বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৫
28 Aug 2025 03:09 pm
![]() |
ইন্দুরকানী (পিরোজপুর) প্রতিনিধিঃ-পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে ‘সহকারী ডাক্তার’ পরিচয়ে চলছে মাতৃসেবা ক্লিনিকের রমরমা ব্যবসা।অভিযোগ উঠেছে, গর্ভবতী মায়েদের ভয়ভীতি দেখিয়ে অযথা সিজার করিয়ে অপারেশনের নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ভুয়া চিকিৎসকরা।সম্প্রতি এমন এক ঘটনার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।উপজেলার দক্ষিণ ইন্দুরকানী গ্রামের মুন্নি আক্তারকে চেকআপের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে সিনিয়র নার্স শিবানী তাকে পাশের মাতৃসেবা ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানে ক্লিনিকের মালিক রাজিব রায় নিজেকে সহকারী ডাক্তার পরিচয় দিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাম করেন এবং জানান— ‘অবিলম্বে সিজার না করলে মা ও শিশুর জীবন ঝুঁকির মুখে পড়বে।’
তবে রোগীর ভাই লিমন জানান, অন্যান্য ডাক্তাররা বলেছিলেন প্রসবের এখনও সময় আছে। পরে তারা দ্রুত পিরোজপুর কেয়ার ফাস্ট ক্লিনিকে ডাক্তার আব্দুল মতিনের কাছে যান। কিন্তু সেখানে সিজার না করায় মতিন রোগী দেখতে অস্বীকার করেন। শেষমেশ তারা মুসলিম এইড হাসপাতালে গেলে চিকিৎসকরা জানান, মা ও শিশু দুজনই সুস্থ আছেন এবং প্রসবের জন্য অন্তত এক মাস সময় বাকি। পরদিন গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. ফারজানা রহমানও একই রিপোর্ট দেন।
রোগীর ভাই লিমন বলেন, ‘আমরা সচেতন ছিলাম বলে বেঁচে গেছি। কিন্তু প্রতিদিন সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে সিজারের নামে প্রতারণা চলছে।’স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজিব রায় নিয়মিত নিজেকে ডাক্তার পরিচয়ে রোগী পরীক্ষা করেন। পরে ডাক্তার আব্দুল মতিনকে ডেকে এনে সিজার করান। এ ক্লিনিকে কোনো এনেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞ নেই। অভিযোগ আছে, অতীতে সিজারের পর রোগী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে, যা প্রভাবশালীদের প্রভাবে ধামাচাপা দেওয়া হয়।
এছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কিছু নার্স ও কর্মচারী দালালি করে রোগী ভাগিয়ে ক্লিনিকে নেন। প্রতিটি সিজারের বিপরীতে তারা ২-৩ হাজার টাকা কমিশন পান বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ইন্দুরকানী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ননী গোপাল বলেন, ‘আমার কোনো স্টাফ যদি দালালি করে তবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর ক্লিনিক মনিটরিংয়ের দায়িত্ব সিভিল সার্জনের।’
অভিযুক্ত ডাক্তার আব্দুল মতিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এসব আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার।’অন্যদিকে রাজিব রায় দাবি করেন, ‘আমি শুধু চেকআপ করেছি। অপারেশনের জন্য চাপ দিইনি।’
পিরোজপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. মতিয়ার রহমান জানান, ‘ক্লিনিকগুলো নিয়ম মেনে না চললে প্রয়োজনে বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
সার্বিকভাবে, ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সাধারণ মানুষ মনে করছেন, যথাযথ মনিটরিং ও আইন প্রয়োগ না হলে এ ধরনের প্রতারণা বন্ধ হবে না।