বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
07 Feb 2025 04:17 am
আবু ইউসুফ নওগাঁ প্রতিনিধিঃ নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে আজ বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) এক বর্ণাঢ্য পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো পিঠা উৎসব। দেশীয় সংস্কৃতি চর্চার লক্ষ্যে আয়োজিত এই উৎসব শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সুদৃঢ় করার পাশাপাশি বাঙালির ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ হাতে তৈরি পিঠা প্রদর্শন ও বিক্রির সুযোগ পান, যা তাদের সৃজনশীলতা ও উদ্যোক্তা দক্ষতার প্রকাশ ঘটায়।
নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এই উৎসবে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, সিভিল টেকনোলজি, আর্কিটেকচার টেকনোলজি, ফুড টেকনোলজি এবং এনভায়রনমেন্টাল টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব পিঠা প্রস্তুত করেন ও উৎসবে দর্শনার্থীদের মাঝে পরিবেশন করেন। প্রতিটি বিভাগ তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও সৃজনশীলতা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার পিঠা তৈরি করে, যা উৎসবে এক অনন্য মাত্রা যোগ করে।
উৎসবে ছিল বিভিন্ন প্রকারের সুস্বাদু পিঠার সমাহার, যার মধ্যে জনপ্রিয় পিঠাগুলো হলো- কাপ কেক, দুধ নাড়ু, কুমড়া সুন্দরী, কালো জাম, নাগীন পিঠা, জিলাপির প্যাঁচ, পাটিসাপটা, জামাই পিঠা, পুলি পিঠা, মিষ্টি পুলি, চিড়া পিঠা, দুধ চিতই, নারকেল সন্দেশ, খেজুর গুড়ের রসে ডোবানো চিতই পিঠা, তিল পিঠা প্রভৃতি। পিঠার এসব ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ ও বৈচিত্র্য দর্শনার্থীদের মাঝে ব্যাপক উচ্ছ্বাস তৈরি করে।
উৎসবে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা জানান, “পিঠা আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। আমরা চেষ্টা করেছি আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির স্বাদ তুলে ধরার। এই উৎসবের মাধ্যমে আমরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পিঠার বৈচিত্র্যকে একত্রিত করেছি।” তারা আরও বলেন, “এ ধরনের উৎসব কেবলমাত্র খাবার নিয়ে নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও সামাজিক সম্পর্ক দৃঢ় করার একটি মাধ্যম।”
একজন শিক্ষার্থী বলেন, “প্রথমবারের মতো পিঠা বানিয়ে পরিবেশন করলাম। এটা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের ছিল। পাশাপাশি নিজের তৈরি পিঠা অন্যরা উপভোগ করছে, এটি আমাদের আত্মবিশ্বাসও বাড়িয়েছে।”
শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, পিঠা উৎসবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক, অভিভাবক এবং স্থানীয় বাসিন্দারাও। স্থানীয় দর্শনার্থীরা উৎসবের আয়োজনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। একজন শিক্ষক বলেন, “এমন সাংস্কৃতিক আয়োজন আমাদের দেশের ঐতিহ্যকে আরও প্রগাঢ় করে। আমি বেশ কয়েকটি পিঠা খেয়েছি, বিশেষ করে ভাপা পিঠা অসাধারণ লেগেছে। শিক্ষার্থীদের এ ধরনের উৎসব শুধু আনন্দের নয়, এটি তাদের সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করার একটি চমৎকার সুযোগ।”
অনেক দর্শনার্থী বলেন, “এ ধরনের উৎসব শিক্ষার্থীদের শুধু পড়াশোনার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গেও সংযুক্ত রাখবে। এই উদ্যোগ প্রশংসনীয় এবং ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে আয়োজন হওয়া উচিত।” নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা এই আয়োজনের মাধ্যমে নিজেদের সাংস্কৃতিক দিককে সমৃদ্ধ করেছেন। তারা আশা করছেন, আগামীতে আরও বড় পরিসরে এ ধরনের উৎসব আয়োজন করা হবে, যাতে আরও বেশি শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থী অংশ নিতে পারেন।
পিঠা উৎসবটি শুধুমাত্র একটি খাবার উৎসব নয়, এটি শিক্ষার্থীদের ঐতিহ্য চর্চা, সামাজিক মেলবন্ধন এবং সৃজনশীলতার বিকাশের এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এই আয়োজন শিক্ষার্থীদের ঐতিহ্যবাহী খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়েছে এবং তাদের সাংস্কৃতিক চেতনাকে আরও গভীর করেছে। ভবিষ্যতে এমন আরও উৎসব আয়োজনের প্রত্যাশা করছে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকগণ।