সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫
28 Jul 2025 09:35 am
![]() |
সাকলাইন যোবায়ের,জেলা প্রতিনিধি,কুমিল্লা:-মোহাম্মদ সুলতান মিয়া বয়স ৬৫ বছর। ফজর নামাজ পড়ে কাঁক ডাকা ভোরে সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পরেন পত্রিকা সংগ্রহ করে তা সময়মত পাঠকের হাতে হাতে পৌঁছে দেয়ার জন্য। গ্রীষ্মের প্রখর রোদ, মাঘের হাড় কাঁপানো শীত ও অন্ধকারাচ্ছন্ন তীব্র কুয়াশা এবং বর্ষা মৌসুমের অবিরাম বৃষ্টির মধ্যে এমনকি কাল বৈশাখীর ঝড়সহ প্রাকৃতিক পরিবেশ যে রকমই হোক না কেন সাইকেলের পিছনে পত্রিকার স্তূপ আর সামনে একটি রড় ব্যাগ নিয়ে কুমিল্লার পাঠকদের হাতে হাতে পত্রিকা পৌঁছে দেন সুলতান মিয়া। মানুষের কাছে পত্রিকা পৌঁছে দেয়া তার পেশা ও নেশায় পরিনত হয়েছে বলে জানান তিনি ।
রোববার (২৭ জুলাই) সকালে এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় মোঃ সুলতান মিয়ার। তিনি জানান ১৯৮১ সাল থেকে আমি ২০২৫ পর্যন্ত দীর্ঘ ৪৪ বছর যাবত পাঠকদের বাসা-বাড়ি, দোকান-পাট, অফিস আদালতসহ বিভিন্ন পাড়া মহল্লার অলি-গলিতে কুমিল্লার পাঠকদের হাতে সময়মত প্রত্রিকা পৌঁছানোর চেষ্টা করি। স্ত্রী দুই ছেলে ও তিন মেয়ের সংসার তার।
কুমিল্লার আদর্শ সদরের ঝাকুনি পাড়ায় বসবাস করেন তিনি। মোঃ সুলতান মিয়া নিজে বেশি শিক্ষিত না হলেও মানুষের কাছে পত্রিকা পৌঁছে দিয়ে ছেলে মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। বড় ছেলে হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল কামেল পাস । দ্বিতীয় ছেলে হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ আবু মুসা কামেল পাস করেছে। বতর্মানে আমার দুই ছেলেই মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছে।সুলতান মিয়া বলেন, আমার তিন মেয়ে।তিন জনই মাদ্রাসা থেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত। বড় মেয়ে মোসাম্মৎ আমেনা খাতুন মাদ্রাসা থেকে টাইটেল পাস করেছে, মেঝ মেয়ে মোসাম্মৎ আয়েশা বেগম মাদ্রাসা টাইটেল পাস করেছে এবং ছোট মেয়ে মোসাম্মৎ ফাতেমা বেগমও
মাদ্রাসা থেকে টাইটেল পাস করেছে।মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অক্লান্ত পরিশ্রম করেও পাঠকের হাতে পত্রিকা পৌঁছে দেয়ার সময় সদা হাস্যোজ্জ্বল ব্যবহার করেন সুলতান মিয়া ।
সুলতান মিয়া আফসোস করে করে এ প্রতিবেদককে বলেন এত বছর পত্রিকা মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেই ঠিকই কিন্তু আজ পর্যন্ত পত্রিকায় নিজের কোন ছবি উঠলো না।
মোহাম্মদ সুলতান মিয়া জানান, এখন বয়স হয়েছে তারপরও এই কাজটিকে নিজের সন্তানদের মত ভালবেসেছি তাই করে যাচ্ছি। আল্লাহ বাচিয়ে রাখলে যত বছর শরীরে শক্তি সামর্থ্য থাকবে ততোদিন পাঠকদের কাছে পত্রিকা পৌঁছে দিয়ে সেবা করে যাব।
সুলতান মিয়া বলেন,পত্রিকা বিলি করে ৫ ছেলে মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছি। তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি এবং বড় ছেলেকে বিয়ে করিয়েছি। কুমিল্লা আদর্শ সদরের ঝাকুনি পাড়ায় ৪ গন্ডা জায়গা কিনে টিনশেড বিল্ডিং করেছি।
সুলতান মিয়া থেকে প্রায় ২২ বছর যাবত পত্রিকা রাখেন কুমিল্লার আরেফে রাব্বানী শাহ্ আবদুস্ সোবহান রিসার্চ সোসাইটি নামের একটি সংগঠন। ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত মোর্শেদ খান বুলবুল জানান, আমাদের সংগঠনের কার্যালয়ে ওনি পত্রিকা দিয়ে যান। যত ঝড় বৃষ্টি হোক না কেন তিনি নিয়মিত পত্রিকা দিয়ে পৌঁছে দেন। দেখলে প্রথমে হাস্যোজ্বল মুখে সালাম দেন তারপর পত্রিকা দেন।ওনার মুখে কখনো বিরক্তির ছাপ দেখিনি।