সোমবার, ২৬ মে, ২০২৫
17 Jul 2025 03:52 pm
![]() |
৭১ভিশন ডেস্ক:- বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠী চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, ‘তাঁরা এমন বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করছেন, যেন আমরা বন্দর কাউকে দিয়ে দিচ্ছি। বিষয়টি মোটেও সে রকম নয়। চট্টগ্রাম বন্দর আমরা কাউকে দিচ্ছি না, সংস্কার করতে চাচ্ছি।
রবিবার (২৫ মে) রাজধানীর ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত ‘সিএমজেএফ টক’ অনুষ্ঠানে প্রেস সচিব এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য এটির পরিচালনার সঙ্গে বিশ্বের সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোকে যুক্ত করা হচ্ছে। কারণ বন্দরের সক্ষমতা না বাড়লে বিদেশি বিনিয়োগ কাঙ্ক্ষিতভাবে আসবে না।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশকে একটি ম্যানুফ্যাকচারিং হাবে পরিণত করতে চান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্বে নতুন যে ট্যারিফযুদ্ধ শুরু হয়েছে, তাতে অনেক দেশ বিকল্প দেশে তাদের বিনিয়োগ সরিয়ে নিতে চায়।
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সবচেয়ে সম্ভাবনাময় গন্তব্য। কৌশলগত অবস্থান আর সাশ্রয়ী শ্রমের দিক দিয়ে আমরা অনেক এগিয়ে। কিন্তু এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে বন্দরের দক্ষতা বাড়াতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বারবার এই তাগিদ দিয়েছেন।
’শফিকুল আলম বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় কম্পানিগুলো চট্টগ্রাম বন্দরকে যেন ম্যানেজ করতে পারে, আমরা তা চাচ্ছি। আমরা চট্টগ্রাম বন্দর কাউকে দিচ্ছি না। আমরা চাই, টার্মিনালে যেন তারা বিনিয়োগ করে, ম্যানেজ করে। এরই মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছি, তারা তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।’
সিএমজেএফ সভাপতি গোলাম সামদানী ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে শফিকুল আলম বলেন, আগামী বছরের ৩০ জুনের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে; এর বাইরে যাবেন না প্রধান উপদেষ্টা। আগে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব ছিল শুধু নির্বাচন করা; কিন্তু বর্তমান সরকারের দায়িত্ব সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন।
এর আগে গত ১৪ মে চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনে যান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে গিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর অর্থনীতির হৃপিণ্ড। এই বন্দর বাদ দিয়ে অর্থনীতির নতুন পথ খোলা সম্ভব নয়। প্রথম দিন থেকে চেষ্টা করছি, কিভাবে এটার পরিবর্তন করা যায়। একটা সত্যিকার বন্দর হিসেবে তৈরি করতে হবে। আমাদের মতো দেশে, একটা বন্দর, কয়েকটা টার্মিনাল নিয়ে কথা বলছি। এ রকম ২০-৩০টা বন্দর, টার্মিনাল অনেক দেশের আছে। আমাদের হৃপিণ্ড দিয়ে রোগী বেশিদিন টিকবে না। কাজেই এটাকে শক্তিশালী করতে হবে। এটাই চ্যালেঞ্জ।’
প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া ওই বক্তব্যের পর থেকেই চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে নানা রকম জল্পনাকল্পনা চলছে। চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের কাছে না দেওয়ার দাবি করছে রাজনৈতিক দলগুলো। আবার অনেকেই বন্দর বিদেশিদের হাতে না দিতে আন্দোলনে রাস্তায়ও নেমেছে।
শফিকুল আলম আরো বলেন, ‘বন্দরকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার প্রযুক্তি আমাদের নেই। আমাদের সে বিষয়ক অভিজ্ঞতা নেই, দক্ষতাও নেই। সে জন্য বিদেশের বড় বড় কম্পানির সঙ্গে কথা বলছি। দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড, এপি মোলার মেয়ার্সক, পোর্ট অব সিঙ্গাপুর অথরিটির সঙ্গে কথা বলছি। তারা এলে আমাদের বন্দরের দক্ষতা বাড়বে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগের অন্যতম ক্ষেত্র হচ্ছে রাজস্ব আয় বাড়ানো। সেই লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দুই ভাগ করা গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে মন্তব্য করেন প্রেস সচিব।
শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা রাজস্ব আয় বাড়াতে পারিনি বলে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়াতে পারছি না। আপনি যদি শেখ হাসিনার আমলটা দেখেন তাহলে দেখবেন, গত এক দশকের মধ্যে বিধবা ভাতা ৫০০ টাকাই রয়ে গেছে। ডলারের বিপরীতে টাকার দাম যখন ৭০ টাকা ছিল, তখন একজন ৫০০ টাকা ভাতা পেতেন। শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার সময় ডলারের বিপরীতে টাকার মান ছিল ১২০ টাকা, তখনো ভাতা ছিল ৫০০ টাকা। সুতরাং রাজস্ব আয় বাড়ানোর বিকল্প নেই।’
আগামী জুন মাসে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রায় ১৫০ জনের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে আসবে বলে জানান শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘চীনের বিনিয়োগকারীরা স্বল্পমূল্যের পণ্য উত্পাদনে পৃথিবীর সেরা। এত দক্ষ যে ইউরোপীয় বা উত্তর আমেরিকানরা চীনাদের সঙ্গে পেরে উঠছে না। ফলে চীনারা বাংলাদেশে এলে দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি আরো বাড়বে।’
দেশের শেয়ারবাজার ‘ডাকাতদের আড্ডা’ হয়ে গেছে
দেশের শেয়ারবাজার ‘ডাকাতদের আড্ডা’ হয়ে গেছে উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, এক ডাকাত চলে গেলে আরেকটা ডাকাত আসছে। তিনি বলেন, ‘একটা বড় বিষয় হচ্ছে, ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) বা বাংলাদেশের ক্যাপিটাল মার্কেটের যে রিফর্মগুলো যাঁরা করেছেন, তাঁরা সবাই গোষ্ঠীস্বার্থের দিকে তাকিয়েছিলেন। এই গোষ্ঠীটা একটা পারপাস সার্ভ করছে, ওই গোষ্ঠীর প্রতিপক্ষ এসে আরেকটা পারপাস সার্ভ করেছে। ফলে দেখা গেছে, যাঁরা বড় বড় প্লেয়ার, তাঁরা সব সময় বেনিফিটেড হয়েছেন। আর যাঁরা খুব ছোট ট্রেডার, যাঁরা সেভারস, বলা যায় শেয়ার মার্কেটে শেয়ার কিনে সেভিং করছেন, তাঁরা সব সময়, বেশির ভাগ সময় বেনিফিটেড হননি বা চিটেড হয়েছেন। ম্যানিপুলেশনের শিকার হয়েছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘কিছু কিছু গোষ্ঠী অত্যন্ত সংগঠিতভাবে শেয়ারবাজারে কারসাজি করেছে। কিন্তু কোনো সরকারই তাদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেয়নি। দেখা যাচ্ছে, স্থানীয় যারা সংস্কার করতে চায়, তারা আরেকটা ধান্দাবাজ গোষ্ঠী। সুতরাং এখন যে সংস্কার করা হবে, যাঁরা এই সংস্কার করবেন, তাঁরা হবেন ওইসব গোষ্ঠীস্বার্থের অনেক দূরের লোক। তাঁরা নির্মোহভাবে সংস্কার করবেন।’
প্রেস সচিব বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, আমাদের আশপাশে যাঁরাই শেয়ারবাজারে একটু প্রভাবশালী ছিলেন, কিংবা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আশপাশে ছিলেন, তাঁরা সবাই কোটিপতি হয়ে গেছেন। সেই পরিস্থিতি যেন আবার তৈরি না হয়, সাধারণ শেয়ারধারীদের স্বার্থ যেন সুরক্ষিত হয়, সে জন্য প্রধান উপদেষ্টা বারবার তাগাদা দিয়েছেন।’
শফিকুল আলম বলেন, ‘এ জন্য প্রফেসর ইউনূস গত মিটিংয়ে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন যে সেট অব ফরেন এক্সপার্ট, যারা শেয়ার মার্কেট কিভাবে গ্লোবালি রিফর্ম করা যায়, গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডে আনা যায়, সেটাই যেন খুব দ্রুত হয়, তাদের নিয়ে আসা হয়। এটার জন্য তিন মাসের একটা টাইমলাইন দেওয়া হয়েছে। তিন মাসের মধ্যে তারা এসে শেয়ার মার্কেটের কী কী করণীয়, সেটা তারা বলবে এবং সে অনুযায়ী খুব দ্রুত অ্যাকশন নেওয়া হবে।’
শেয়ারবাজার সংস্কারের জন্য কেন বিদেশি বিশেষজ্ঞ আনা হবে, এ বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘শেয়ার মার্কেট তো রকেট সায়েন্স না যে বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিদেশি একজন এসে বুঝবেন না। পুরো বিশ্বেই শেয়ারবাজারের প্রমিত প্রক্রিয়া বা রীতিনীতি আছে। আমাদের ভয় হয়, স্থানীয় কাউকে সংস্কারের জন্য আনা হলো, কিন্তু তিনি কোনো গোষ্ঠীর কাছে বিক্রি হয়ে যান কি না। আমরা তো এটা তদারক করতে পারব না। সে জন্য আমরা বিদেশি বিশেষজ্ঞদের ওপর জোর দিচ্ছি। এ ধরনের সংস্কার শ্রীলঙ্কা ও ভারতে হয়েছে। তারা পারলে আমরা কেন পারব না।’