মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫
30 Jul 2025 03:55 am
![]() |
প্রেস বিজ্ঞপ্তি:-জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২৩ জুলাই ২০২৪ তারিখের প্রজ্ঞাপন ও ২১ জুলাই ২০২৪ তারিখের সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আইনত, প্রশাসনিক এবং আন্তর্জাতিকভাবে বেআইনি ও বৈধতা-পরিপন্থী হওয়ায় রেলওয়ের নিয়োগে পোষ্য কোটা বিলুপ্তির প্রস্তাব বাতিলের দাবি জানিয়ে রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বাংলাদেশ রেলওয়ে মহাপরিচালক বরাবরে আবেদন করে বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ মনিরুজ্জামান মনির স্বাক্ষরিত আবেদন পত্রে সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, রেলওয়ের পোষ্য কোটার ইতিহাস, অধিকার ও ন্যায়ের অনিবার্যতা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা না করে রেলওয়ে কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা ২০২০ সংশোধন কমিটি সংশোধিত খসড়া বিধিমালায় বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রস্তাবিত “নন-গেজেটেড কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা ২০২৪” এর বিধিতে পোষ্য কোটা সংক্রান্ত বিধান [বিধি ৩(৩)] বিলুপ্তির প্রস্তাব পাঠিয়েছেন বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিধি-১ শাখা উপসচিব শেখ মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন স্বাক্ষরিত ১২ মার্চ ২০২৫ তারিখের পত্রের মাধ্যমে জানতে পারি। আমরা মনে করি, ৭৫ বছরের পুরনো মানবিক ও সাংবিধানিক ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পোষ্য কোটা বাতিল নয়, বরং সংরক্ষণ ও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ সময়ের দাবি।
১. প্রেক্ষাপট ও বিষয়বস্তুর প্রাসঙ্গিকতা
২১ জুলাই ২০২৪: সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সরকারি নিয়োগে কোটা পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত একটি ঐতিহাসিক রায় দেন—যেখানে ৯৩% মেধাভিত্তিক ও ৭% কোটা (মুক্তিযোদ্ধা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও তৃতীয় লিঙ্গ) সংরক্ষণের নির্দেশ প্রদান করা হয়।
২৩ জুলাই ২০২৪: জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই রায়ের প্রেক্ষিতে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে এবং পূর্ববর্তী সকল কোটা সংক্রান্ত আদেশ বাতিল করে। কিন্তু এই প্রজ্ঞাপনকে রেলওয়ের পোষ্য কোটা বাতিলের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বেআইনি, নীতিবিরোধী ও সংবিধান পরিপন্থী। কারণ রেলওয়ের পোষ্য কোটা একটি পৃথক ও অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা কাঠামোর অংশ, যা এই রায়ের আওতায় পড়ে না।
২. রেলওয়ে পোষ্য কোটা: ব্যাকগ্রাউন্ড ও স্বকীয়তা
২.১ রেলওয়ের স্বতন্ত্র নিয়োগ কাঠামো
* বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি বিশেষায়িত কারিগরি ও স্টেট-মেইনটেইনড সংস্থা।
* বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে নিজস্ব নিয়োগ বিধিমালা অনুসারে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে জনবল নিয়োগ করে আসছে।
* এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পোষ্য কোটা একটি ডিপার্টমেন্টাল সোশ্যাল সিকিউরিটি ব্যবস্থা, যা প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরির কেন্দ্রীয় কাঠামোর আওতায় পড়ে না।
২.২ পোষ্য কোটা মানে কী?
* এই কোটা শুধুমাত্র রেলওয়ে কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য প্রযোজ্য, যারা একটি কর্মজীবনের পুরোটা ঝুঁকিপূর্ণ, অসুস্থতা ও মৃত্যুর মুখে কাটিয়ে যান।
* এটি মূলত কম্পেনসেটরি কোটা বা ইমপ্লয়মেন্ট-বেসড অ্যাফারমেটিভ অ্যাকশন, যার উদ্দেশ্য কর্মচারীর পরিবারকে সুরক্ষা ও পুনর্বাসন।
৩. আইন ও সংবিধানের দৃষ্টিকোণ
৩.১ সংবিধানিক বৈধতা
বাংলাদেশ সংবিধান, অনুচ্ছেদ ২৮(৪): “রাষ্ট্র অনগ্রসর শ্রেণির জন্য বিশেষ বিধান করতে পারবে।”
অনুচ্ছেদ ২৯(৩): “কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সুযোগে বৈষম্য না করে অনগ্রসর বা সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণির জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা যাবে।”
পোষ্য কোটা সরাসরি এই মানবিক ও সাংবিধানিক অনুমোদনের মধ্যে পড়ে।
৩.২ প্রশাসনিক আইনের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন কেবলমাত্র সেসব প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা ব্যবহারে প্রযোজ্য, যারা জনপ্রশাসন বিধি ২০১৮ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বাংলাদেশ রেলওয়ে নিজস্ব নিয়োগ বিধিমালার আওতায়, সরকারি কর্মচারী (নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি) বিধিমালা, ২০১৮ এর আওতাধীন নয়।
অতএব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন রেলওয়ের পোষ্য কোটার উপর বলবৎ নয়।
৪. আদালতের রায়ের প্রশাসনিক ব্যাখ্যা
হাইকোর্টের রায়: “ড্রাফট রুলস ক্যাননট বি অ্যাপ্লাইড”
২৭ ডিসেম্বর ২০২১ সালে রেলওয়ে কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা ২০২০ সংশোধনের জন্য গঠিত ১৮ সদস্যের সংশোধনী কমিটি এখনও পর্যন্ত গেজেটভিত্তিক বা মন্ত্রিপরিষদ অনুমোদিত কোনো চূড়ান্ত বিধিমালা প্রকাশ করেনি। অথচ “সংশোধনাধীন” বিধিমালার ভিত্তিতে প্রায় ৭০০০ জন নিয়োগ পেয়েছেন যা হাইকোর্টের মতে “ইলিগ্যালি আনটেনেবল এন্ড ভায়োডেবল”।
সুপ্রিম কোর্টের রায় ও প্রশাসনিক ব্যাখ্যা
আপিল বিভাগের রায় ও জনপ্রশাসনের প্রজ্ঞাপনে রেলওয়ের পোষ্য কোটার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। রায়টি কেবল কেন্দ্রীয় নিয়োগ কাঠামোর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে প্রযোজ্য। রেলওয়ের অভ্যন্তরীণ কোটা ব্যবস্থা এর আওতার বাইরে।
৫. আন্তর্জাতিক রেফারেন্স ও তুলনামূলক আইন
৫.১ ভারত:
ভারতের রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ড (আরআরবি)-এ কমপ্যাশনেট অ্যাপয়নমেন্টস নামে একটি সিস্টেম রয়েছে, যেখানে মৃত্যু, অবসর বা দুর্ঘটনায় কর্মচারীর সন্তান বা স্ত্রীকে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হয়। এটি কন্সটিটিউশনাল অ্যাফারমেটিভ পলিসি হিসেবে স্বীকৃত।
৫.২ যুক্তরাজ্য (ইউকে সিভিল সার্ভিস):
ইউকে সিভিল সার্ভিস-এ ফ্যামিলি হার্ডশিপ কনসিডারেশন আছে, যা প্রয়াত কর্মচারীর পরিবারকে বিশেষ সুবিধা দেয়। এটি “ডিউটি অব কেয়ার” নামে বিবেচিত হয়।
৫.৩ আইএলও (ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন):
আইএলও-এর রিকমেন্ডেশন নং-২০২ অনুযায়ী, আনভালনারেবল ওয়ার্কার্স ফ্যামিলিজ-এর জন্য রাষ্ট্রীয় সহায়তা ও টার্গেটেড ইমপ্লয়মেন্ট মেজার্স রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
অতএব, রেলওয়ের পোষ্য কোটা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবিক এবং আইনগত ন্যায্যতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
৬. বিভ্রান্তি নিরসনে প্রশাসনিক নির্দেশনার দাবি
অবিলম্বে একটি ব্যাখ্যামূলক বিজ্ঞপ্তি জারি করুন, যাতে স্পষ্ট হয় যে ২৩ জুলাই ২০২৪-এর প্রজ্ঞাপন রেলওয়ের পোষ্য কোটা বাতিলের ভিত্তি হতে পারে না। বিভ্রান্তিকর পত্র ও দাপ্তরিক আদেশগুলো প্রত্যাহার করুন। পোষ্য কোটা সংরক্ষণের বিষয়ে একটি স্মারক ও সার্কুলার জারি করুন।
৩. বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী নির্দেশনা প্রত্যাহার করুন:
বাংলাদেশ রেলওয়ের পোষ্য কোটা আইনি, সাংবিধানিক, প্রশাসনিক এবং আন্তর্জাতিকভাবে একটি বৈধ, মানবিক ও দায়িত্বশীল নীতি।
এটি কোনো মুক্তিযোদ্ধা কোটা, রাজনৈতিক কোটা, কিংবা অস্থায়ী নিয়োগ ব্যবস্থা নয়—বরং এটি একটি ইন্সটিটিউশনাল অবলিগেশন এন্ড রিপারেশন ফ্রেমওয়ার্ক। অতএব, এই কোটাকে বাতিল করার যেকোনো প্রয়াস হবে:
* প্রশাসনিক সীমালঙ্ঘন
* সংবিধানের ২৮(৪) ও ২৯(৩) এর লঙ্ঘন
* রেলওয়ে বিধিমালার পরিপন্থী আচরণ এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বিরুদ্ধ
তাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে রেলওয়ে পোষ্য কোটা বাতিলের অপচেষ্টা অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানাই।
আবেদনপত্র বলা হয়, এই মুহূর্তে আপনার একটি সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র একটি বিধিমালার প্রশ্ন নয়—এটি একটি প্রজন্মের অধিকার, রেলওয়ে কর্মীদের আত্মত্যাগের মূল্যায়ন, এবং রাষ্ট্রের প্রতি জনগণের আস্থার প্রশ্ন। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আপনি ন্যায়, সংবিধান ও মানবিক দায়বদ্ধতার পক্ষে অবস্থান নিয়ে রেলওয়ে পোষ্য কোটা বিলুপ্তির প্রস্তাব বাতিল এবং সাংগঠনিকভাবে সংরক্ষণ ও পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবেন।
আবেদনপত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ের পোষ্য কোটা সংরক্ষণের বিষয়টি আইনানুগ, সংবিধানসম্মত ও নৈতিক যুক্তিনির্ভর হওয়ায় পোষ্য কোটা বিলুপ্তির প্রস্তাবটি বাতিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে রেল সচিব ও রেলওয়ে মহাপরিচালকের সহযোগিতা কামনা করা হয়।
বার্তাপ্রেরক,(মোঃ আলমগীর সরকার)দপ্তর সম্পাদক,বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি