সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০২৪
24 Nov 2024 01:28 pm
৭১ভিশন ডেস্ক:- কোটা সংস্কার আন্দোলন একটি অরাজনৈতিক ও অধিকার আদায়ের আন্দোলন হলেও এটি আর ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না।এক পর্যায়ে এটি ছাত্র জনতার আন্দোলনে রূপ নিয়েছে মন্তব্য করে চলমান ছাত্র আন্দোলনে প্রতি জাতীয় পার্টির সমর্থন, আন্দোলনে নিহত ছাত্র-ছাত্রীদের বীর মুক্তিসেনা হিসেবে আখ্যায়িত করাসহ ১১টি সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি।
রোববার (২৮ জুলাই) দুপুরে বনানীস্থ জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান কার্যালয় মিলনায়তনে পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি’র সভাপতিত্বে এক জরুরি যৌথসভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।
যৌথসভা শেষে বিকেল সাড়ে ৩টায় সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন তিনি।
সভার সিদ্ধান্তগুলো হলো-
১। জাতীয় পার্টির এই যৌথসভা সর্বসম্মতভাবে ছাত্রদের অধিকার আদায়ের বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন জ্ঞপন করে। সেই সঙ্গে চলমান অহিংস ছাত্র আন্দোলনের প্রতি জাতীয় পার্টির সমর্থন অব্যাহত থাকবে।
২. সভায় ছাত্রদের অহিংস আন্দোলনে নিহত ছাত্র জনতার আত্মর মাগফেরাত কামনা করে পরিবার পরিজেনের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়।
৩. এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ন্যায্য দাবি শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে দমনের প্রক্রিয়াকে তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
৪. সভায় ছাত্র আন্দোলনের নিহত আবু সাইদসহ শহিদদের মামলার এজাহারে প্রকৃত মৃত্যুর কারণ না দিয়ে মিথ্যা এজাহার দাখিলের নিন্দা জানানো হয়।
৫. নিহত ছাত্র-ছাত্রীরা বীর মুক্তিসেনা হিসেবে আখ্যায়িত হবে এবং একটি নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের মাধ্যমে প্রকৃত শহিদদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
৬. সভায় ছাত্র হত্যার সঙ্গে জড়িত সব সরকারি কর্মকর্তা, উস্কানিদাতাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৭. সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের হয়রানী বা নির্যাতন না করার আহ্বান জানানো হয়। ছাত্রদের নামে দায়েরকৃত সব মামলা প্রত্যাহার করারও আহ্বান জানানো এবং কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গ্রেপ্তারকৃত সব ছাত্র ও নেতৃবৃন্দকে অনতিবিলম্বে মুক্তির দাবি করা হয়।
৮. জাতীয় পার্টির এই সভা ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের পরিবার পরিজনকে সম্মানজনক ক্ষতিপূরণ প্রদান ও আহতদের সুচিকিৎসা দাবি করছে।
৯. এই সভা অনতিবিলম্বে দেশের ইন্টারনেটসহ সব সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমসমূহ খুলে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে ।
১০. এই সভায় সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। কেপিআইভূক্ত স্থাপনাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহের নিরাপত্তা প্রদানের দায়িত্ব সরকারের। সরকার এই দায়িত্ব পালনে ব্যার্থ হয়েছে। এই দায় সরকার এড়াতে পারে না ।
১১. অনতিবিলম্বে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। সেই সঙ্গে প্রকৃত ছাত্রদের হল প্রশাসনের মাধ্যমে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে এবং ক্যম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সহিংসতায় নিহত ও আহত সাংবাদিকদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন হয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে। স্বাধীনতার পর দেশের মানুষ ভেবেছিল শোষণ ও বৈষম্যমুক্ত একটি দেশ হবে।কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। কোটা সংস্কার আন্দোলন একটি অরাজনৈতিক ও অধিকার আদায়ের আন্দোলন হলেও এটি আর ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ আন্দোলন ছিল না। এক পর্যায়ে এটি ছাত্র জনতার আন্দোলনে রূপ নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিনের শোষণ, বঞ্চনা, গণতন্ত্রহীনতায় মানুষের মধ্যে একটি চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছিল। শিক্ষার্থীদের অহিংস আন্দোলনের উপর অত্যাচার শুরুর পর থেকে তাদের রক্ষা করার জন্য জনগণও তাদের সঙ্গে নেমে পড়ে। ছাত্রদের উপর নিষ্ঠুর নির্যাতন, অসংখ্য ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে। আহত করা হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। এমন স্বতঃস্ফুর্ত আন্দোলন আমরা অতীতে দেখিনি। এমন বর্বর ও নিপিড়নমুলক হত্যাকাণ্ড জাতি কখনও প্রত্যক্ষ করেনি। যার কারণে এ আন্দোলনে স্কুলের ছাত্র থেকে শুরু করে সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন আছে জানিয়ে দলটির মহাসচিব বলেন, আন্দোলনরত ছাত্ররা রাজনৈতিক দলগুলোকে সরাসরি পাশে চায়নি বলেই আমরা তাদের সঙ্গে মাঠে ছিলাম না। কিন্তু গেল সংসদ অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি দীর্ঘ ১০ মিনিট কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের স্বপক্ষে যুক্তি দিয়ে বক্তৃতা করেন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, সহিংসতার নামে সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ধংস হয়েছে।এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের দায় স্বীকার করে চলে যাওয়া উচিৎ।কোনো মন্ত্রী বা এমপি’র বাড়িতে তো হামলা হয়নি। সেখানে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারি স্থাপনাগুলো রক্ষায় তাদের কোনো উদ্যোগ ছিল না। আন্দোলনরতদের গ্রেফতারের নামে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী গ্রেফতার বাণিজ্য চালাচ্ছে।
যৌথ সভায় আরও বক্তব্য দেন- জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, কো-চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়সল চিশতী, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এমপি, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, মেজর (অব.) রানা মো. সোহেল, মো. জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, জহিরুল আলম রুবেল, একেএম মোস্তাফিজুর রহমান, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মিলন, মো. খলিলুর রহমান খলিল, মেজর (অব.) সিকদার আনিসুর রহমান, মেজর (অব.) মো. মাহফুজুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মো. সামছুল হক, সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হুমায়ুন খান, কাজী আবুল খায়ের, সৈয়দ ইফতেকার আহসান হাসান, জাতীয় যুবসংহতির সাধারণ সম্পাদক আহাদ ইউ চৌধুরী শাহীন, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিরু, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হেলাল উদ্দিন, জাতীয় ছাত্র সমাজের সভাপতি আল মামুন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এমপি, গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপি, সৈয়দ মো. আব্দুল মান্নান, নাসরিন জাহান রত্না, সৈয়দ দিদার বখত্, নাজমা আখতার, মো. আতিকুর রহমান আতিক।