বুধবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৪
12 Nov 2024 01:08 am
মোকছেদুল মমিন মোয়াজ্জেম,হিলি (দিনাজপুর) প্রতিবেদক:-দিনাজপুর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিবলী সাদিকের নামে হাকিমপুর ও নবাবগঞ্জ থানায় দুইটি হত্যা মামলা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) রাতে বিষয়টি জানিয়েছেন নবাবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ তাওহীদুল ইসলাম।
তিনি জানান, গতকাল সোমবার (২৬ আগস্ট) রবিউল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি শিবলি সাদিকসহ ৬৪ জনের নামে নবাবগঞ্জ থানায় মামলাটি করেছেন। ছেলে ও তার দুই বন্ধুকে হত্যার অভিযোগে মামলাটি করেন তিনি।
এদিকে গত ১৯ আগস্ট হাকিমপুর পৌরসভার সাবেক পৌর মেয়র জামিল হোসেন চলন্তের বাড়িতে দুই যুবককে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে নিহত সূর্যের বড় ভাই সুজন বাদী হয়ে হাকিমপুর থানায় মামলা করেন। গত ৫ আগস্ট সাবেক পৌর মেয়র চলন্তের বাড়িতে আগুনে পুড়ে মারা যায় দুই যুবক।
নবাবগঞ্জের হত্যা মামলার বাদী রবিউল ইসলাম উপজেলার উত্তর শ্যামপুর গ্রামের মৃত আবদুস সামাদের ছেলে। তিনি পেশায় একজন ভ্যানচালক।
নবাবগঞ্জ থানায় হত্যার মামলার আসামিরা হলেন, দিনাজপুর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকসহ তার ছোট ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাজওয়ার মোহাম্মদ ফাহিম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান (মানিক), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সায়েম সবুজ, দপ্তর সম্পাদক মো. শামসুজ্জামান, আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহিনুর রহমান, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন ও ছাত্রলীগ নেতা জামাল বাদশা। এই মামলায় আরও অনেককে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের মার্চে নবাবগঞ্জ উপজেলার ২ নম্বর বিনোদনগর ইউনিয়নে কাঁচদহ সেতুর উত্তর দিকে প্রায় ২০০ গজ দূরে করতোয়া নদীতে ১ নম্বর আসামি সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের ইজারা নেওয়া একটি বালুমহাল ছিল। সে সময় ওই বালুমহালের দায়িত্বে শিবলী সাদিকের অধীন মামলার আসামিদের অনেকে ছিলেন। বাদী রবিউল ইসলামের বড় ছেলে রিমন ইসলাম (২২) ওই বালুমহাল থেকে বালু তোলার ট্রাক্টরের হিসাব রাখার কাজ করতেন। আর সেখানে শ্রমিকের কাজ করতেন রিমন ইসলামের বন্ধু কিবরিয়া ইসলাম (৩০) ও সাব্বির রহমান (২৩)। তাঁরা তিনজনই ওই বালুমহলের ঘরে থাকতেন। বালু বিক্রির ট্রাক্টরের হিসাব নিয়ে রিমন ইসলাম ও তাঁর দুই বন্ধু কিবরিয়া ইসলাম ও সাব্বির রহমানের সঙ্গে মামলার ২ নম্বর আসামি শাহিনুর রহমান (সবুজের) বাগ্বিতণ্ডা হয়। এ সময় শাহিনুর ইসলাম ওই তিনজনকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি দেন। পরে বিষয়টি রিমন ইসলাম তাঁর বাবাকে জানান।
মামলায় আরও জানা যায়, ২০২২ সালের ৩০ মার্চ বিকেলে রিমন, কিবরিয়া ও সাব্বির কাঁচদহ বালুমহাল থেকে একটি মোটরসাইকেলে নবাবগঞ্জ বান্নি মেলায় ঘুরতে যায়। মেলা শেষে রাতে ওই তিনজন বান্নি মেলা থেকে কাঁচদহ বালুমহালের উদ্দেশে মোটরসাইকেলে রওনা দেন। রাত সোয়া ১২টার দিকে তাঁরা উপজেলার বিনোদনগর ইউনিয়নে নবাবগঞ্জ-কাঁচদহ পাকা সড়কে কৃষ্ণপুর এলাকায় পৌঁছলে শাহিনুর রহমানের নেতৃত্বে আসামি জিয়াউর রহমান, তাজওয়ার ফাহিম, আজিজুল হক, জামিনুর রহমান, সায়েম সবুজ, মো. শামসুজ্জামান, সানোয়ার হোসেন মণ্ডল ও সাদেক আলী তাঁদের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করেন। পরে শাহিনুর রহমান কুড়াল দিয়ে রিমনের মাথায় কোপ দেন। এ সময় কিবরিয়া চিৎকার দিলে ৩ নম্বর আসামি জিয়াউর রহমান হাঁসুয়া দিয়ে কিবরিয়ার গলা ও বুকে কয়েকটি কোপ দেন।
একপর্যায়ে মামলার আসামি তাজওয়ার ফাহিম, আজিজুল হক, জামিনুর রহমান, সায়েম সবুজ, মো. শামসুজ্জামান, সানোয়ার হোসেন মণ্ডল ও সাদেক আলী হাঁসুয়া, কুড়াল ও লোহার রড দিয়ে সাব্বির রহমানের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করতে থাকেন। রিমন, কিবরিয়া ও সাব্বিরের মৃত্যু নিশ্চিত করার পর আসামিরা তাঁদের লাশ রাস্তার পাশে ফেলে চলে যান।পরে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে নিহতের পরিবার ওই তিনজনের লাশ শনাক্ত করেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা ক্ষমতাসীন দলের হওয়ায় ওই সময় নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মামলা করার সাহস পাননি।সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের পরিকল্পনায় আসামিরা ওই তিনজনকে হত্যা করেছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
নবাবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তাওহীদুল ইসলাম বলেন, গতকাল সোমবার বিকেলে রবিউল ইসলাম এক ব্যাক্তি বাদী হয়ে ২০২২ সালে ৩১ মার্চ তিনজনকে হত্যার অভিযোগ করে স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক, সাবেক দুই উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতাকর্মীসহ ৬৪ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।