শনিবার, ০৬ জুলাই, ২০২৪
24 Nov 2024 04:11 am
৭১ভিশন ডেস্ক:- ক্লান্তিকর ১২০ মিনিটের ফুটবল শেষে ম্যাচের ভাগ্য গড়াল টাইব্রেকারে। শেষ ষোলোয় অবিশ্বাস্য তিন সেভে পর্তুগালের নায়ক হয়ে ওঠা গোলরক্ষক দিয়োগো কস্তা এবার আর পারলেন না। উল্টো পোস্টে মেরে বসলেন তার সতীর্থ জোয়াও ফেলিক্স। ওই ব্যবধান ধরে রেখে, পাঁচ শটের পাঁচটিই জালে জড়িয়ে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের সেমি-ফাইনালে উঠল ফ্রান্স।
চলতি ইউরোতে বিবর্ণ পর্তুগাল ও ফ্রান্স। কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েও গোলমুখের সামনে দুই দল নিষ্ক্রিয়। প্রথম আধঘণ্টা পারফরম্যান্স দিয়ে তুলনামূলকভাবে এগিয়ে ছিল পর্তুগিজরা। আক্রমণভাগের ফ্রান্সের তুলনায় তারা ছিল বিপজ্জনক। তাছাড়া তাদের রক্ষণভাগও ফ্রান্সকে বোতলবন্দি করে রাখে।
প্রথমার্ধ নিজের ছায়া হয়ে থাকা এমবাপ্পে প্রথম শট নেন ৫০ মিনিটে। তার দুর্বল শট ধরতে কষ্ট হয়নি পর্তুগিজ কিপার ডিয়েগো কস্তার। ফ্রান্স অধিনায়ক আহত হয়ে কিছুক্ষণের জন্য মাঠ ছাড়েন। ৫৫ মিনিটে বার্নার্ডো সিলভার হেড তার মুখের পাশে লাগলে মাটিতে লুটিয়ে যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন তিনি। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অবশ্য ফিরে আসেন মাঠে।
দ্বিতীয়ার্ধে ফ্রান্স আক্রমণনির্ভর ফুটবল খেললেও ম্যাচ ঘড়ি এক ঘণ্টা পার হওয়ার পর টানা কয়েকটি সুযোগ তৈরি করে পর্তুগাল। ৬২ মিনিটে কানসেলোর বাড়ানো বলে ব্রুনো ফের্নান্দেস। কিন্তু তার গোল প্রচেষ্টা রুখে দেন ফরাসি কিপার মাইক মাইগনান। কয়েক মুহূর্ত পর কানসেলোর বাঁকানো শট গোলবারের পাশ দিয়ে যায়।
দুই মিনিট পর আবারও আক্রমণে ওঠে পর্তুগাল। রাফায়েল লিয়াও বক্সের মধ্যে ভিতিনহাকে পাস দেন। তিনি বেশ কাছ থেকে শট নিলেও মাইগনান বুক চিতিয়ে বল ফিরিয়ে দেন। বাঁ পাশের পোস্টে দাঁড়ানো রোনালদো ব্যাক হিলে লক্ষ্যভেদ করতে চাইলেও ফরাসি কিপার তাকে থামান।
এরপর বলার মতো সুযোগ তৈরি করতে থাকে ফ্রান্স। ৬৭ মিনিটে মুয়ানি বল নিয়ে পর্তুগালের রক্ষণ চিড়ে বক্সে ঢুকে পড়েন। তার শটে হস্তক্ষেপ করেন রুবেন দিয়াজ। বলের সামনে ডাইভ দিয়ে কর্নার বানান পর্তুগিজ ডিফেন্ডার।
পরের মিনিটে আন্তোয়ান গ্রিয়েজম্যান মাঠ থেকে উঠে জায়গা করে দেন উসমান দেম্বেলেকে। ম্যাচের প্রথম পরিবর্তনের পর বেশ দাপট দেখায় ফরাসিরা। বক্সের মধ্যে পায়ের ভালো কাজ দেখিয়ে সামনে বল বাড়ান। পেপের গায়ে বল লেগে পড়ে এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গার সামনে। ফরাসি ফুটবলারের শট দূরের পোস্টের কয়েক ইঞ্চি সামনে দিয়ে বেরিয়ে যায়।
নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগে বক্সের বাইরে ফ্রি কিক পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি রোনালদো। তার শট ফরাসি রক্ষণদেয়ালে ধাক্কা দিয়ে ফিরে যায়।
ইনজুরি টাইমে এন’গোলে কাঁতে বক্সের বাইরে থেকে শট নিয়ে কস্তার বাধা টপকাতে পারেননি।
দুই দলই সুযোগ পেলের জালের দেখা পেতে ভুগেছে। তাতে করে নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হয় ১-১ গোলে। টানা তিন ম্যাচ ওপেন প্লে থেকে গোল করতে ব্যর্থ ফ্রান্স, আর একই সময়ে টানা সমান সংখ্যক ম্যাচে কোনও গোল করতে পারেনি পর্তুগিজরা।
অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচের শুরুতে রোনালদো বিশাল একটা সুযোগ নষ্ট করেন। কনসেইসাও ডানপাশ থেকে ক্রস দেন তার উদ্দেশে। কিন্তু পর্তুগাল অধিনায়ক তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে আকাশের দিকে বল মারেন।
১০৩ মিনিটে বক্সের মধ্যে থেকে শট নেন লিয়াও। কিন্তু ফোফানা ব্লক করে ফ্রান্সকে রক্ষা করেন। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে এমবাপ্পেকে উঠিয়ে ব্র্যাডলি বারকোলাকে নামায় ফরাসিরা।
১০৮ মিনিটে কনসেইসাওয়ের ক্রসে দূরের পোস্টে দাঁড়ানো ফেলিক্স হেড করেছিলেন। কিন্তু তার শট লাগে সাইড নেটে। চার মিনিট পর দেম্বেলের শট বারের ওপর দিয়ে মাঠের বাইরে যায়।
একেবারে শেষ মুহূর্তে নুনো মেমেন্দসের দুর্বল শট ঠেকিয়ে ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে নেন ফরাসি কিপার মাইগনান।
তাতে ফল নির্ধারণে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে টাইব্রেকারে খেলতে হয়েছে পর্তুগালকে।
প্রথম শটে ফ্রান্সের দেম্বেলে কস্তাকে ডানদিকে পাঠিয়ে বাঁ দিক দিয়ে জাল কাঁপান। রোনালদো মাইগনানকে বাঁ দিক দিয়ে পরাস্ত করেন। ফ্রান্সের দ্বিতীয় শটে গোলপোস্টের মাঝখান দিয়ে জাল কাঁপান ফোফানা। বার্নার্ডো সিলভাও ভুল করেননি, স্কোর সমান করেন। তৃতীয় শটে ফ্রান্স গোল করে কোন্দের কিকে। জোয়াও ফেলিক্স বাঁ দিকের পোস্টে আঘাত করে পর্তুগালকে হতাশায় ভাসান। বারকোলাকে থামানোর সুযোগ পাননি কস্তা। মেন্দেস চতুর্থ শটে গোল করে পর্তুগালের আশা বাঁচিয়ে রাখেন। হার্নান্দেজ পঞ্চম শটে গোল করে ফ্রান্সকে সেমিফাইনালে তোলেন।