাজার বিঘা জমির আমন ধান ও অন্যান্য ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতি ঘণ্টায় ফসল ডুবে যাচ্ছে।
আত্রাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান জানান, নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ এবং নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তবে এখনো কোনো বাড়িঘর ভেঙে পড়েনি।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল বলেন, অব্যাহত ভারী বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে শুক্রবার বিকেল থেকে আত্রাই নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে থাকে। শনিবার দুপুর ১২টা নাগাদ আত্রাই রেলওয়ে স্টেশন পয়েন্টে নদীর পানি সমতল বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকেই আত্রাই উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ রসুলপুর, সদুপুর, লালুয়া, বেওলা, নন্দনালী, জগদাস, শিকারপুর, দুবাই, গুরনৈ ভাঙ্গাজাঙ্গাল, বৈঠাখালি ও নন্দনালীসহ ৮/১০টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চিহ্নিত স্থানগুলোতে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে শুক্রবার থেকে বৃষ্টিপাত অনেকটাই কমে গেছে এবং উজানেও নদনদীতে পানি কমতে শুরু করেছে। ফলে ২/১দিনের মধ্যেই আত্রাই নদীর পানিও কমতে শুরু করবে বলে আসা করছেন তিনি।
আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান বলেন, জেলা প্রশাসক স্যারের সার্বিক নিদের্শনা মোতাবেক সব সময়ই আত্রাই ও ছোট যমুনা নদীর ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো পরিদর্শন অব্যাহত রাখা হয়েছে। ইতিপূর্বে রাণীনগর উপজেলার ছোট যমুনা নদীর নান্দাইবাড়ি সংলগ্ন ঝুঁকিপূর্ণ বেরিবাঁধ মেরামত করা হয়েছে। তাই রাণীনগর উপজেলায় ছোট যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধিতে তেমন একটা ভয় নেই। এছাড়া আত্রাই উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোও সব সময় পর্যবেক্ষন করা হচ্ছে।
প্রশাসন যে কোন সমস্যায় সব সময় মানুষের পাশে আছে। উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সর্বাত্মকভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রক্ষার্থে চেষ্টা চালিয়ে যাবে। প্রতিটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোর স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে একটি করে দল গঠন করা হয়েছে।যে দলের সদস্যরা ঝূঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে কোন সমস্যা দেখলেই প্রশাসনকে জানাবেন এবং দ্রæত করনীয় বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। অর্থাৎ দুই উপজেলাতেই পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ রক্ষার্থে উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড বদ্ধ পরিকর। দুর্যোগ মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসন সর্বদা তৎপর রয়েছে। এমতাবস্থায় তিনি উপজেলার সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সহযোগিতা কামনা করেছেন।