বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট, ২০২৫
21 Aug 2025 05:10 pm
![]() |
আবু ইউসুফ নওগাঁ প্রতিনিধি:- নওগাঁর পোরশায় জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে ট্রিপল হত্যা মামলায় ৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদেরকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এ মামালার ৮ জন আসামীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা, অর্থদণ্ড এবং ৪ জন আসামীকে খালাস প্রদান করেছেন আদালত।
বুধবার (৬ আগস্ট) দুপুর ১ টার দিকে নওগাঁ অতিরিক্ত দায়রা জজ প্রথম আদালত এবং স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মোহাম্মদ ফেরদৌস ওয়াহিদ এ রায় ঘোষণা করেন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিষয়টি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও নওগাঁ অতিরিক্ত দায়রা জজ প্রথম আদালত এবং স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-২ এর অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) সাব্বির আহমেদ নিশ্চিত করেছেন।
রায়ে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, ফজলুর রহমানের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক, সাজেমান আলীর ছেলে আমির আলী এবং হাসেন আলীর ছেলে আব্দুল কাদির ওরফে কাদের। তাদের সকলের বাড়ি নওগাঁর পোরশা উপজেলার কালাইবাড়ি গ্রামে।
এ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত অন্য আসামীরা হলেন, আবু বক্কর সিদ্দিক এর ছেলে দুরুল হুদা, ফজলুর রহমানের ছেলে আলিম ওরফে আলম, ইসমাইল হোসেনের ছেলে আবুল কাশেম এবং ফজলুর রহমানের ছেলে ওয়াজেদ আলী তাদের প্রত্যেককে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড একই সঙ্গে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
এছাড়া এ মামলায় আরও, আব্দুস সামাদের ছেলে তরিকুল ইসলাম, ফজলুর রহমানের ছেলে রেজাউল করিম এবং আবুল কালামকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আদালতের রায়ে খালাস প্রাপ্তরা হলেন, মোসা: মরিয়ম বিবি,কামেলা বেগম, কহিনুর বেগম এবং রফিকুল ইসলাম। এছাড়া এ মামালার ২ আসামী আবু বক্কর সিদ্দিক এবং দুরুল হুদা পলাতক রয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালের ৩০ আগস্ট পোরশা উপজেলার কালাইবাড়ি গ্রামের কৃষক আব্দুস সামাদ তার আম বাগানে কাজ করছিলেন। আনুমানিক সকাল ৭ টার দিকে ২০-২৫ জন তার আম বাগানে এসে অবৈধভাবে জায়গা দখলে নিতে চায় এবং কিছু আম গাছ উপড়িয়ে ফেলে৷ এ সময় আব্দুস সামাদের স্ত্রী, ছেলে, ভাই এবং বোনেরা এগিয়ে আসলে মামলার আসামীরা তাদের ওপর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়।এতে ঘটনাস্থলেই কয়েকজন গুরুতর আহত হয়।
স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে পোরশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রথমে ৩ জন এবং পরে আরও ৫ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আব্দুস সামাদের ভাই শফিকুল ইসলাম, বোন সেলিনা এবং তার মেয়ে নার্গিস নিহত হন।এ ঘটনায় আব্দুস সামাদ ২০০৩ সালের ৩০ আগস্ট পোরশা থানায় বাদী হয়ে ২৬ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রায় দীর্ঘ ২ যুগ ধরে চলা এ মামলায় ২০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত ৩ জনকে যাবজ্জীবন এবং ৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও অর্থদণ্ড দেন।
এছাড়াও মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ৪ জন আসামিকে আদালত খালাস প্রদান করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
মামলার এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাব্বির আহমেদ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং আসামী পক্ষের আইনজীবী তাজরিন নাহার উচ্চ আদালতে রায়ের পক্ষে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।