শুক্রবার, ১৫ মার্চ, ২০২৪
22 Nov 2024 12:03 pm
৭১ভিশন ডেস্ক:- মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা মক্কার নির্দিষ্ট একটি এলাকাকে হারাম তথা সম্মানিত ও নিরাপদ ঘোষণা করেছেন। এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই এই শহর (মক্কা) যেদিন আল্লাহ আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন সেদিনই হারাম (সম্মানিত) ঘোষণা করেছেন। এটা আল্লাহর হারাম করার কারণে কেয়ামত পর্যন্ত হারামই থাকবে’। (বুখারি: ৩১৮৯)
হারাম বলতে বোঝায় স্থানটি সম্মানিত এবং এখানে বিশেষ কিছু কাজ হারাম (নিষিদ্ধ), যেগুলো সাধারণভাবে হালাল। হারাম শরিফে কেউ আশ্রয় নিলে সে নিরাপদ হয়ে যায়। হারাম শরিফে প্রতিশোধ নেওয়া ও রক্তপাত নিষিদ্ধ। হারামের ভূমিতে শিকার বধ করাও জায়েজ নয়। বৃক্ষ কর্তন করা বৈধ নয়। এখানে পশুপাখিরাও নিরাপদ।
পবিত্র কোরআনের ঘোষণা- اِنَّمَاۤ اُمِرۡتُ اَنۡ اَعۡبُدَ رَبَّ هٰذِهِ الۡبَلۡدَۃِ الَّذِیۡ حَرَّمَهَا وَ لَهٗ کُلُّ شَیۡءٍ ۫ وَّ اُمِرۡتُ اَنۡ اَکُوۡنَ مِنَ الۡمُسۡلِمِیۡنَ ‘আমি তো আদিষ্ট হয়েছি এই নগরীর রবের ইবাদত করতে, যিনি একে করেছেন সম্মানিত। সবকিছু তারই। আমি আরো আদিষ্ট হয়েছি যেন আমি আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হই’। (সূরা: নামল, আয়াত: ৯১)
হারামের সীমানা কী হবে, সেটাও আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। আল্লাহ তাআলা জিবরাইল (আ.) এর মাধ্যমে ইব্রাহিম (আ.)-কে হারামের সীমানা দেখিয়ে দেন। তিনি জিবরাইলের নির্দেশনামতে সীমানা স্তম্ভ স্থাপন করেন। মক্কা বিজয় পর্যন্ত এ অবস্থাতেই সেটি অপরিবর্তিত ছিল। ওই বছর রাসূলুল্লাহ (সা.) তামিম ইবন আসাদ আল-খুজায়ি (রা.)-কে প্রেরণ করে তা সংস্কার করেন। এরপর ওমর (রা.) তার খিলাফতকালে চারজন কুরাইশ ব্যক্তিকে পাঠিয়ে আবারও তা সংস্কার করেন। হারামের সীমানা মক্কার চারপাশব্যাপী বিস্তৃত। তবে সবদিকের দূরত্ব এক সমান নয়। বর্তমানে মক্কা প্রবেশের সদর রোডে হারামের সীমারেখার একটি নির্দেশনা লাগানো আছে, যা নিম্নরূপ-
- পশ্চিম দিকে জেদ্দার পথে ‘আশ-শুমাইসি’ নামক স্থান পর্যন্ত। যাকে ‘আল হুদায়বিয়া’ বলা হয়। এটি মক্কা থেকে ২২ কিমি দূরত্বে অবস্থিত।
-পূর্বে ‘ওয়াদিয়ে উয়ায়নাহ’ নামক স্থানের পশ্চিম কিনারা পর্যন্ত, যা মক্কা থেকে ১৫ কিমি দূরত্বে অবস্থিত।
- উত্তরে ‘তানঈম’ নামক স্থান পর্যন্ত। এটি মক্কা থেকে ৭ কিমি দূরত্বে অবস্থিত। বর্তমানে এখানে একটি মসজিদ আছে, যা মসজিদে আয়েশা নামে বিখ্যাত।
-উত্তর-পূর্ব দিকে ‘জি-ইরানাহ’ এর পথে শারায়ে মুজাহেদিনের গ্রাম পর্যন্ত, যা মক্কা থেকে ১৬ কিমি দূরত্বে অবস্থিত।
- দক্ষিণে ‘তিহামা’ হয়ে ইয়েমেন যাওয়ার পথে ‘ইজাআত লিবন’ নামক স্থান পর্যন্ত, যা মক্কা থেকে ১২ কিমি দূরত্বে অবস্থিত।
কাবার চারপাশে গড়ে ওঠা মসজিদই হারাম শরিফ বা মসজিদে হারাম। এই মসজিদের নামের পেছনেও মক্কার হারাম এলাকার ব্যাখ্যাগুলো প্রযোজ্য। অর্থাৎ মহান আল্লাহ এই মসজিদকে সম্মানিত করেছেন, পাশাপাশি এর সীমানায় বিশেষ কিছু কাজ ইসলামে হারাম ঘোষিত।
বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা কেবলা নির্ধারণের সময় পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব তুমি পবিত্রতম মসজিদের দিকে তোমার মুখমণ্ডল ফিরিয়ে নাও এবং তোমরা যেখানে আছ তোমাদের মুখ সেদিকেই প্রত্যাবর্তিত করো’। (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৪৪)
কাবাঘরের সম্মান ও মর্যাদার কারণে পায়খানা প্রসাবের সময় তা সামনে বা পেছনে রাখতে নিষেধ করেছেন নবীজি (সা.)। একইভাবে কেবলার দিকে ফিরে সহবাস করাও নিষিদ্ধ। ইসলামি শরিয়তের এই বিধানের রহস্য হলো, আল্লাহর ঘর ও নিদর্শনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন তোমাদের কেউ পায়খানা-প্রস্রাব করে, তখন যেন সে কেবলার দিকে মুখ বা পিঠ দিয়ে না বসে’। (সহিহ বুখারি: ৩৯৪)
কাবাঘরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার শামিল। আর কাবাঘরের প্রতি অসম্মান মহান স্রষ্টার প্রতিই অসম্মান। এজন্যই আল্লাহ তাআলা কাবাঘরের তাওয়াফ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং কাবার দিকে ফিরে নামাজ আদায় করতে বলেছেন। আর তা করতে বলেছেন পূতঃপবিত্র অবস্থায়।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনাবলির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করল, নিশ্চয়ই তা অন্তরে বিদ্যমান আল্লাহভীতির অনুকূল’। (সূরা: হজ, আয়াত: ৩২)
এছাড়াও মসজিদুল হারামে সালাত আদায়ের মর্যাদা সবচেয়ে বেশি। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার এই মসজিদে সালাত আদায় করা মসজিদ হারাম ব্যতীত অন্য যেকোনো মসজিদে এক হাজার রাকাত সালাত আদায় করার চেয়ে উত্তম, আর মসজিদ হারামে এক রাকাত সালাত আদায় করা (মসজিদ নববী ব্যতীত) অন্য যেকোনো মসজিদে এক লাখ রাকাত সালাত আদায় করার চেয়ে উত্তম’। (ইবনে মাজাহ: ১৪০৬)
বেশিরভাগ আলেমগণের মতে, নামাজের এই অতিরিক্ত সওয়াব শুধু কাবাঘরের চারপাশের মসজিদেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং হারামের সম্পূর্ণ এলাকাকে তা অন্তর্ভুক্ত করে। হারামাইন অর্থ দুটি হারাম বা দুটি সম্মানিত স্থান। মক্কা শরিফ ও মদিনা শরিফকে একত্রে হারামাইন শরিফাইন বলা হয়।