সোমবার, ০৫ জুন, ২০২৩
11 Nov 2024 03:00 am
(প্রেস বিজ্ঞপ্তি)-ঢাকা, সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩ :জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, আওয়ামী লীগের সাথে এখন যোগ দিয়েছে পুলিশ, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন। তারা একটা নতুন দল হয়েছে ”আওয়ামী লীগ প্লাস”। সবাই যেনো এখন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন। সবাই এখন আওয়ামী লীগের ভাষায় কথা বলে। পার্লামেন্টও এখন আওয়ামী লীগের অঙ্গ হয়েছে। বিচার বিভাগকে আওয়ামী লীগের অঙ্গ বানানোর চেষ্টা চলছে। কয়েক দিন আগে আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেছেন, এক প্রধান বিচারপতিকে নামিয়ে দিয়েছি। প্রমাণ হয়েছে আওয়ামী লীগ বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তিনি বলেন, রাজনীতির মাঠে কথা আছে আওয়ামী লীগ জামায়াতকে বিভিন্ন নামে কিছু সিট দিবে। আমাদেরও কিছু সিট দিবে। আমাদের বলা হয়, আপনারা আরো সংগঠিত হন, আপনাদের আরো বেশি সিট দিবে। কে দিবে? আওয়ামী লীগ দিবে? জনগণ ভোট দেবে না? আওয়ামী লীগের নেতা নেত্রীরা সিট দিতে পারে তাহলে নির্বাচনের দরকার কী? তাহলে ঘোষণা দিয়ে দেন কে কে পাশ করেছে। সাংবাদিকরাও প্রশ্ন করছে আওয়ামী লীগ কোন কোন সিট দিবে আপনাদের? নির্বাচনের অর্থ হচ্ছে জনগণ ঠিক করবে কে হবেন তাদের প্রতিনিধি। যদি আওয়ামী লীগই জনপ্রতিনিধি ঠিক করে দেন তাহলে নির্বাচনের প্রয়োজন কেন? আওয়ামী লীগ প্লাস ধংস না হওয়া পর্যন্ত গণতন্ত্র সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ প্লাস ধংস না হওয়া পর্যন্ত দেশের মানুষের মুক্তি সম্ভব নয়। আইনগতভাবে বাকশাল করা হয়েছিলো। এখন আইনগত ভাবে না করলেও বাকশালের আদলে “আওয়ামী লীগ প্লাস” তৈরী করা হয়েছে। আমাদের দুর্ভাগ্য আর তাদের সৌভাগ্য হলে আগামী নির্বাচনের পর বাকশালের নাম হবে ”আওয়ামী লীগ প্লাস”।
আজ দুপুরে জাতীয় পার্টি ঢাকা জেলা শাখার দ্বি-বার্ষিক সেেম্মলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এ কথা বলেন। সম্মেলনে ঢাকা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হিসেবে পুনরায় অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি’র নাম ঘোষণা করা হয়েছে। একই সাথে ঢাকা -০১ আসনে (দোহার-নবাবগঞ্জ) জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে এডভোকেট সালমা ইসলাম এমপির নাম ঘোষণা করেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এডভোকেট সালমা ইসলাম এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান আরো বলেন, সারাদেশ গরমে পুড়ছে, সরকারের খবর নেই। সরকার ভাবছে দেশের মানুষ মরণের পরে সবাই দোজখে যাবে। তাই দেশের মানুষকে এই গরমে প্রাকটিস করার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের মানুষতো বেহেস্তে যাবে তাদের দোজখের প্রাকটিস করাচ্ছে কেন? যারা আমাদের দোজখের প্রাকটিস করাচ্ছেন তারা ভাবছেন তারাই বেহেস্তে যাবেন। আসলে কী তারা বেহেস্তে যাবেন? সারাদেশে শতভাগ বিদ্যুত দেয়ার কথা বলে ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র তৈরী করে রেখেছে। তারপরও দেশের মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না কেন? আসলে তারা আমাদের বিদ্যুত দেয়ার জন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরী করেননি। তারা লুটপাটের জন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরী করেছে। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। আমাদের দরকার ১৪ হাজার মেগাওয়াট আর তৈরী করা হচ্ছে ২৪ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু আমরা পাচ্ছি ১০ হাজার মেগাওয়াটেরও কম বিদ্যুৎ।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, সরকার এখন গ্যাস কিনতে পারছে না, কয়লা কিনতে পারছে না, তেল কিনতে পারছে না টাকার অভাবে। এদেশের গরিব মানুষও বিদ্যুতের বিল বকেয়া রাখেনি তাহলে সরকার কয়লা কিনতে পারবে না কেন? হাসি হাসি মুখে তারা বলেন, কয়লা কিনতে আরো দেড় মাস লাগবে। তাহলে আপনারাও আমাদের সাথে আসুন, আপনারাও থাকুন আমাদের সাথে দোজখের আগুনে। সরকার বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক দুর্নীতি করেছে। টেন্ডার ছাড়াই কাজ দেয়া হয়েছে বিদ্যুত খাতে। রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের নামে ঋণ করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। ১ হাজার কোটি টাকার স্টিমেটের প্লান্টের জন্য খরচ হয়েছে মাত্র ৩ শো কোটি টাকা। প্রকল্পে ৭ থেকে ৮ শো কোটি টাকা ঋণ করে বাকি টাকা বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। আবার বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি চার্জের নামে লক্ষ-লক্ষ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। তাই এক শ্রেণীর মানুষ দেশে টাকা রাখার জায়গা পাচ্ছে না। দেশের মানুষ যেনো নরকে বাস করছে।
রুপপুর পাওয়ার প্লান্ট রাশিয়া থেকে কেনা হয়েছে। এটি আনবিক শক্তির ২৪ শো মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। একই ধরনের কোম্পানী থেকে ভারতেও এমন একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র কিনেছে মাত্র ৩৪ হাজার কোটি টাকায়। আর, আমাদের দেশে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকার চুক্তি করা হয়েছে। এর মাত্র ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আবার এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র মানুষের মৃত্যু ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে। কোন রকম ভুল ত্রুটি হলে এটম বোমের মত বিষ্ফোরিত হয়ে ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশংকা রয়েছে। যে দেশে দারোয়নদের অবহেলায় শত শত গার্মেন্টস কর্মীরা আগুনে পুড়ে মারা যায়, সেদেশে এমন ঝুকিপূর্ণ বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরী হচ্ছে। এখন উৎপাদনের সক্ষমতা আছে চাহিদার চেয়েও বেশি, তাহলে কেন অর্থনৈতিক অবস্থার ক্ষতি করে এমন প্রকল্প নেয়া হলো। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে সত্য কথা বললে তার নিস্তার নেই। অনেকে আমাকে বলেন, আপনার সৌভাগ্য এখনো আপনি গায়েব হননি। পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক গল্প বলা হচ্ছে। ওর্য়াল্ড ব্যাংকের টাকা নেয়া হয়নি, নিজস্ব টাকায় পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে। আসলে বাজেটের টাকায় দেয়া হয়েছে পদ্মা সেতু নির্মাণে। আমাদের বাজেট তৈরী হয় ঘাটতি বাজেট। বাজেটের পরিচালন ব্যায় করতে হয় দেশী বা বিদেশী ঋণ দিয়ে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের টাকা আমরা ফিরিয়ে দিয়েছি, অথচ ওর্য়াল্ড ব্যাংকের সুদের হার ১ শো টাকায় ১ বছরে মাত্র ৫০ পয়সা। এক ধরনের সুদ বিহীন ঋণ। পদ্মা সেতুতে খরচ হয়েছে বিদেশী ঋণের বাজেটের টাকা। ওর্য়াল্ড ব্যাংকের টাকা ফেরত দিয়েছেন কেন? দুর্নীতি যদি না হতো, তার প্রমাণ দিতেন। ফলে ১০ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু শেষ হয়েছে ৩২ হাজার ৬ শো কোটি টাকায়। পদ্মা সেতু আসলে ঋণের টাকায় তৈরী হয়েছে। তিনগুণ বেশি টাকা খরচ হয়েছে পদ্মা সেতুতে। নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু? কীসের বাহাদুরী? বিশ^ ব্যাংকের স্বল্প সুদের ঋণ না নিয়ে হয়তো অনেক বেশি সুদের ঋণের টাকায় পদ্মা সেতু হয়েছে। জনগণের গলায় ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা কোন গর্বের প্রকল্প হতে পারে না।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেছেন, সালমা ইসলাম এমপি নিজেদের টাকা খরচ করে গণমানুষের পাশে থাকেন। অপরদিকে, এই এলাকায় এক দরবেশ আছেন তিনি লাখ লাখ যুবকের জীবন ধংস করেছে শেয়ারবাজার লুট করে। তিনি বলেন, করোনা টিকা বানিজ্যেও সেই দরবেশের নাম চলে এসেছে। তিনি বলেন, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্লান্ট নামে ১২ বছরে ৯০ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে সরকার। জনগণের সামনে একদিন জবাব দিতেই হবে।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেছেন, ১ বছর আগে জ্বালানী মন্ত্রী বলেছেন আমরা নেপালে বিদ্যুত রফতানী করবো আর এখন বলছেন নেপাল থেকে বিদ্যুত আমদানী করবো। জ্বালানী মন্ত্রী পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। দ্রব্যমূল্য উর্ধগতির কারণে দেশের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ব্যর্থ বানিজ্যমন্ত্রী এখন বলছেন প্রয়োজন হলে পেয়াজ আমদানী করবেন। সরকারের এই মন্ত্রীদের জনগণ ক্ষমা করবে না।
সভাপতির বক্তৃতায় অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি বলেছেন, উপনিবেশিক ব্যবস্থা ভেঙে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ মানুষের কল্যাণে অনেক কাজ করেছেন। তাই দেশের মানুষ আবারো জাতীয় পার্টিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়। তিনি বলেন নির্বাচন এলেই জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। তাই সবাইকে সচেতন থাকতেও আহবান জানান তিনি।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক এডভোকেট সালমা ইসলাম এমপির সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন- জাতীয় পার্টির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, কো- চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি।
স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে - জুয়েল আহমেদ, শাকিব আহমেদ, প্রিন্সিপাল আব্দুল হামিদ, আবুল হাসনাত আজাদ প্রমুখ।
সম্মেলনে বার্ষিক প্রতিবেদন পাঠ করেন ঢাকা জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব ও চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ইসরাফিল খান খোকন এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু।
উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য- মীর আব্দুস সবুর আসুদ, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, লেঃ জেঃ অব. মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এমপি, এডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, নাজমা আকতার এমপি, আলমগীর সিকদার লোটন, লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, জহিরুল আলম রুবেল, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা রওশন আরা মান্নান এমপি, শেরিফা কাদের এমপি, নূরুল ইসলাম তালুকদার এমপি, ভাইস-চেয়ারম্যান- মোঃ আরিফুর রহমান খান, আহসান আদেলুর রহমান এমপি, সালমা হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব মোঃ বেলাল হোসেন, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য - হুমায়ুন খান, মাখন সরকার, কাজী আবুল খায়ের, মাসুদুর রহমান মাসুম, এম এ রাজ্জাক খান, ইঞ্জিনিয়ার এলাহান উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক - বাহাদুর ইমতিয়াজ, আকতার হোসেন দেওয়ান, এম এ সোবহান, সুজন দে, মাহমুদ আলম, ডাঃ সেলিমা খান, শাহনাজ পারভীন, মীর সামসুল আলম লিপ্টন, কেন্দ্রীয় নেতা আলাউদ্দিন আহমেদ, তাসলিমা আকবর রুনা, মোহাম্মদ আলী খান, রমজান আলী, জেসমিন নূর প্রিয়ংকা, আসমা আক্তার রুমী, সৈয়দা জাকিয়া আফরোজ হিয়া, মিথিলা রোয়াজা, রফিকুল আলম সেলিম, কাজী আব্দুল হামিদ, আবুল খায়ের আবরার শিশির, রেসমি হোসেন, আসাদুজ্জামান চৌধুরী, শাহদাত, শাকিল আহমেদ, খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম, আনিসুর রহমান বাবু, জাতীয় ছাত্র সমাজের সভাপতি আল মামুন, সাধারণ সম্পাদক আশরাফ খান, মটর শ্রমিক পার্টির সদস্য সচিব আব্দুর রহিম।
খন্দকার দেলোয়ার জালালী,জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর,প্রেস সেক্রেটারি-০২