শুক্রবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৫
13 Apr 2025 02:36 am
![]() |
আবু ইউসুফ নওগাঁ প্রতিনিধি: বসন্তের আগমনে নওগাঁর প্রতিটি আম বাগান এবছর মুকুলের স্নিগ্ধ সৌরভে মোড়ানো ছিলো। গেলো কয়েকবছরের তুলনায় বাগানগুলোতে এবছর মুকুল এসেছিল সবচেয়ে বেশি। উচ্চ ফলনের স্বপ্ন বুনেছিলেন কৃষকরা। কিন্তু গত ১৫ দিনের ব্যবধানে নওগাঁর প্রায় ৭৫-৮০ শতাংশ বাগানের মুকুল নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে ৭০-৮০ শতাংশ বাগানে এখন গতবছরের তুলনায় আম নেই বললেই চলে । উকুন পোকা, তীব্র খরা এবং আবহাওয়া জনিত কিছু সমস্যার কারণেই বাগান গুলোর এমন পরিস্থিতি হয়েছে বলে মনে করছেন কৃষকরা। বাগানের এমন পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন আম চাষিরা।
নওগাঁর অধিকাংশ আম উৎপাদন হয় পোরশা, সাপাহার, পত্নীতলা এবং নিয়ামতপুর উপজেলায়। সম্প্রতি পোরশা, সাপাহার এবং পত্নীতলার আম বাগান গুলো ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ বাগানের মুকুল নষ্ট হয়ে গেছে। বাগানের ৮০ শতাংশ গাছেই কাঙ্ক্ষিত পরিমান আমের দেখা মিলছেনা। গত মৌসুমের তুলনায় বাগানগুলোতে এবছর ১০-১৫ শতাংশ আম রয়েছে। এই পরিমাণ আমে উৎপাদ খরচ উঠানোই কষ্টকর হয়ে যাবে বলে মনে করছেন এ জেলার কৃষকরা।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় এ বছর ৩০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির বগানে আমের চাষ হয়েছে। যা থেকে উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ৪ লাখ ৫০ হাজার টন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। গত বছর জেলায় ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছিল, যা থেকে উৎপাদন হয়েছিল ৪ লাখ ২৫ হাজার টন। গেল বছরের তুলনায় জেলায় এ বছর ২০০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে।
নওগাঁর সাপাহার উপজেলার তিলনা ইউনিয়নের বাদ-দমদমা গ্রামের আম চাষি মফিজুল ইসলাম বলেন, নিজস্ব ৮ বিঘা জমিতে আম বাগান রয়েছে। এবছর এখন পর্যন্ত কোন বৃষ্টিপাত নেই। যার কারনে উকুন পোকার আক্রমণ অনেক বেশি। বাগানে কীটনাশক স্প্রে করেও পোকা তাড়ানো যাচ্ছে না। গতবছর বাগান থেকে আম বিক্রি করে সাড়ে ৬ লক্ষ টাকার মতো পয়েছিলাম। শ্রমিক, কীটনাশক,পরিবহন এবং সেচ খরচসহ গতবছর প্রায় ৩ লক্ষ টাকার মতো খরচ হয়েছিলো। এবছর তীব্র তাপদাহের কারনে অধিকাংশ মুকুল ই ঝরে গেছে। গতবারের তুলনায় বাগানে এ বছর আমের পরিমাণ অনেক কম। কিন্তু খরচ গতবছরের মতোই হবে। খরচ উঠাইতে পারবো কিনা এ নিয়ে শঙ্কায় আছি।
পোরশা উপজেলার গাঙ্গুরিয়া ইউনিয়নের চাচাইবাড়ী গ্রামের আম চাষি মতিউর রহমান বলেন, নিজস্ব ৯ বিঘা জমিতে আম্রপালি আমের বাগান রয়েছে। এবছরের মতো উকুন পোকা আগে কখনোই দেখিনাই। ৯ বিঘা বাগানে এখন পর্যন্ত কীটনাশক এবং অন্যান্য খরচ মিলায়ে প্রায় দেঁড় লক্ষ টাকার মতো খরচ হয়েছে। বাগানের এই পরিস্থিতি দেখে খুব হতাশার মধ্যে আছি। আম উঠানোর আগ পর্যন্ত এখনো অনেক খরচ হবে। এই পরিমান আম দিয়ে খরচের টাকা উঠানোই কষ্টকর হয়ে যাবে।
জেলার সপাহার উপজেলার বাহাপুর গ্রামের আম চাষি রাকিব হাসান বলেন, বাগানে গতবছরের তুলনায় আম নেই বললেই চলে। এবছর যে মুকুল গুলো প্রথম দিকে এসেছিলো সেগুলোতে শুধু আম হয়েছে। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ের মুকুলের সকল আম তাপমাত্রার কারনে ঝরে গেছে। গতবারের থেকে এবছর ফলন কম হবে।
এ বিষয়ে নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন,গতবছর মার্চ মাসে যে তাপমাত্রা ছিলো তার থেকে এবছর মার্চ মাসে তাপমাত্রা কম ছিলো। আর বছররের এই সময়টাতে তাপমাত্রা একটু বেড়েই থাকে।মুকুলের সংখ্যা বেশি হওয়ায় আমের গুটির পরিমান বেশি তাই ঝরে পড়ে যাচ্ছে। বাগানে যে আম রয়েছে তাতে উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ব্যহত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।