শুক্রবার, ০৫ জুলাই, ২০২৪
25 Nov 2024 02:14 pm
৭১ভিশন ডেস্ক:- কোনো ভালো কাজের সুযোগ পেলে সে সুযোগের সদ্ব্যবহার করা যেমন জরুরি তেমনি মন্দ কাজ ক্ষুদ্র হলেও তা পরিহার করা জরুরি।কেননা, একটি মাত্র অপকর্ম মানুষকে জাহান্নামের অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করতে পারে।অন্যদিকে একটি মাত্র ভালো কাজ মানুষকে নিয়ে যেতে পারে চির সুখের নিবাস জান্নাতে।আজকের আলোচনায় হাদিসের আলোকে এরূপ কিছু নেক কাজের এবং সেগুলোর উপর আমল করে যেন জান্নাত লাভ করতে পারি তার আলোচনা করা হলো।
রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা। হযরত আবু হুরাইবা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি জান্নাতে এক ব্যক্তিকে এই জন্য আনন্দ ভোগ করতে দেখেছি যে, সে রাস্তা থেকে মুসলমানদের জন্য কষ্টদায়ক একটি বৃক্ষ কেটে ফেলেছিল।(সুহীহ মুসলিম : ২৬১৮)।
আরেক হাদিসে আছে, হযরত আবু শাইবা হারাবী (রহ.) বলেন, একদা মুয়ায (রা.) এক ব্যক্তির সঙ্গে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন, তখন মুআয (রা.) রাস্তা থেকে একটি পাথর সরিয়ে ফেললেন। লোকটি কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল জনাব, আপনি এটা কেন করলেন? মুআয (রা.) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক পাথর সরিয়ে ফেলবে তার জন্য একটি নেকী লেখা হবে, আর যার একটি নেকী থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুজামে কাবীর তবারানী : ১৯৮)।
মসজিদ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা। আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি মসজিদ থেকে কোনো কষ্টদায়ক বস্তু বের করে ফেলবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ নির্মাণ করবেন। (সুনানে ইবনে মাজা : ৭৫৭)।
অসুস্থকে দেখতে যাওয়া। হযরত আলী (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, কোনো মুসলমান যদি সকালে কোনো অসুস্থ মুসলমানকে দেখতে যায়, তাহলে সন্ধ্যা পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য রহমতের দুআ করতে থাকে। আর যদি সন্ধ্যায় দেখতে যায় তাহলে সকাল পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য রহমতের দুআ করতে থাকে। আর জান্নাতে তার জন্য প্রচুর পরিমাণ ফল থাকবে। সে ইচ্ছামতো সেখান থেকে পেড়ে পেড়ে খাবে। (সুনানে তিরমিযী : ৯৬৯)।
পরিশোধ সময় মতো, তাগাদা নম্রভাবে। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) বলেছেন, এক ব্যক্তি জান্নাত লাভ করেছে এই জন্য যে, সে ঋণগ্রস্ত হলে গড়িমসি না করে সময় মতো ঋণ আদায় করে দিতো, আর অন্যের নিকট ঋণ পাওনা হলে নম্রভাবে চাইত এবং মানুষের সামনে তাকে লজ্জিত করত না। (মুসনাদে আহমদ : ৬৯৬৩)।
দোষত্রুটি গোপন রাখা। আবু সাইদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো মুমিন যদি অপর ভাইয়ের কোনো দোষ দেখে এবং সেটা গোপন রাখে, আল্লাহ তাআলা এর বিনিময়ে তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন। (মুজামে আউসাত, তবারানী : ১৫০৩)।
বিপদগ্রস্ত মু’মিন ভাইকে সান্ত¡না দিলে। আমর ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো মু’মিন যদি কোনো বিপদগ্রস্ত মুসলিম ভাইকে সান্ত¡না প্রদান করে, তাহলে কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহ তাআলা তাকে সম্মানের পোষাক পরিধান করাবেন। (সুনানে ইবনে মাজা : ১৬০১)।
নিরাপদে জান্নাতে যাওয়ার আমল। আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বলেন, নবী করীম (সা.) যখন হিজরত করে মদীনায় পৌঁছলেন, তখন মানুষেরা তাঁর নিকট ভিড় জমাল। আগত লোকদের মধ্যে আমিও ছিলাম। আমি যখন গভীর দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকালাম তখন আমার বুঝতে বাকি রইল না যে, এটা কোনো মিথ্যাবাদীর চেহারা হতে পারে না।
তখন তাঁর মুখ থেকে প্রথম যে কথাগুলো শুনতে পেলাম তা এই যে, ‘হে লোক সকল, তোমরা সালামের প্রচলন করো, ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ এবং রাতে মানুষ যখন নিদ্রায় মগ্ন থাকে তখন তোমরা নামাযে নিমগ্ন থাক।(এগুলো করলে) তোমরা নিরাপদে নিশ্চিন্তে জান্নাতে প্রবেশ করবে।(মুসনাদে আহমাদ : ২৩২৭২)। এ ধরনের আরো হাদিস রয়েছে।আল্লাহ আমাদেরকে আমল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)।
মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম
ইনকিলাব