সোমবার, ০১ জুলাই, ২০২৪
25 Nov 2024 05:29 pm
৭১ভিশন ডেস্ক:- গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে জঙ্গিদের ডিরেডিক্যালাইজডের কাজ চলছে।যাদের সাজার মেয়াদ শেষ হতে আরও দুই–এক বছর লাগবে তাদের নিয়ে এই প্রোগ্রাম চালু করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ (সিটিটিসি)।এই প্রোগ্রামের আওতায় ধর্মীয় উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়া তরুণদের ইসলামিক স্কলার, কালচারাল ব্যক্তিত্ব,শিক্ষাবিদ,লিগ্যাল অ্যাডভাইজর ও সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং করা হচ্ছে।
হলি আর্টিসান দিবস উপলক্ষে রোববার দুপুর ২টায় রাজধানীর মিন্টো রোডে সিটিটিসির সদরদপ্তরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, একজন তরুণকে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে আত্মঘাতী হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। সেখান থেকে তাদের বের করে নিয়ে আসতে দীর্ঘ প্রক্রিয়া মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে।এটাই প্রকৃত সমাধান।তাদের যদি ডিরেডিক্যালাইজড করতে পারি, তাহলে যে অবস্থা বর্তমানে বিরাজ করছে, সেই অবস্থা অব্যাহত থাকবে।এই কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে অনেকেই এক সময় ভুল বুঝতে পারছেন।
আসাদুজ্জামান বলেন, তরুণদের এমনভাবে ধর্মীয় উগ্রবাদের মাধ্যমে রেডিক্যালাইজড করা হয়েছে। তারা মনে করেন তাদের মূল টার্গেট এ দেশের কালচার। তারা যদি কালচারকে ধ্বংস করতে পারে, তাহলে তাদের উদ্দেশ্য দ্রুত সফল হবে। জঙ্গি হামলার তথ্য বলছে, দেশে প্রথম জঙ্গি হামলা হয় উদীচীর পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন যাত্রাপালার মঞ্চে।এ ছাড়া দেশের আইন মানতেও তারা নারাজ। তারা তাদের নিজস্ব মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে চায় এবং তারা দেশের প্রচলিত আইনকে চ্যালেঞ্জ করে।এখান থেকেই বের করে নিয়ে আসতে প্রতিটা ধাপে ধাপে কাউন্সেলিং করা প্রয়োজন হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত কতজন জঙ্গি সদস্যকে ডিরেডিক্যালাইজড করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ‘বাংলাদেশ পুলিশে সন্ত্রাস দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র’ নামে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন। দেশব্যাপী জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও ডিরেডিক্যালাইজড কার্যক্রম পরিচালনা করা। যারা ডিরেডিক্যালাইজডের মাধ্যমে জঙ্গিবাদের পথ থেকে ফিরে আসবে, তাদের রিহেভিলেট করা। ইতোমধ্যে এই কাজ শুরু হয়েছে। এই অর্থবছরে ৫৪ জন জঙ্গিকে ডিরেডিক্যালাইজড প্রোগ্রামের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।এ ছাড়া কাশিমপুর কারাগারে আটজন করে দুইটি ব্যাচে আরও ১৬ জঙ্গিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এটা দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়া। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই প্রথম।
অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, এসব কাউন্সিলরা বসে একটি ডি–ব্রিফং সেশন করেন। এখানে সব কাউন্সিলরা বসে সিদ্ধান্ত নেন। তারা আসলেই ডিরেডিক্যালাইজড হয়েছে কিনা মতামত দেন। যাদের বিষয়ে কাউন্সিলরা ডিরেডিক্যালাইজড বলে মতামত দেন তাদের পুনর্বাসনের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে যে যেটা শিখতে আগ্রহী, তাকে সেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গাড়িচালক, কম্পিউটার ও টেইলার্সের কাজ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।পরে তাদের এসব জিনিস দেওয়া হবে। এটাই প্রকৃত সমাধান।
ট্র্যাজেডির বিষয়ে সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, ২০১৬ সালের ১ জুলাই বাংলাদেশের জন্য একটি ট্র্যাজেডি দিন। গুলশান হলি আর্টিসান বেকারিতে এই দিনে জঘন্যতম জঙ্গি হামলা হয়। এই ঘটনায় গুলশান থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা হয়।মামলার তদন্ত করেছে ডিএমপির সিটিটিসি বিভাগ।মামলাটি সিটিটিসি অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে মামলার তদন্ত কাজ শেষ করে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত মাস্টারমাইন্ড পাঁচজন ‘অপারেশন থান্ডার বোল্ড’ নামে একটি অভিযানে নিহত হন। পরবর্তী সময়ে এই হামলার সঙ্গে জড়িত হোতাদেরও শনাক্ত করে।যার মধ্যে সিটিটিসির অভিযানে বেশ কয়েকজন নিহত হয়। আটজনকে জীবিত গ্রেপ্তার করা হয়। এক বছরের মাথায় ২০১৭ সালে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। আদালত ওই মামলার যুগান্তকারী রায় দেন।রায়ে সাতজনকে মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে খালাস দেওয়া হয়। রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। সেখানে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা জঙ্গি সংগঠনের তালিকা করলে এরাই ছিল আত্মঘাতী। তারা সে সময় অনেক হামলা করে। পরে সিটিটিসি অভিযান চালিয়ে তাদের নেটওর্য়াক ভেঙে দিতে সক্ষম হয়। বিভিন্ন সময় তাদের আস্তানা শনাক্ত করে অভিযান চালানো হয়।সিটিটিসির তথ্যে নব্য জেএমবির সর্বশেষ আমির মাহাদী হাসান জনি তুরস্কের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।পরে তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে। এই সংগঠনে আর আগের মতো শক্তিশালী নেই।বর্তমানে তারা অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে।তারপরেও তারা থেমে নেই, তাদের যেসব অনুসারী ওই সময় বাইরে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।তারা আবার সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।
মাহাদী হাসান জনির পর যিনি সংগঠিত করার চেষ্টা করেন তাকেও গ্রেপ্তার করেছে সিটিটিসি জানিয়ে আসাদুজ্জামান বলেন, এর বাইরে আনসার আল ইসলাম সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।সম্প্রতি নেত্রকোনায় তাদের একটি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়েছে। এরপর যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে- তাতে মনে হচ্ছে তারা আবার সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু সংগঠিত হওয়ার আগেই সিটিটিসি তাদের শনাক্ত করছে।এই মুহূর্তে সার্বিক পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
২০২১ সালের পর বাংলাদেশে আর জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেনি উল্লেখ করে তিনি জানান, সেটা বিশ্ব জঙ্গিবাদ প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে। আমরা মনে করি, বর্তমানে জঙ্গিদের বড় কোনে হামলা ও সংগঠিত হওয়ার সুযোগ নেই। তারপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিক থেকে কাজ করা হচ্ছে। তারা (জঙ্গিরা) বেশি সক্রিয় সাইবার স্পেসে। তাদের সদস্য সংগ্রহ, প্রচারণা ও ট্রেনিং সবকিছু সাইবার স্পেসনির্ভর। বর্তমানে সাইবার স্পেসকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক অনলাইন সার্ভেলেন্সে চলছে, সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে অভিযান চলছে।
সাইবার স্পেসে জঙ্গিদের মোকাবিলা করার সক্ষমতা সিটিটিসির আছে কিনা- জানতে চাইলে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, এটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। তারা প্রতিদিন নিত্য নতুন অ্যাপ ব্যবহার করছে। সেই অ্যাপের ফিচার এমন যে পূর্বের কোনো রেকর্ড পাওয়া যায় না। তারপরও সিটিটিসি কাজ করে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে শনাক্ত করতে পারছে।
পলাতক জঙ্গির বিষয়ে সিটিটিসির প্রধান বলেন, পলাতক জঙ্গি দুইজন সিটিটিসির হাতেই গ্রেপ্তার হয়। তারা সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি ছিল। তাদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে তাদের কয়েকটি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু অভিযানের আগেই তারা স্থান পরিবর্তন করে ফেলেছে।