বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫
01 Aug 2025 12:45 am
![]() |
৭১ভিশন ডেস্ক:- জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ একাধিক বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তবে, এখনো কিছু বিষয়ে আলোচনা বাকি রয়েছে, যেগুলো আগামীকাল ৩১ জুলাই চূড়ান্ত করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বুধবার (৩০ জুলাই ) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত সংলাপের ২২তম দিনের আলোচনা শেষে তিনি এ কথা জানান।
তিনি বলেন, আজকের আলোচনায় জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। প্রায় সব দল একমত হয়েছে যে জাতীয় সংসদে নারী আসনের সংখ্যা পর্যায়ক্রমে ১০০-তে উন্নীত করা হবে। যদিও কয়েকটি দল ভিন্নমত বা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে, তবুও অধিকাংশ দলের মধ্যে এ বিষয়ে একটি কার্যকর ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
নারী প্রতিনিধিত্ব বিষয়ে সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে বর্তমান ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন বহাল রেখে সংবিধানের ৬৫(৩) অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হবে। জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে ন্যূনতম ৫ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে দলগুলো ন্যূনতম ১০ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেবে- এই প্রত্যাশা সংবিধানে যুক্ত হবে। ৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থিতার লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত প্রতি নির্বাচনে নারী প্রার্থীর হার ৫% করে বাড়াতে হবে। সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনীর ফলে সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ ২০৪৩ সাল পর্যন্ত বহাল থাকবে, তবে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বের লক্ষ্য আগেই অর্জিত হলে এই বিধান বাতিল করা হবে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, আমরা আজ রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব নিয়ে একটি ধারণাপত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে দিয়েছি। বর্তমানে সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ব্যতিরেকে কেবল দুটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন—প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা নিয়োগ। তবে আমরা প্রস্তাব করেছি যে, আরও কিছু নিয়োগে রাষ্ট্রপতির স্বাধীন ক্ষমতা থাকা উচিত।
এই প্রস্তাবিত নিয়োগের মধ্যে আছে, অ্যাটর্নি জেনারেল, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য, তত্ত্ব কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য, টেলিকম নিয়ন্ত্রক কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধান, এবং ডিজিএফআই ও এনএসআই মহাপরিচালক।
তিনি জানান, এই প্রস্তাবগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর বিবেচনার জন্য দেওয়া হয়েছে। যদি এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়, তাহলে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তা কার্যকর করতে হবে।
বৈঠকের একপর্যায়ে কমিশনের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনুসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা হয় এবং আলোচনার অগ্রগতি ও মতভেদগুলো তাকে জানানো হয়।
অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, আগামীকাল ৩১ জুলাই আমাদের লক্ষ্য হলো জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলোতে পূর্ণাঙ্গ ঐক্যমত অর্জন। ইতোমধ্যে ১৪টি বিষয়ে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমতে পৌঁছেছি, যার মধ্যে নারী আসন বিষয়ে সিদ্ধান্ত অন্যতম। রাজনৈতিক দলগুলোকে আমরা লিখিত সংশোধনী ও সংযোজনীর তালিকা দিতে বলেছিলাম, অনেকেই ইতোমধ্যে তা দিয়েছে। আগামীকাল কমিশন তা পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সংশোধনী গৃহীত করবে।
তিনি আরও জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও উচ্চপদে নিয়োগ সম্পর্কিত বিষয়ে কমিশনকেই সিদ্ধান্ত দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা আগামীকাল সে বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান জানাব।
সংলাপের এ পর্যায়ে কমিশন এবং রাজনৈতিক দল উভয় পক্ষই সমঝোতার মাধ্যমে একটি সর্বজনস্বীকৃত জাতীয় সনদ প্রণয়নের পথে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রথম পর্যায়ের আলেচনায় যেসব বিষয়ে ঐক্যমত্য হয়েছে সে বিষয়ে আমরা একটি কপি রাজনৈতিক দলগুলোকে হস্তান্তর করেছি। আশা করি কোনো সংযোজন বিয়োজন থাকলে রাজনৈতিক দলগুলো কালকের মধ্যে জানাবেন কমিশনকে।