খোকন হাওলাদার, গৌরনদী(বরিশাল)প্রতিনিধি ॥দরিদ্র পরিবারের কিশোরীদের চাকরির প্রলোভনে বরিশাল শহরে এনে কৌশলে চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হতো গোপন আস্তানায়। সেখানে মারধরের পর জোরপূর্বক বাধ্য করা হতো দেহ ব্যবসায়।
এমনই একটি চক্রের আস্তানায় মঙ্গলবার দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে নির্যাতিতা দুই কিশোরী, এক যৌণকর্মীকে উদ্ধারসহ চক্রের মূলহোতা স্বামী-স্ত্রী ও একজন খদ্দেরকে আটক করেছে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। ওইদিন এক কিশোরী পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়েরের পর মিনি পতিতালয়ের সন্ধানে নামে পুলিশ। মাত্র আট ঘন্টার ব্যবধানে গোপন আস্তানার সন্ধান পেয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। ঘটনাটি নগরীর আগরপুর রোডের হাবিব ভবনের দ্বিতীয় তলার।
বুধবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন জানান, নির্যাতিতা এক কিশোরীর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে চক্রটির সন্ধান পায়। এরপর মঙ্গলবার দিবাগত রাতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। ওসি আরও বলেন, পুরো ঘটনা তদন্তাধীন রয়েছে। এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত রয়েছে তাদের সকলকে গ্রেপ্তার করা হবে।
অভিযানে আটককৃতরা হলো মূলহোতা বরগুনার তালতলী উপজেলার হুলাটানা গ্রামের মৃত মোসলেম হাওলাদারের ছেলে আবুল কালাম (৫৫) ও তার স্ত্রী রাহিমা বেগম (৪০)। তবে ১১ ও ১৬ বছরের দুই কিশোরী এবং ৩৪ বছরের যৌণকর্মীসহ আটক এক খদ্দেরের নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ।
কোতয়ালী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমানুল্লাহ আল বারী বলেন, আটক দম্পতির বিরুদ্ধে মানব পাচার ও ধর্ষণের অভিযোগে কিশোরীর মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। সেই মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে বুধবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি আটক যৌণকর্মী ও খদ্দেরের বিরুদ্ধে অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
নির্যাতনের শিকার এক কিশোরীর বাড়ি বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলায়। ওই কিশোরী (১৭) জানায়, পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে তাকে একই এলাকার গোকুল মুন্সীর মেয়ে মানছুরা বেগম বরিশালে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখায়। পরবর্তীতে একই এলাকার ইব্রাহীম ও আবদুল মতিনের সহযোগিতায় মানছুরা বেগম গত (১০ ফেব্রুয়ারি) বাসে করে তাকে বরিশাল নগরীর রূপাতলীতে নিয়ে আসে। পরে একটি মাইক্রোবাসে তুলে জোরপূর্বক তার চোখ বেঁধে একটি ফ্ল্যাটে নিয়ে আটক করে রাখা হয়।
ওই কিশোরী আরও জানায়, মানছুরা, ইব্রাহীম ও মতিন আমাকে যে বিক্রি করে দিয়েছে তা বুঝতে পারি যখন আমাকে ফ্ল্যাটে নিয়ে মারধর করা হয়। আমি সেখানে গিয়ে দেখি আমার চেয়ে বয়সে ছোট আরও পাঁচজন কিশোরীকে ওই ফ্ল্যাটে জিম্মি করে রেখে দেহ ব্যবসা করানো হচ্ছে। আমাকে যিনি কিনেছেন তার নাম আবুল কালাম, তিনি ওই আস্তানা পরিচালনা করেন। তার কথা না শুনলে কালাম ও তার স্ত্রী রাহিমা বেগম অমানুষিক নির্যাতন করতো। পাশাপাশি শাস্তি হিসেবে কালাম যৌণ সম্পর্কের সময় অমানবিক কষ্ট দিতো।
ওই কিশোরী জানায়, আমার মা গ্রামের বাড়িতে বসে প্রতিবেশী নারী মানছুরার ওপর চাঁপ সৃষ্টি করলে বরিশালের আস্তানা থেকে গত (২২ ফেব্রুয়ারি) ভোর রাতে আমার চোখ বেঁধে মারধর করে গাড়িতে তুলে দেয়া হয়। মারধরের সময় আমার তলপেটে একাধিকবার লাথি মেরে নির্যাতন করে কালাম।
নির্যাতিতা ওই কিশোরীর বিধবা মা বলেন, দরিদ্রতার সুযোগে আমার মেয়েকে ভাল বেতনের চাকরি দেওয়ার কথা বলে আটকে রেখে ধর্ষণ ও মারধর করা হতো। বাহিরের লোকের সাথে রাতযাপনে বাধ্য করা হতো। এসব কথা জানার পর আমি মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) কোতোয়ালী মডেল থানায় এসে বিস্তারিত জানানোর পর পুলিশ আমার মেয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন এবং রাতে অভিযান চালিয়ে গোপন আস্তানা খুঁজে বের করে আসামিদের আটক করে। আমি এ ঘটনার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করছি।