রবিবার, ২৬ মার্চ, ২০২৩
17 Nov 2024 04:52 am
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের খড়া যেন কাটছেই না। অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশ বিনিয়োগ টানতে পারলেও বাংলাদেশ তা পারছে না।
এ খড়ার প্রধান তিনটি কারণ বা বাধা চিহ্নিত করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি মনে করে বিদেশি বিনিয়োগের প্রধান বাধাগুলো হলো উচ্চ শুল্ক ও অশুল্ক বাধা, অবকাঠামোসহ উপযুক্ত পরিবেশ না থাকা ও আস্থার সংকট।
চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের ফলে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে এ সংকটকে সুযোগের আদলে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ব্যবসা বিনিয়োগ চাঙা করছে পৃথিবীর অনেক দেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতিও স্মরণকালের সংকটকাল অতিক্রম করছে।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। যার প্রথম কিস্তি ইতোমধ্যে ছাড়ও করেছে সংস্থাটি। কিস্তি ছাড়ের পর দেশের অর্থনীতি ও এই ঋণ প্রসঙ্গে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আইএমএফ।
ওই প্রতিবেদনের ১৭ পৃষ্ঠায় বাংলাদেশের অর্থনীতির কয়েকটি ঝুঁকি ও সমস্যার কথা উঠে এসেছে। এ ছাড়া দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের (এফডিআই) ক্ষেত্রে তিনটি প্রধান বাধাও চিহ্নিত করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব বাধা রয়েছে তার মধ্যে তিনটি হলো- উচ্চ শুল্ক-অশুল্ক বাধা, অবকাঠামোসহ উপযুক্ত পরিবেশ না থাকা ও আস্থার সংকট। ফলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ কৃষি উৎপাদন বাড়লেও শিল্প উৎপাদনে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। এমনকি বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে খুবই হতাশাজনক অবস্থা বিরাজ করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয় : যে কোনো দেশের বিনিয়োগ বাড়াতে একটি সুষ্ঠু ও উপযুক্ত পরিবেশ এর পূর্বশর্ত; যা বৈদেশিক বাণিজ্যকে প্রসারিত করে। একই সঙ্গে এফডিআই আকর্ষণ করতে সাহায্য করে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ পরিবেশ উপযুক্ত নয়।
এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে নেওয়া অর্থনৈতিক পদক্ষেপগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও এফডিআইয়ের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ পদক্ষেপই তুলনামূলক কম উপযুক্ত। একইভাবে এখানে উচ্চশল্ক ও অশুল্ক বাধা রয়েছে। যেগুলো হ্রাস করা খুবই জরুরি।
এমনকি এক দশক ধরে অবকাঠামো খাতে সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করলেও উপযুক্ত অবকাঠামো এখনো নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ-জ্বালানির চাহিদার সঙ্গে সরবরাহের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে রাজনৈতিক ও পুঁজির অনিশ্চয়তা; যার ফলে বিনিয়োগকারীরা আস্থার সংকটে ভোগেন বলে মনে করে আইএমএফ।
এতে আরও বলা হয় : এখানে শাসন??ব্যবস্থার উন্নতি এবং দুর্নীতি কমাতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। এ ছাড়া ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করা সম্ভব নয়। এভাবে বিনিয়োগ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। আর্থিক শাসন ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধির জন্য আর্থিক খাতের সরকারের নজরদারি বাড়াতে হবে। বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য সরকারি সেবা খাতগুলোর উন্নয়ন ও সরকারি পরিষেবাগুলোর আরও ডিজিটালাইজেশন এবং বিরোধীদের স্বাধীনতা রক্ষা করাও জরুরি। এতে দুর্নীতি কমিশনকে আরও কার্যকর এবং কম্পট্রোলার অডিটর জেনারেল স্বচ্ছতা বাড়াতে হবে।
এদিকে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০২২ সালের প্রথম ছয় মাসে পুঞ্জীভূত এফডিআই কমেছে ৫ শতাংশ। অথচ এ সময়ে ভারত এবং মিয়ানমারের মতো দেশও বিদেশি বিনিয়োগ টানতে বেশ কার্যকর স্বাক্ষর রেখেছে; যার ফলে এসব দেশের উৎপাদন বাড়ছে।
বিশেষ করে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রযুক্তি স্থানান্তর ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে থাকে এফডিআই। এক যুগের বেশি সময় আগে ২০০৯-এর শুরুতে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের সময় দেশে মোট পুঞ্জীভূত এফডিআই (এফডিআই স্টক) ছিল প্রায় ৪৮২ কোটি ডলার; যা ২০২১ সালের শেষে প্রথমবারের মতো ২১ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করে।
ওই সময় এফডিআইয়ের স্টক দাঁড়ায় ২ হাজার ১৫৮ কোটি ১৯ লাখ ডলারে। সেখান থেকে প্রায় ৫ শতাংশ বা ১০৭ কোটি ৮৩ লাখ ডলার কমে ২০২২ সালের প্রথমার্ধ শেষে দেশে এফডিআইয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ৫০ কোটি ৩৫ লাখ ডলারে।
এদিকে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের প্রভাবে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে অব্যাহতভাবে। ফলে দেশে ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ; যার অন্যতম কারণ হলো কাক্সিক্ষত হারে বিদেশি বিনিয়োগ না আসা।
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবেদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘একটি দেশের বিনিয়োগের পরিবেশ যতটা উন্নত হবে সেখানে তত বেশি বিনিয়োগ আসবে। এ ছাড়া বিনিয়োগকারীরা সবার আগে চায় পুঁজির নিশ্চয়তা এবং রিটার্ন যাকে বলা হয় লাভ। এর কোনোটারই নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারি না।’
যার ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এলেও পরে ফেরত চলে যান বলে তিনি মনে করেন।