শনিবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০২৫
25 Jan 2025 10:31 am
৭১ভিশন ডেস্ক:- রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৪০তম বিসিএসের ৬৬ জন সহকারী পুলিশ সুপারের (এএসপি) প্রশিক্ষণ শেষ হয় তিন মাসের আগে।কর্মক্ষেত্রে যোগদানের অংশ হিসেবে পাসিং আউট/ সমাপনী কুচকাওয়াজজের দিনও নির্ধারিত হয়।কিন্তু দুই দফায় পাসিং আউটের দিনক্ষণ ঠিক করেও স্থগিত করা হয়।
এমতাবস্থায় অসুস্থ হয়েও অনেকের প্রশিক্ষণ মাঠে যেতে হচ্ছে।
কয়েকজন গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।এদেরকে দুইবার সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিতের পর ৬৬ জনের মধ্যে ২৫ জনকে প্যারেডে দৌড় না দিয়ে এলোমেলো হাঁটা ও হৈ চৈ করার মতো ঠুনকো অভিযোগ দিয়ে শোকজ করা হয়েছে।২৫ জনের মধ্যে অন্তত ২১ জনকে চাকরি থেকেই বাদ দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে তাদের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।এমন পরিস্থিতিতে ওই ২১ জন কর্মকর্তার পরিবার বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করে ৪ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পুলিশের আইজির কাছে ন্যায় বিচার চেয়ে লিখিত আবেদন করেছেন।
আবেদন করার ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখছেন না তারা।সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন এভাবে দিনের পর দিন চলতে থাকলে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হবে এবং যেকোনো সময় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে।কারণ,দীর্ঘদিন পরিবার থেকে দূরে থাকা মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে কারো মাঝে মাঝে।
প্রশিক্ষণরত একাধিক এএসপি বলছেন,নির্ধারিত সময়ের চেয়ে তিন মাসের বেশি পেরিয়ে গেলেও রহস্যজনকভাবে পাসিং আউট না হওয়ায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন তারা।
এরইমধ্যে কয়েকজন অসুস্থ হয়েছে হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছেন।কারো কাছের স্বজনের মৃত্যু হলেও বাড়ি যেতে পারছেন না।এভাবে প্রশিক্ষণরত এএসপিদের মধ্যে পুঞ্জিভুত হচ্ছে ক্ষোভ।
পুলিশ সদর দপ্তর পুলিশ একাডেমি সূত্রে জানা যায়, ৪০তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে এক বছরের মৌলিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়।প্রশিক্ষণ শেষে গত বছরের ২০ অক্টোবর সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এ জন্য দেড় হাজারের বেশি অতিথিকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।তবে আগের রাতে হঠাৎ করেই কুচকাওয়াজ স্থগিত করে দেওয়া হয়। এরপর আবারও ২৪ নভেম্বর এই অনুষ্ঠানের জন্য দিন ঠিক করে ফের স্থগিত হয় কুচকাওয়াজ।
পাসিং আউটের বিষয়ে পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ ও অতিরিক্ত আইজিপি মাসুদুর রহমান ভূঞা শুক্রবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পার্সিং আউটের ডেট (তারিখ) জানা নাই।তবে পাসিং আউট নিয়ে কোনো কাজ বা,আলোচনা আপনাদের মাঝে আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কাজ চলমান রয়েছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তাদের পাসিং আউট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে পুলিশ সদর দপ্তরের মুত্রপাত্র এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, পাসিং আউটের তারিখ নির্ধারিত হলে আমরা গণমাধ্যমে জানিয়ে দেব,আর ২৫ জনের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হচ্ছে তা আমার জানা নেই ।
২৫ জনের শোকজের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হচ্ছে পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা কিংবা পুলিশ একাডেমির কোনো দায়িত্বরত কর্মকর্তা জানাতে পারেনি। তবে তারা জানিয়েছেন,সার্বিক বিষয়সহ যাছাই বাছাই করা হচ্ছে।তবে,শিগগিরই পাসিং আউট হবে।
এরপর সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন,এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে (স্বরাষ্ট্র) যোগাযোগ করতে পারেন।কার, তারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।
একাধিক শোকজ পাওয়া কর্মকর্তা বলেন,দেশের ইতিহাসে প্রথম কোটামুক্ত বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বুনিয়াদী ও বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণসহ চাকরি স্থায়ীকরণের সব শর্ত পূরণ করেও উৎকণ্ঠা আর অনিশ্চয়তার প্রহর গুণছেন তারা।
জানা গেছে,চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে তাদের সব ধরনের পুলিশ ভেরিফিকেশন হলেও প্যারেড স্থগিত করার পর জেলার এসপিদের মাধ্যমে তাদের ব্যাপারে আবার তদন্ত করা হয়।তদন্তে কোনো ধরনের সমস্যা না পাওয়ার কারণেই হাস্যকর কারণ দেখিয়ে তাদের শোকজ করা হয়।এলোমেলো হাঁটা এবং মুভি দেখার সময় হৈ চৈ করার কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছেন কয়েকজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এএসপি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এ অবস্থায় আমরা চরম বিপর্যয়ের মুখে আছি।এমনকি আমাদের সামাজিকভাবে হেয় করা হচ্ছে।সবাই জানে আমরা এএসপি হয়েছি। প্রশিক্ষণ শেষ আরো তিন মাস আগে, এখন যদি আমাদের বাদ দেওয়া হয়, তাহলে আমরা ক্যারিয়ার আর দাঁড়াতে পারব না, তখন মনে হবে এ জীবন রাখার চেয়ে না রাখাই ভালো।
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের চাকরিতে নিয়োগের আগে এবং পরে দুইবার পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়েছে।১৬ ধরনের তথ্য যাচাই করা হয়েছে। শোকজের পর আবার করা হয়েছে। তাতেও কোনো ত্রুটি না পেয়ে বিলম্ব করা হচ্ছে রহস্যজনকভাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শোকজ নোটিশ পাওয়া একজন প্রশিক্ষণরত সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) বলেন, ৩৬৫ দিন ধরে প্রশিক্ষণ হলেও সমাপনী কুচকাওয়াজ না হওয়ায় আমরা ৪৬০ দিন ধরে প্রশিক্ষণ নিচ্ছি।দীর্ঘ এ সময়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মতো কোনো কাজ আমরা করিনি। তাহলে কেনো আমাদের এ ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, প্রশিক্ষণরত এএসপি ব্যাচের বড় অংশ দলীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত বলে অভিযোগ উঠেছে।এজন্য প্রশিক্ষণরত এসব এএসপিদের জীবন বৃত্তান্ত নানাভাবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।এদিকে পুলিশ সংস্কার কমিশনের সংস্কার প্রতিবেদনে পুলিশ ভেরিফিকেশনে রাজনৈতিক মতাদর্শ না দেখার সুপারিশ করা হয়েছে। শুধুমাত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা বিরোধী কাজে লিপ্ত থাকার বিষয়ে যাচাইয়ের কথা বলা হয়েছে।
কালের কণ্ঠ