শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
22 Nov 2024 01:26 am
শাহ্ আলী বাচ্চু স্টাফ রিপোর্টার জামালপুর:- জামালপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটালকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পঙ্গু করতে উঠে পড়ে লেগেছে জেলার প্রভাবশালী মির্জা পরিবারের সদস্যরা।বিগত সময়ে সরকার দলীয় প্রভাব খাটিয়ে একই পরিবারের একাধিক সদস্য ও তাদের স্বজনরা বিভিন্ন পদে যুক্ত হন প্রতিষ্ঠানটিতে।প্রভাব খাটিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমিটিও নিয়েছেন তাদের হাতের কবজায়।বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ডা. মনিরুজ্জামান খানকে বিগত ২৯-০৮-২০২৪ তারিখে কলেজে অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করে মির্জা শাহেদ অজ্ঞাতনাম কয়েকজন কে সঙ্গে নিয়ে অবরুদ্ধ এবং জোরপূর্বক পদত্যাগ করানোর চেষ্টা করে।
এসময় পাশ্ববর্তী লোকজন অধ্যক্ষকে আটকের খবর শুনে সাহায্যের জন্য আসে।ঐদিন পদত্যাগ করাতে না পেরে, অপসারণ করতে নানা রকম মিথ্যা অভিযোগ তুলছে মির্জা পরিবার। শুধু তাই নয়, একসময়ে অধ্যক্ষকে বাহবা দেওয়া কতিপয় শিক্ষকরা অর্থ ও পদোন্নতির লোভে যুক্ত হচ্ছে নতুন ষড়যন্ত্রে।
প্রায় ২ একর জায়গা নিয়ে জামালপুর পৌর শহরের পশ্চিম ফুলবাড়িয়ায় ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত জামালপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল। পরে ১৯৯৮ সালে সরকারি ভাবে স্বীকৃতি পায় প্রতিষ্ঠানটি।এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যক্ষসহ মোট শিক্ষক ১৭ জন, মেডিকেল অফিসার ১ জন, কম্পিউটার অপারেটর ১ জন হিসাব রক্ষক ১ জন ও ৪ জন এল এম এস এস তাদের দয়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও খন্ডকালিন শিক্ষক হিসেবে ৪ জন এবং প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ৩৮০ জন।
জানা যায়, ২০১৫ সালে অবহেলিত এই জামালপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটালের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. মাসুদুর রহমানের মৃত্যুর পর সেই পদে দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানায় প্রতিষ্ঠানের সকল সিনিয়র শিক্ষকবৃন্দ। সে সময় সকলের সম্মতিক্রমে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন বর্তমান অধ্যক্ষ ডা. মনিরুজ্জামান খান।পরবর্তীতে ২০১৯ সালে কলেজের সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা ডা. মির্জা ওবায়দুল্লাহ সহ ম্যানেজিং কমিটির সকল সদস্য অধ্যক্ষ পদে ডা.মনিরুজ্জামান খান সহ আবেদনকৃত অন্যান্য প্রার্থিদের সকল আবেদন পত্র যাচাই বাছাই শেষে সর্বসম্মতিক্রমে ডা. মনিরুজ্জামান খানকে প্রতিষ্ঠানটির পূর্ণাঙ্গ অধ্যক্ষের আসনে বসান।
এরপর ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ডা. মির্জা ওবায়দুল্লাহ’র মৃত্যুর পর তার পুত্র মির্জা সাহেদ প্রতিষ্ঠাতা প্রতিনিধি হিসেবে ম্যানেজিং কমিটিতে আসার জন্য আবেদন জানান এবং তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতা মির্জা আজমের হস্তক্ষেপে মির্জা সাহেদ ম্যানেজিং কমিটিতে জোরপূর্বক প্রবেশ করেন ।ঠিক তখন থেকেই কালো মেঘে ঢাকতে শুরু করে জামালপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটালের সকল কার্মযজ্ঞ।এই প্রতিষ্ঠানটিতে ত্রাসের রাজত্ব বিস্তার করতে শুরু করেন সাহেদ মির্জা।
প্রতিষ্ঠানটির সকল শ্রেণির কর্মকর্তা কর্মচারীদের উপর বাজে আচরণ শুরু করেন তিনি। শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানটির সকল সম্পদ নিজের মনে করে নানা রকম অযুহাতে হিসাব শাখা থেকে টাকা তুলতে শুরু করেন এবং প্রতিষ্ঠানের ৩ টি পুকুর জোরপূর্বক নিজ নামে লিজ করিয়ে নেন।
এখানেই শেষ নয়, অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে জামালপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটালের বিভিন্ন অনিয়মের চিত্র। প্রতিষ্ঠানটির অনিয়মিত শিক্ষক হিসেবে পরিচিত ডা. খলিলুর রহমান, ডা. রাজিয়া সামছুন্নাহার,তাদের সঙ্গে ডা. আবু তাহের রহুল আমিন, ডা. আতিকুল ইসলাম এবং ডা. জিল্লুর রহমান বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। ডা. খলিলুর রহমান ও ডা. রাজিয়া সামছুন্নাহার অনিয়মিত থাকার কারনে সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. খন্দকার মাসুদুর রহমান দায়িত্বে থাকাকালী কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রাপ্ত হন অভিযুক্ত দুই জন।
তারা স্টাম্পে অঙ্গীকার নামা প্রদান করে মির্জা আজমের সুপারিসে পুনরায় কলেজে যোগদান করেন। ডা.খলিলুর রহমান ও ডা.জিল্লুর রহমান মেয়াদ উত্তীর্ন কমিটি দিয়ে ডা.আতিকুল ইসলামের সহযোগিতায় পদোন্নতি নিয়েছেন।ডা.জিল্লুর রহমান যিনি জামালপুর জেলার বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সমাজ কল্যাণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।তিনি কলেজের ছাত্র /ছাত্রীদের নিয়ে দির্ঘদিন যাবত একটি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করে আসছেন।
কলেজে নতুন ছাত্র/ছাত্রী ভর্তি হলেই তিনি তাদেরকে উৎসাহিত করে কোচিং সেন্টারে ভর্তি করেন। সপ্তাহে একদিন ক্লাস করিয়ে মাসে ১ হাজার টাকা ফি আদায় করেন।ওই সকল ছাত্র /ছাত্রীদের আর কলেজের ক্লাসে পাওয়া যায়না। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা.খন্দকার মাসুদুর রহমানের সময়ে ডা.আতিকুল ইসলাম ও ডা.জিল্লুর রহমানকে তার সবকাজের সহযোগী হিসেবে দেখা যায় এবং ওই সময়ের অর্থ আত্বসাতের অভিযোগে এই দুইজনের নাম পাওয়া যায়।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বর্তমান অধ্যক্ষ থাকাকালীন সময়ে ২০২৩ সালে ডা. খলিলুর রহমান ও ডা. রাজিয়া সামছুন্নাহারকে একই অপরাধে আবারো কারন দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়। আরেক শিক্ষক ডা. মো. এটি এম রহুল আমিনের অধ্যায়টা একটু ভিন্ন রকম।তিনি ১৯৯৮ সালে জামালপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদান করেন কিন্তু তিনি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক হিসেবে রেজিষ্ট্রেশন প্রাপ্ত হন ২০০০ সালের ২৭ মার্চ।এসময় পুর্ণাঙ্গ চিকিৎসক হওয়ার ২ বছর আগেই মেডিকেল কলেজে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদান করায় কলেজ হতে বহিঃস্কার করা হয় তাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কতিপয় শিক্ষক জানান, জামালপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটালে প্রতিষ্ঠাতা ডা.মির্জা ওবায়দুল্লাহ’র স্বপ্নকে দিনে দিনে ধ্বংস করছে তারই পরিবারের লোকজন।প্রতিষ্ঠানটির ২২ জন শিক্ষকের মধ্যে ৪ জন মির্জা পরিবারের।হিসাব রক্ষক ডা. মির্জ্জা আহসান তাদেরই চাচা, এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটিতে তাদেরই স্বজনরা বিভিন্ন পদে চাকুরীরত রয়েছে। কতিপয় শিক্ষক মির্জা পরিবারের যোগসাজসে প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করেছেন।
যারা কর্মক্ষেত্রে নিয়মিত রয়েছে তারা মির্জা পরিবারের কাছে জিম্মি অবস্থায় শিক্ষকতা করছেন।সরজমিনে কলেজে গিয়ে দেখা যায়, রুটিনে ক্লাস থাকলেও কেও কেও কলেজে অনুপস্থিত।অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে পদত্যাগ করাতে না পেরে মির্জা শাহেদ শিক্ষকদের ওইদিনই বাসায় ডেকে নিয়ে চাকুরীর ভয় দেখিয়ে সাদা কাগজে জোরপূর্বক সকলের সাক্ষর নেন বলে জানান তারা।