সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৪
24 Nov 2024 08:20 am
উজ্জ্বল রায়,জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে:-নড়াইলে এক রাতেই নির্মিত হয় ঐতিহ্যবাহী গোয়ালবাথান মুন্সীবাড়ি মসজিদ। ৪০০ বছর আগে মোগল শাসনামলে এক রাতে নির্মাণ করা হয় নড়াইল সদর উপজেলার গোয়ালবাথান ঐতিহ্যবাহী মুন্সীবাড়ি মসজিদ। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে জানান, মসজিদের ছাদের ওপরে চারপাশে ছোট ছোট চারটি মিনার এবং মাঝখানে একটি বড় গম্বুজ রয়েছে। ছোট ইট আর চুন-সুড়কির গাঁথুনির মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়েছে এ মসজিদটি। জনশ্রুতি রয়েছে, ওই মসজিদটি জ্বীনদের দিয়ে নির্মাণকাজ করা হয় এবং ওই সময় জ্বীনরাও নামাজ আদায় করতেন।
এলাকায় জনশ্রুতি আছে, মোগল শাসনামলে প্রায় ৪০০ বছর আগে একদিন এই গ্রামে এসে হঠাৎ করে বসবাস শুরু করেন মুন্সী হবৎউল্লাহ নামে এক ব্যক্তি। এর কিছু দিন পর তিনি এক রাতে ওই স্থানে এ মসজিদ এবং এর সংলগ্ন একটি পুকুর খনন করেন। সেই থেকে ওই গ্রামে আস্তে আস্তে জনবসতি শুরু হয় এবং ওই স্থানসহ আশপাশের এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষরা ওই মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় করতে থাকেন।
নড়াইল জেলায় ওই সময় অন্য কোনো মসজিদ না থাকায় জেলার বিভিন্ন এলাকার মুসলিম সম্প্রদয়ের মানুষরা নড়াইলের প্রথম মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসতেন বলেও জনশ্রুতি রয়েছে। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে জানান, ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয়, গোয়ালবাথান গ্রামের মুন্সীবাড়ির এ মসজিদটি নড়াইল জেলার সর্ব প্রথম ও প্রাচীনতম মসজিদ। ছোট ছোট ইট আর চুন সুড়কির গাঁথুনীর মাধ্যমে এ মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। অবশ্য মুসল্লি বেড়ে যাওয়ায় ১০ বছর আগে সামনের অংশ বর্ধিত করা হয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, ওই এলাকায় কোনো মানুষের বসতি ছিল না। বাগানে ভরা ছিল এলাকাটি। মুন্সী হবৎউল্লাহই ওই গ্রামের প্রথম বাসিন্দা ছিলেস। তার বসবাস শুরুর পর কোনো এক রাতে ওই মসজিদ এবং তার সঙ্গে লাগোয়া একটি পুকুর খনন করা হয়।
মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা মুন্সী হবৎউল্লাহর বংশধরেরা আজও গোয়ালবাথান গ্রামে বসবাস করছেন। তারাও সঠিকভাবে বলতে পারেন না কত সালে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল এ মসজিদটি। তবে মোগল শাসনামলে এবং কমপক্ষে ৪০০ বছর আগে এটি তাদের পূর্বপুরুষ মুন্সী হবৎউল্লাহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে জানিয়েছেন।
এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে, ওই মসজিদটি জিনদের দিয়ে নির্মাণকাজ করা হয় এবং ওই সময় জিনরাও এ মসজিদে নামাজ আদায় করতেন। ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক গোয়ালবাথান গ্রামের মুন্সীবাড়ির মসজিদটি আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদে বিভিন্ন এলাকার মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতে আসেন। এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ মসজিদটি দেখার জন্য আসেন।
যশোর জেলার ভাঙ্গুরা এলাকার বাসিন্দা শাহরিয়ার হাসান বলেন, আমি গোয়ালবাথান মসজিদে এসে নামাজ পড়েছি। ৪০০ বছরের পুরোনো এই মসজিদটি দেখে খুব ভালো লেগেছে। এই মসজিদটি প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের উদ্যোগে সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করা হলে আরো ভালো হতো।
সাব্বির হাসান নামে একজন বলেন, নড়াইলের গোয়ালবাথান মসজিদের নাম শুনেছি। কোনোদিন দেখার সৌভাগ্য হয়নি। নড়াইল জেলায় আমার নানু বাড়ি। নানু বাড়ি বেরাতে এসে আমি মসজিদটি দেখতে এসেছি। এখানে এসে নামাজ আদায় করেছি। মসজিদের গম্বুজ, নকশা ও সামনের পুকুর দেখে ভীষণ ভালো লাগলো। প্রকৃতির রঙের সঙ্গে মসজিদর রঙও মিলে গেছে। সবকিছু মিলে ভীষণ ভালো লেগেছে।
গোয়ালবাথান গ্রামের বাসিন্দা সমাজ সেবক সৈয়দ সামিউল ইসলাম শরফু বলেন, গোয়ালবাথান মসজিদটি ইতিহাসের পাতায় স্থান পেয়েছে। ৪০০ বছরের পুরোনো এই মসজিদটি দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন মানুষ। ৪০০ বছর আগে এই এলাকায় মানুষের বসবাস তেমন ছিলো না। কিন্তু বর্তমানে জনবসতি বেড়ে যাওয়ায় মসজিদটির সবকিছু ঠিক রেখে বর্ধিত করা প্রয়োজন।
৩৬৬ বছরের পুরনো মোগল আমলের শাহ সুজা মসজিদ
মসজিদটিতে ইমামের দায়িত্ব পালন করেন মসজিদের প্রতিষ্ঠাতার বংশধর ঐতিহ্যবাহী মুন্সীবাড়ির আলেম মুন্সী মাওলানা হাসমত আলী। তিনি বলেন, গোয়ালবাথানের এই মসজিদটি আমাদের পূর্বপুরুষ মুন্সী হবৎউল্লাহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সে কারণে মসজিদ সংরক্ষণসহ সবকিছু আমরা ও মহল্লাবাসী মিলে দেখাশোনা করি। এখানে আমি এলাকাবাসীর সম্মতিতে ইমামতি করি। আমার কাছে খুব ভালো লাগে। তবে মসজিদের উন্নয়নে সরকারের পৃষ্টপোষকতা প্রয়োজন। সরকার কিংবা সমাজের বিত্তশালীরা এগিয়ে এলে শতবর্ষের পুরোনো এই মসজিদটি ধ্বংসের করালগ্রাস থেকে সংরক্ষিত থাকবে।