মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪
27 Dec 2024 02:27 am
শরীয়তপুর প্রতিনিধি:-শরীয়তপুরের নড়িয়া থানার সাবেক ওসি অবনী শংকর কর ও সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) হায়দার আলী। ছবি: সংগৃহীত
শরীয়তপুরে চার বছর আগে এক বিএনপি নেতাকে নির্যাতন ও চাঁদা নেওয়ার অভিযোগে সাবেক নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
রবিবার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নড়িয়া আমলী আদালতের বিচারক মো. সাকিব হোসেনের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান সাগর।
মামলাটি আমলে নিয়ে গোপালগঞ্জ পুলিশ বুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে তদন্ত করে রিপোর্ট দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলার আসামীরা হলেন, নড়িয়া থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অবনী শংকর কর (৫৫), থানার সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) হায়দার আলী (৪০), উপজেলার সুরেশ্বর গ্রামের মৃত হেলার খানের ছেলে যুবলীগ নেতা সুজন খান (৪৫), একই গ্রামের মৃত জাফর খানের ছেলে আওয়ামীলীগ নেতা ফারুক খান (৬০)।
মামলার এজাহার ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২০২১ সালে ঘড়িসার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বাদী চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। এর আগের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদন্ধিতা করেছিলেন।আসামীরা বিগত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান আব্দুর রব খানের একই বংশীয় লোক হওয়ায় বাদীকে নির্বাচন না করার জন্য নানান সময় বিভিন্ন ভাবে হয়রানী ও ভয়ভীতি দেখাতেন।
বাদী ব্যবসায়ী হওয়ার কারণে নগদ টাকার প্রয়োজন হওয়ায় তার কলেজ পড়ুয়া ছেলে জাহিদ তার আত্মীয়ের কাছ থেকে (তিন লক্ষ) টাকা নিয়ে সুরেশ্বর হয়ে নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে যুবলীগ নেতা সুজন ও ফারুক খান সহ অজ্ঞাত নামা কয়েকজন মিলে টাকাসহ তাকে একটি ঘরে জোরপূর্বক আটকে রাখেন।পরবর্তীতে বাদী খবর পেয়ে ৯৯৯ এর সহযোগিতা চাইলে নড়িয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বাদীর ছেলে মিজানুর রহমান জাহিদকে উদ্ধার করে অভিযুক্তদের নড়িয়া থানায় নিয়ে আসেন। কিন্তু এরপর অভিযুক্তরা ক্ষমতাসীন হওয়ায় তাদের ছেরে দিয়ে কথিত মানবপাচারের মামলা জাহিদ ও তার পিতা মতিউর রহমান সাগররে বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হয়।এ সময়ে জাহিদের কাছে ৩ লাখ টাকা উদ্ধার হলেও মামলায় ১ লাখ টাকা জব্দ দেখায় পুলিশ।
পরে বিভিন্ন দফায় বাদীর কাছ থেকে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা হাতিয়ে নেয় আসামীরা।এ ঘটনায় আসামী পরস্পর যোগসাজোসে নতুন একটি ঘটনা সাজিয়ে ২০১৩ সালের বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অবিভাসন আইনে চার্জশীট প্রদান করেন। পরে বাদী অসহায় হয়ে আসামীদের নিয়ে নগদ ২লাখ টাকায় আপোষ করতে বাধ্য হন।
ঘটনার ৪ বছর পর মামলা দায়েরের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে মামলার বাদী মতিউর রহমান সাগর বলেন, ‘গত ১৭ বছর দেশে আইনের শাসন ছিল না।অবৈধভাবে সরকারের দায়িত্বে ছিল খুনি হাসিনার দল আওয়ামী লীগ।ওই সময় আওয়ামী লীগ ওসির বিরুদ্ধে মামলা তো দূরের কথা তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেই তারা আমাকে প্রাণে মেরে ফেলতেন।তাই সেই সময় মামলা করতে পারিনি। এখন দেশ স্বাধীন হয়েছে,আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।এ জন্য আমি মামলা দায়ের করেছি।সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হলে আমি ন্যায়বিচার পাব।’
এদিকে নড়িয়া থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অবনী শংকর কর বলেন,এক ভুক্তভোগী ২০২১ সালে মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে একটি মানবপাচার মামলা করেছিলেন।ওই মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছি।মতিউর রহমান তখন ওই অভিযোগপত্র না দেওয়ার জন্য আমাদের নানাভাবে প্রভাবিত করে ব্যর্থ হয়েছিলেন।তাই তিনি এখন ক্ষুব্ধ হয়ে মামলা করেছেন।’
তবে এ ব্যাপারে অন্য অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদেরকে পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে শরীয়তপুর আদালতের পরিদর্শক শিমুল বলেন,দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক ব্যক্তি মামলা করেছেন।আদালত মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।আমরা পিবিআই গোপালগঞ্জ কার্যালয়ে ওই আদেশের কপি পাঠিয়ে দেব।এখন মামলা কিভাবে চলবে,তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন।’