রবিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২৫
27 Jan 2025 05:01 am
সাইফুর রহমান শামীম,কুড়িগ্রামঃ-দেশ ব্যাপী চলমান হাট-ঘাটে ইজারা প্রথা বাতিল,ট্রেনে কৃষি মালামাল পরিবহণের পৃথক তিনটি বগি সংযোগ করা, নদী ভাঙনরোধ,কৃষকের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে কৃষি পণ্যের দাম নির্ধারণসহ ১২ দফা দাবিতে প্রথম বারের মতো আজ রোববার অনুষ্ঠিত হচ্ছে উত্তরবঙ্গ কৃষক মহাসমাবেশ।কুড়িগ্রাম জেলার ব্রম্মপুত্র নদ ঘেষা চিলমারী উপজেলায় এই কৃষক সমাবেশের ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
কৃষক বাচলে দেশ বাচবে’ সেই কৃষকের কল্যাণে এবং দাবি আদায়ে এ সমাবেশ।আয়োজকদের প্রস্তুতি নিয়ে শনিবার দুপুরে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উত্তরবঙ্গ কৃষক মহাসমাবেশ কমিটির আহ্বায়ক নাহিদ হাসন নলেজ বক্তব্য উপস্থাপন করেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরদেন। এসময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন-মামুনুর রশিদ, জুয়েল, আজাদ আলী ও ভূমিহীন আনোদালনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন।
‘উত্তরবঙ্গ কৃষক মহাসমাবেশ বাস্তবায়ন গণকমিটি’র পক্ষে আহ্বায়ক নাহিদ হাসান নলেজ বলেন,
সরকারের দুজন উপদেষ্ঠা এ সমাবেশে আসবার কথা থাকলেও ঢাকায় রোববার জরুরী কেবিনেট মিটিঃ থাকায় উপস্থিত থাকতে পারছেন না। তারা উপস্থিত থাকতে না পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এর পরে দেশের বিভিন্ন কর্ণারে আরো তিনটি সমাবেশ শেষে ঢাকায় কেন্দ্রিয় ভাবে কৃষক সমাবেশ করে কৃষকদের সার্থে দাবি সমুহ মানতে সরকারকে সম্মত করতে আমরা সফল হবো এ বিশ্বাস আমাদের আছে। সরকারে কাছে সাড়ে ৬৫ লাখ টাকা চেয়ে আবেদনকে নিয়ে বিতর্ক সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বলেন, একটি স্বার্থাম্মেশি মহল আছে যারা কৃষকের এ সমাবেশকে ভন্ডুল করতে চায়। তারাই বিরোধীতা করছে। আবেদন চেয়ে নিয়ে তারাই আবার ফাঁস করে দিয়েছে। এটা বড় ধরণের প্রতারণা। তিনি বলেন-
“যারা হইচই করছেন তারা কৃষকের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে কৃষক সমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করার পাঁয়তারা করছেন। আমরা কৃষকদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করে আসছি। কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে বরাদ্দ চাওয়া হয়নি। সমাবেশকে বিতর্কিত করতে একটি মহল এমনটি করেছে। রাষ্ট্রের নাগরিক ও সংগঠন হিসেবে ন্যায়সঙ্গত দাবি করা নিশ্চয়ই কোনো অন্যায় নয়। এখন আমরা নিজেদের খরচে প্রোগ্রাম করবো সবার সহযোগীতা চাই।
”চিলমারীর জোড়গাছে সফিউল আলম রাজা স্টেডিয়ামে এ কৃষক মহাসমাবেশে রংপুর, রাজশাহী বিভাগের কয়েক হাজার কৃষক যোগদেবেন বলে জানান।
নাহিদ হাসান নলেজ কুড়িগ্রামের একজন সংগঠক, যিনি উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে জাতীয় দৈনিকে লেখালেখি করেন।৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় তাকে শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি হিসেবে নিয়োগ দেয়।সরকারে আস্থাভাজন নাহিদের সমাবেশে সরকারের দুই উপদেষ্টা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার সমাবেশের উদ্বোধন এবং ত্রাণ ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই- আজমের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও এ বিতর্কের পর প্রোগ্রাম বাতিল করেছেন।এ ঘটনায় সারাদেশের আলোচনায় আসে নাহিদ।
কৃষকদের আনন্দ দিতে উলিপুর ভাওয়াইয়া একাডেমি পরিবেশন করবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।এছাড়া গাইবান্ধার সাঁওতাল শিল্পীরাও অংশ নেবেন। ঢাকা থেকে আসবেন অভিনেত্রী নওশাবা আহমেদ ও অভিনেতা দীপক সুমনের তীরন্দাজ নাট্য দল।
এখন সমাবেশে অতিথি হিসাবে থাকবেন রাস্ট্র সংস্কার আন্দোলণের প্রধান সমন্বয়ক এডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম,কনক রহমান,বাসসের মাহবুব মোর্শেদ, কৃষক নেতা দেলোয়ার জাহান।এছাড়া জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দসহ দেশবরেণ্য লেখক-বুদ্ধিজীবীরা।
উত্তরবঙ্গ কৃষক মহাসমাবেশের দাবিসমূহ
১. হাট ও ঘাট থেকে জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ কর। ইজারা প্রথা বাতিল করে সরাসরি খাজনা তোল।
২. বীজ ও কৃষি উপকরণের দাম কমাও। কৃষকের সাথে আলোচনা করে কৃষি পণ্যের দাম নির্ধারণ কর। কৃষিকে কর্পোরেশনের থাবা থেকে বাঁচাও।
৩. তুলা ও রেশমের আবাদ বাড়াও। রেশম ও এণ্ডিপোকার লার্ভা খোলা বাজারে বিক্রির ব্যবস্থা কর। সুতা, কাপড় ও রং তৈরির জন্য গ্রামে গ্রামে তাঁতীদের ট্রেনিং সেন্টার খোল।
৪. শুধু ইলিশ নয়, সকল মাছের ডিম ছাড়ার মৌসুমে মাছ ধরা নিষিদ্ধ কর। কর্মহীন সময়ে জেলেদের রেশনের ব্যবস্থা করো।
৫. চরাঞ্চলে ভুয়া ভূমিহীনদের হাত থেকে খাস জমি দখলমুক্ত কর। প্রকৃত ভূমিহীনদের মধ্যে খাস জমি বিতরণ কর।
৬. দেশের সকল বন, নদী, নালা, বিল, পাহাড় দখল, বেচাকেনা এবং ইজারা প্রদান বন্ধ কর। কৃষি জমিতে পুকুর কেটে নয়, প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছ উৎপাদন বাড়াও।
৭. ভাঙন ঠেকাতে নদীর পাড় ও চর এলাকায় বিন্না ঘাস লাগাও। নদী থেকে অপরিকল্পিত বালু তোলা নিষিদ্ধ কর। নদী ভাঙলেই খাস নয়, এই আইন চালু কর।
৮. আন্তঃনগর ট্রেনে কৃষিপণ্য পরিবহনের জন্য ৩টি সুলভ বগি সংযুক্ত কর। পচনশীল কৃষিপণ্য বহনকারী যানবাহনকে রাস্তায় ও ফেরীতে আগে যেতে দাও।
৯. আখ ও বিট চিনির আবাদ বাড়াও। সকল চিনিকল সংস্কার করে চালু কর। কৃষকের গুড় উৎপাদনের স্বাধীনতা দাও। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের আখ মাড়াই আইন বাতিল কর।
১০. মহাজনি প্রথা থেকে লবণচাষীদের রক্ষা কর।মিল মালিকদের পক্ষে সরাসরি ক্রয় কেন্দ্র খোলো।চাষীদের মতামতের ভিত্তিতে সরকারিভাবে লবণের দাম নির্ধারণ করো।
১১. গোবিন্দগঞ্জ ও ফুলবাড়ির কৃষকের নামে করা মিথ্যা মামলা বাতিল কর।শুধু ব্যক্তি-মালিকানা নয়, জমিতে সামাজিক মালিকানার সাংবিধানিক স্বীকৃতি দাও।
১২. অনাদায়ী কৃষিঋণ আদায়ে মামলা ও গ্রেফতারের আইন বাতিল কর।সকল ধরনের ক্ষুদ্র কৃষিঋণ মওকুফ কর।