রবিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৩
24 Nov 2024 04:31 pm
৭১ভিশন ডেস্ক:-চলতি মাসে বাহরাইনের রাজধানীতে অনুষ্ঠিত মানামা সংলাপে গাজায় ইসরায়েলের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক যুক্তরাষ্ট্র ও বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে বিস্তৃত আলোচনার সুযোগ ছিল। তবে আলোচনাটি ফলপ্রসূ হয়নি। ওই সংলাপে অংশ নেয়া বাইডেন প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক শীর্ষ উপদেষ্টা ব্রেট ম্যাগার্ক প্রেসিডেন্ট বাইডেনেরই সুরে কথা বলেছেন। যেমনটা বাইডেন বলেছিলেন, যুদ্ধবিরতি আসা মানেই শান্তি নয়।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই ভাবনা মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ নেতার সঙ্গে মেলে না; যারা মনে করেন, গাজায় বিপুলসংখ্যক বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু থামাতে যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। শুধু চলমান যুদ্ধের ব্যাপারে নয়, যুদ্ধ শেষে সামনে কী হবে, তা নিয়েও যুক্তরাষ্ট্র ও আরব মিত্রদের মধ্যে বিস্তর মতপার্থক্য রয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর পেছনে প্রধানত দুটি কারণ বিদ্যমান। প্রথমত, আরব বিশ্ব চিন্তিত যে ইসরায়েলকে গাজা ধ্বংসের সুযোগ দেবে যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠনের ক্ষেত্রেও আরব বিশ্বের ওপর অর্থ, বিশেষজ্ঞ ও কর্মিবাহিনী দিয়ে সাহায্য করার জন্য চাপ আসবে। দ্বিতীয়ত, গাজায় হামাসকে উৎখাতের পর সেখানে কী ধরনের সরকার হবে, তা নিয়ে একটা বড় ধরনের অনিশ্চয়তা আছে।
বড় পরিসর বিবেচনা করলে হামাস-পরবর্তী গাজায় আপাতত তিনটি বিকল্প রয়েছে। প্রথমটি হলো, গাজায় ইসরায়েলের সম্পূর্ণ দখল ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা। দ্বিতীয়টি হলো, সেখানে প্যালেস্টিনিয়ান ন্যাশনাল অথোরিটির (পিএ) শাসন ফিরিয়ে আনা। আর তৃতীয়টি হলো, বাহ্যিক কোনো রাজনৈতিক বা নিরাপত্তামূলক প্রশাসন প্রবর্তন করা, যা আরব রাষ্ট্রগুলো কিংবা জাতিসংঘ পরিচালিত প্রশাসনের মিশেলে হতে পারে।
এদিকে গাজাকে সম্পূর্ণ দখলের বিকল্পটি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ আরও একাধিক ইসরায়েলি কর্মকর্তা প্রচার করেছেন। তবে হোয়াইট হাউস এটি বেশ আগেই খারিজ করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা বলেন, গাজা সম্পূর্ণ দখল করাটা মোটেই সঠিক অপশন নয়। অনেকে মনে করেন, যুদ্ধ কোনো না কোনোভাবে আগামী বছরেও গড়াতে পারে এবং এ ক্ষেত্রে পরবর্তী মার্কিন নির্বাচনের একটা ভূমিকা থাকবে।
যদি আরব বিশ্ব বা আন্তর্জাতিক শক্তি অপনশনটিতে যেতে বাধ্য হয়, তাহলেও ইসরায়েলকে আগামী বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। এর মধ্যে তাদের অব্যাহত নিরাপত্তা অভিযান চালিয়ে যেতে হবে এবং মার্কিন নির্বাচনে কারা ক্ষমতায় আসছে, তা দেখতে হবে।
পিএ'র শাসন ফিরিয়ে আনার দ্বিতীয় অপশনটিতে ওয়াশিংটন বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে আমেরিকানরা তাতে বেশ আগ্রহী হলেও প্রস্তাবিত বর্তমান শর্তে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ আগ্রহী নয়। ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরের কিছু অংশ শাসন করে পিএ এবং ২০০৭ সালে হামাস নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগপর্যন্ত গাজাও শাসন করত তারা। গাজায় ফেরার আগে পিএ সেখানে রাজনৈতিক অগ্রগতি দেখতে চাইবে।
কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন ছাড়াই গাজার শাসনভার গ্রহণ পিএকে আসলে ইসরায়েল ও আমেরিকার পুলিশ কর্মকর্তার ভূমিকায় ফেলে দেবে। এর মানে সেখানে এমনই নিয়মনীতি চাপিয়ে দেওয়া হবে, যেগুলো নির্ধারিত হবে অন্যত্র থেকে। তাহলে বাকি রইল তৃতীয় অপশনটি। মানামা সংলাপে কথা বলার সময় জর্ডানের উপপ্রধানমন্ত্রী আইমান আল সাফাদি স্পষ্ট করে বলেন, গাজায় কোনো আরব সেনা যাবে না। কেউ না।
সে ক্ষেত্রে শেষ অপশন হিসেবে জাতিসংঘ পরিচালিত প্রশাসন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। আরবরা ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞ পরিষ্কার করতে চায় না। আর ফিলিস্তিনের হাতে ক্ষমতা না ছাড়লে ইসরায়েল কিছুটা স্বস্তিতে থাকবে বিধায় এই অপশন উভয় পক্ষের জন্য জুতসই হতে পারে। তবে এটা বাস্তবায়ন করাও বেশ কঠিন।
সূত্র: এশিয়া টাইমস