সোমবার, ২৪ জুন, ২০২৪
22 Nov 2024 04:26 am
ভোলা প্রতিনিধি:-ভোলায় এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জমি দখলের অশুভ পায়তারায় ব্যার্থ এবং সন্ত্রাসী মামলার আসামী হয়ে অস্ত্রধারী দূর্বৃত্তরা এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের বসতবাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে।
শনিবার (২২ জুন) সদরের সার্কুলার রোডের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম ইউনুছ মিয়ার বসতবাড়ীতে এঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী ও বাড়ির বাসিন্দা সেলিম আহম্মেদ গণমাধ্যমকে জানান, এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ননী গোপাল ও তার চেলাচামুন্ডাদের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা করায় বেশ কিছুদিন ধরে বাদী হিসেবে তাকে হুমকি এবং তার বাড়িতে হামলা চালিয়ে সিসি ক্যামেরা ভাংচুরের ঘটনা ঘটায়।এর আগে গত ৫ জুন বুধবার দুপুরে ভোলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সন্ত্রাস মামলায়
(যার নম্বর- সিআর ৩৯৪/২৪,ভোলা) আসামীদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। ওই মামলায় বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরীফ মো. সানাউল হক শুনানি শেষে মো. সেলিম এর অভিযোগটি আমলে নিয়ে আসামিদের ১৯/০৮/২০২৪ তারিখে হাজির হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন।
মামলার বাদী মো.সেলিম আহাম্মেদ- গণমাধ্যমকে বলেন, বিবাদীদের সাথে আমাদের দীর্ঘদিনের জমি জমা বিরোধ সৃষ্টির জেরে আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে সন্ত্রাসী ননী-গোপালের নেতৃত্বে সমীর,প্রদ্বীপ বনিক মনা,বাবুল রায়সহ দুর্বৃত্তরা আমার পরিবারের সদস্যদের উপর হামলা ও মারধর করলে আমি বাদী হয়ে বিজ্ঞ আদালতে সিআর-৩৯৪/২৪ নং মামলা দায়ের করি।উক্ত মামলা বর্তমানে বিজ্ঞ আদালত বিবাদীদেরকে সমন জারি করে। সমন জারী করার পর হতেই বিবাদীরা আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে। একপর্যায়ে সকল বিবাদীরা উক্ত মামলা বিজ্ঞ আদালত হতে তুলে নিতে আমাকে প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করে।
আমার বসত ঘরের চারপাশে সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত করা আছে। তিবি বলেন,ঘটনার দিন ২২ জুন রাত অনুমান ১০.০০ ঘটিকার সময় ভোলা সদর মডেল থানাধীন ভোলা পৌরসভার মহাজনপট্টি সার্কুলার রোড সাকিনে ০৬নং ওয়ার্ডস্থ আমার বসত ঘরের সামনে বিবাদীরা এসে আমাদেরকে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করে আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে বসত ঘরের চারপাশের সিসি ক্যামেরাগুলো লাঠী দিয়ে পিটিয়ে ভাংচুর করে অনুমান ৩০,০০০/-টাকার ক্ষতিসাধন করে।আমি বিবাদীদেরকে নিষেধ করায় আমাকে মারধর করার চেষ্টা করে এবং প্রাণ নাশের হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদান করে। ইতিপূর্বেও বিবাদীরা আমার বসত ঘরে লাগানো সিসি ক্যামেরা গুলো ভাংচুর করেছিল।বিবাদীদের মূল উদ্দেশ্যে সিসি ক্যামেরাগুলো ভাংচুর করে আমার ও আমার ভাই এ মামলার ১নং সাক্ষী সজীবকে তার পরিবারসহ প্রাণ নাশ ঘটানো।আমি উক্ত ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের জানালে তারা আমাকে আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেয়। এদিকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ওই
মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবিকে।এদিকে মুক্তিযোদ্ধার বাড়ীতে হামলার বিষয়টি জানতে কথা হয়,ভোলা সদর মডেল থানার ওসি মনির হোসেন মিয়ার সাথে।তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সূত্রমতে, শহরের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত সার্কুলার রোডের বিরোধপূর্ণ ওই সম্পত্তিকে পূজিঁ করে ননী-সমীর বাহিনী বিভিন্ন সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাহাঙ্গামা বাধিয়ে দেয়।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এরা ওই বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে উঠে বহুবছর মালিক ইউনুছ মিয়াকে নিয়মিত ভাড়া প্রদান করতেন।কিন্তু তার মৃত্যুর পর এসব ভাড়াটিয়া সংখ্যালুঘুর ধোয়া তুলে সেখানে ভাড়া দেয়া বন্ধ করে দস্যুবৃত্তি শুরু করেন।একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা ইউনুস পরিবারের সম্পদ নিজেদের দাবী করে তাদের বিরুদ্ধে দেওয়ানী মামলা ঠুকে দেন।ওই মামলায় এসব ভূয়া বাদীপক্ষ হাইকোর্ট,সুপ্রিমকোর্ট হেরে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য এখন ভোলার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে অপেক্ষমান রয়েছে।তবুও এই অশুভ চক্রটি তাদের সন্ত্রাসলীলা বন্ধ রাখেনি।তারা যেকোনো উপায়ে বীরমুক্তিযোদ্ধা ইউনুস মিয়ার পরিবারকে উৎখাত করে বিশাল এ সম্পত্তি নিজেদের কব্জায় নিতে নানাপ্রকার ফন্দিফিকির চালিয়ে যাচ্ছেন বলে এলাকার শ্রেনীপেশার মানুষ জানিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে দুষ্টু এই চক্রটি বারবার সংখ্যালুঘু ইস্যুটিকে তাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন।
দেওয়ানী ওই মামলা সূত্রে জানা যায়,মুক্তিযোদ্ধা ইউনুস মিয়া ওই এলাকায় পাকা দালানসহ ১০৫ শতাংশ জমি ১৯৮৫ ইং সালে জনৈক বিনয়ভূষণ রায চৌধুরীর কাছ থেকে রেজিস্ট্রি দলিলমূলে ক্রয় করেন। যার দলিল নম্বর-১৭৪০ ও ১৩৩১।উক্ত বিনয়ভূষণ পরিবারসহ ভারতে গিয়ে বসবাস করেন।সূত্রমতে, তার কোনো ওলিওয়ারিশ ভোলার আনাচে-কানাচেতে কোথাও নেই।তবুও কোনোপ্রকার আত্মীতার যোগসূত্র না থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র দাঙ্গাবাজী ও ধর্মীয় উস্কানীকে পুঁজি করে ননী গোপাল বাহিনী মুক্তিযোদ্ধা ইউনুস পরিবারের সম্পদ দখলে এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে।এ বিষয়ে অভিযুক্ত ননীগোপালের সাথে কথা হলে তিনি উক্ত বিরোধীয় জমি মন্দিরের দেবত্তোরসম্পদ বলে দাবী করেন।এলাকায় সন্ত্রাস ও ধর্মীয় উম্মাদনার অভিযোগটিও অস্বীকার করেন ননীগোপাল।
বর্তমানে শহরের সার্কুলার রোডের ওই সম্পত্তি নিয়ে ননী বাহিনীর সাথে বাড়ীর মালিক এবং এলাকাবাসীর মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।