রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪
25 Nov 2024 10:01 pm
৭১ভিশন ডেস্ক:- সাধারণত শুক্রবার জুমার নামাজের পর মুসল্লিরা গোরস্থানে কবর জিয়ারত করতে যান এবং সেখানে যথেষ্ট ভিড় সৃষ্টি করেন দেখা যায়। এ থেকে প্রশ্ন এসে যায়, শুক্রবারে কবর জিয়ারত করা কি আবশ্যক এবং অধিক সওয়াবের কাজ?
কবর জিয়ারত যে কোনো দিনে যে কোনো সময়ে করা যেতে পারে। কোনো বিশেষ দিনে বা বিশেষ সময়ে কবর জিয়ারতের জন্য বিশেষ ফজিলতের বিষয়ে কোনো সহিহ হাদিস নেই। এ বিষয়ে একটি প্রচলিত হাদিস আছে যে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতি জুমায় তার মা-বাবা বা তাদের একজনের কবর জিয়ারত করবে, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে এবং মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহারকারীদের মধ্যে গণ্য করা হবে।’ (আল-মুজামুল আউসাত, হাদিস : ৬১১৪)।
কবরের সালাম
কবর জিয়ারতের বান্দা গুনাহ ছেড়ে দিয়ে নেক আমলের দিকে অগ্রগামী হয় বান্দা। তাই ইসলামের প্রথম দিকে কবর জিয়ারতের অনুমতি না থাকলেও পরে রাসুল (সা.) কবর জিয়ারতের অনুমতি দেন। এ প্রসঙ্গে হাদিসে বলা হয়েছে, ‘আমি তোমাদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন থেকে কবর জিয়ারত করো। কারণ, তা দুনিয়াবিমুখতা এনে দেয় এবং আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (ইবনে মাজাহ: ১৫৭১) কবরস্থানে গিয়ে সর্ব প্রথম সালাম দিতে হয়। আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর। (হে কবরবাসী তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।
কবর জিয়ারতের দোয়া:
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ أَنْتُمْ سَلَفُنَا وَنَحْنُ بِالأَثَرِ
উচ্চারণ: ‘আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর; ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম, আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আসার।’
অর্থ: ‘হে কবরবাসী! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের ক্ষমা করুন। তোমরা আমাদের আগে কবরে গিয়েছ এবং আমরা পরে আসছি।’ আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসূল (সা.) মদিনার কবরবাসীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এই দোয়া পাঠ করেন।’ (তিরমিজি: ১০৫৩)
অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, একবার নবী করীম (সা.) একটি কবর জিয়ারত করতে গিয়ে বলেন السَّلامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤمِنينَ وإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاحِقُونَ
উচ্চারণ: ‘আসসালামু আলাইকুম দারা ক্বাওমিম মুমিনিন ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লা-হিকুন’
অর্থ: মুমিন এই ঘরবাসীদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ আমরা আপনাদের সঙ্গে মিলিত হব। (মুসলিম: ২৪৯)
কবর জিয়ারতের নিয়ম:
পবিত্র অবস্থায় কবরস্থানে গিয়ে প্রথমে সালামের উল্লেখসহ উল্লিখিত দোয়াগুলোর যেকোনো একটি পড়বেন। এরপর দরুদ শরিফ, সুরা ফাতিহা, সুরা ইখলাস, আয়াতুল কুরসি পাঠ করবেন। এ ছাড়া অন্য যেসব সুরা আপনার মুখস্থ আছে ও আপনার কাছে সহজ মনে হয় সেগুলো পড়ে কবরবাসীর জন্য মাগফিরাতের দোয়া করবেন।
জুমার দিন কবর জিয়ারত করার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি প্রতি জুমায় তার মা-বাবা বা তাদের একজনের কবর জিয়ারত করবে, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহারকারীদের মধ্যে গণ্য করা হবে।’ (আল মুজামুল আউসাত: ৬১১৪)
তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, কবরস্থানে গিয়ে এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যা শিরকে পর্যায়ে চলে যায়। যেমন কবরবাসীর কাছে কোনো কিছু কামনা করা, কবরের মাটি ছুঁয়ে সালাম বা সিজদা করা, কবরে মান্নত বা দানখয়রাত তথা গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি, ডিম দেয়া ইত্যাদি।
কবরের পাশে কান্না করা, হা-হুতাশ করাকে ইসলামে নিন্দনীয় বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আপনজনের কবরের পাশে গেলে মনের অজান্তে চোখের পানি চলে আসা স্বাভাবিক। তবে সেখানে গিয়ে হা-হুতাশ করা উচিত নয়।
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) মহিলা কবর জিয়ারতকারী, তার ওপর মসজিদ নির্মাণকারী ও তাতে বাতি প্রজ্বালনকারীকে অভিশাপ দিয়েছেন। (আবু দাউদ: ৩২৩৬)
ডেইলি-বাংলাদেশ