সোমবার, ০২ ডিসেম্বর, ২০২৪
05 Dec 2024 01:28 am
পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি:- রংপুরের পীরগঞ্জে চলতি মওসুমে পানি ফলের বাম্পার ফলন হয়েছে।উপজেলার নি¤œাঞ্চলগুলোতে বছরে একবার মাত্র ধানের চাষ হতো। বছরের বাকি সময়ে ওই জমিগুলো পরিত্যক্ত হিসেবে পড়ে থাকতো।রোপা আমন ধান জলাবদ্ধতায় ডুবে থাকতো।জলাবদ্ধতার ওইসব জমিতে এখন বিকল্প হিসেবে পানি ফলের চাষ করা হচ্ছে।
পানি ফলের চাষ করে এখন অনেক কৃষকেরই ভাগ্য বদলে গেছে। এলাকায় নতুন করে অনেক কৃষকই পানি ফল চাষে ঝুকে পড়ছেন।আষাঢ় মাসের বৃষ্টিতে জলাশয় গুলো ভরে উঠলে ওই পানিতে পানি ফলের চারা ছেড়ে দেওয়া হয়। ক্রমেই চারা গাছ বেড়ে সবুজের চাদরে ঢেকে যায় জলাশয় গুলো। ভাদ্র মাস থেকে গাছে ফল আসা শুরু করে এবং কার্তিক মাসের শেষে ফল বিক্রি শুরু হয়।
নিজের জমি ছাড়াও অন্যের জমি লীজ নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে পানি ফলের চাষ করছেন অনেক কৃষক। এজন্য প্রতিবছর এই ফল চাষের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।
এতে অনেক কৃষকের ভাগ্য বদলে দিয়েছে এই পানি ফল। নতুন করে এই ফলের চাষে ঝুকে পড়ছেন কৃষকরা। উপজেলার পাঁচগাছি, রামনাথপুর, কাবিলপুর ও চতরা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে ক্ষেত থেকে পানি ফল তুলতে।কথা হয় রামনাথপুর ইউপির সয়েকপুর গ্রামের কৃষক পরিমল এর সাথে।তিনি জানান, ৩৩ শতক জমিতে বীজ বপন করে ২০ হাজার টাকার পানি ফল বিক্রি করেছেন।
ক্ষেতে যে পরিমান ফল রয়েছে তা বিক্রি হবে নূন্যতম ৫ হাজার টাকা। পানি যতদিন থাকবে ততদিন ফলও পাওয়া যায় বলেও জানান তিনি।পাঁচগাছী ইউপির বামনীর বিলে ৭০ শতক জমিতে পানি ফলের চাষ করে ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করেছে জাহাঙ্গীরাবাদ গ্রামের প্রান্তিক চাষী মিজানুর রহমান।তার সাথে তার স্ত্রীও এই পানি ফল চাষে সহযোগিতা করে থাকেন। মিজানুর রহমান বলেন, জমিগুলো পানির নিচে ডুবে থাকে, প্রথমবার আবাদ করে লাভের মুখ দেখেছেন তিনি।
এছাড়াও জমি থেকে আরও অনেক ফল বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান।প্রতি মণ ২ হাজার টাকা হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।পানিফল আবাদের খরচ মাত্র একটাই তা হলো মাঝে মধ্যে কীটনাশক স্প্রে করা। কোন প্রকার রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয় না।একই ইউনিয়নের পানেয়া গ্রামের তারা মিয়া বলেন,উপজেলায় শুধু মাত্র পাঁচগাছী ইউনিয়নেই একাধিক বিল রয়েছে।
এই বিলের পানিতে সিংঙ্গর (পানিফল) আবাদ হয়। আমাদের এলাকার লোকজনের মধ্যে আগে এই আবাদ সম্পর্কে কোন ধারনা ছিল না।আমার গ্রামে আমিই প্রথম এই আবাদ নিয়ে এসেছি। বর্তমানে এলাকায় ২০ থেকে ৩০ জন মানুষ পানি ফল চাষ করছে।নিজের জমি ছাড়াও অন্যের জমি লিজ নিয়ে বানিজ্যিক ভাবে পানি ফলের চাষ করছেন কেউ কেউ বলেও জানান তিনি।
এজন্য প্রতি বছর এই ফল আবাদের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।ইউপি চেয়ার্যান বাবলু মিয়া জানান- অত্র ইউনিয়নে অনেক বিল রয়েছে বিশেষ করে এই বিল গুলোতে জলাবদ্ধতায় পানি প্রায় পুরো বছরই থাকে।জলাবদ্ধতার করনে বছরে শুধু একবার ধানের চাষ করা সম্ভব হয়। বর্তমানে জলাবদ্ধ জমি গুলোতে পানি ফল আবাদ হচ্ছে।যে ব্যক্তি একবার পানিফল চাষ করেছে সে প্রতি বছরই এই ফল চাষ করে থাকে। এতে পানি ফল চাষির সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে।বলতে গেলে বানিজ্যিক ভাবে এ অঞ্চলে এখন পানি ফলের চাষ করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাদেকুজ্জামান সরকার বলেন, অনাবাদি জমিতে পানি ফলের চাষ করা যায়। এই আবাদে কম খরচ সময়মত ফলের গাছে বালাইনাশক বা কীটনাশক প্রয়োগ করলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়। পানি ফল চাষাবাদের জন্য অই এলাকার জমিগুলো খুবই ভালো। চাষিদের মধ্যে পানি ফল চাষের অনেক আগ্রহ রয়েছে।
মোঃ আকতারুজ্জামান রানা,পীরগঞ্জ(রংপুর) প্রতিনিধি