বৃহস্পতিবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২৪
24 Nov 2024 01:07 am
বগুড়া প্রতিনিধিঃ-বগুড়ায় করোনাকালীন সময়ের পর থেকে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে শুরু করেছে পোষা প্রাণী পালনকারীদের সংখ্যা। কেউবা পুষছে শখে আবার কেউবা নিজের নি:সঙ্গতার সঙ্গী হিসেবে আপন করে নিয়েছে দেশী-বিদেশী নানা পোষ্য প্রাণীকে। তাইতো সময়ের প্রয়োজনে পোষা প্রাণীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে জেলায় গড়ে উঠছে পেট এ্যানিমেল ডেডিকেটেড চেম্বার যেখানে সাধারণ মানুষের মতোই তাদের পালকের হাত ধরে চিকিৎসা নিচ্ছে পোষ্য প্রাণীরা। জানার আগ্রহ থেকে বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলা গড়ে ওঠা জেলার একমাত্র পেট এ্যানিম্যাল ডেডিকেটেড চেম্বার ডাক্তার আকাশ পেট কনসালটেন্সিতে গিয়ে চোখে পড়ে এই বিশেষায়িত চেম্বারের ব্যস্ততা।
কথা হয় চেম্বারেটিতে নিজের লাসা প্রজাতির একটি বিদেশী পোষা কুকুরের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্যে আসা শহরের খান্দার মিশন এলাকার বাসিন্দা প্রকৌশলী অন্তি হেমব্রোমের সাথে। তিনি জানান, বাবার মৃত্যুর পর তাদের আদরের পোষ্যটি তাদের কষ্ট ভোলাতে পাশে থেকেছে। পরিবারের অন্য সদস্যদের যেমন যত্ন নিতে হয় তেমনি আগলে রাখতে হয় পোষ্যটিকেও। বলেন, নিয়মিত ভ্যক্সিনেশন, ঋতু পরিবর্তনের সময় স্বাস্থ্য পরীক্ষায় আগে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হতো যা এখন এই চেম্বারের মাধ্যমে খুব সহজে সেবা পাচ্ছেন তারা।
জানা যায়, বগুড়া শহরে এখন পোষা প্রাণীর সংখ্যা ৬ হাজারেরও বেশি যে তালিকায় দেশী-বিদেশী কুকুরের পাশাপাশি রয়েছে পার্সিয়ান, মিক্সড, স্কটিশ, জিনজার ও এক্সোটিক জাতের বিড়ালও যার পালনকারীদের সংখ্যা অনেকেটাই বেড়েছে করোনাকালীন সময়ের পর থেকে। তাইতো অন্তির মতো অনেকেরই এখন নিয়মিত আসতে হয় বিভিন্ন পেট এনিম্যাল চেম্বারে। আর ডাক্তার আকাশ পেট কনসালটেন্সি শহরের প্রাণকেন্দ্রে হওয়ায় আর সেবার মান অন্যান্য চেম্বারের থেকে ভাল হওয়ায় ভীড়টা কিছুটা বেশি এখানে। কথা বলি চেম্বারে আসা আরও কয়েকজন পোষাপ্রাণীর পালকদের সাথে তারা বলেন, সন্তানের মতোই তার কাছে প্রিয় তাদের পোষ্যটি। কারো কারো সন্তান জন্ম নেয়ার সময় করতে হয়েছিলো সিজারও যা সাধারণ মানুষের মতোই সকল প্রক্রিয়া।
কথা হয় বগুড়ার একমাত্র পেট এ্যানিমেল ডেডিকেটেড চেম্বারের ডাক্তার আকাশের সঙ্গে। জানান, মানুষের যেমন নানা অনুখ হয় প্রাণীদের অসুখও ঠিক তেমনি। তাইতো মানুষের মতোই তাদের চেম্বারে প্রাণীদের জন্যে রয়েছে বিভিন্ন রোগের ভ্যাক্সিনেশন সুবিধা, কৃমিনাশক প্রক্রিয়া, অক্সিজেন সাপোর্ট, শ্বাসকষ্টতে নেবুলাইজেশন, হিট থেরাপি, ভাইটাল সাইন মনিটরের ব্যবস্থাসহ জরুরী প্রয়োজনে নিয়মিত সার্জারিও করতে হচ্ছে তাদের। এছাড়াও তাদের চেম্বার সর্বদা জীবাণুমুক্ত রাখতে তারা যথেষ্ট স্থান রেখেছে যাতে পোষা প্রাণীদের চিকিৎসা করাতে এসে তারা যেন আবার অসুস্থ না হয়ে পরে। চেম্বার চালুর পর থেকেই তারা বেশ ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন যাতে তারা আরও সুপরিকল্পিতভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদানের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। তবে পোষা প্রাণীদের চিকিৎসা সেবায় তারা নুন্যতম মূল্য নিলেও সড়কের পরিচয়হীন প্রানীদের চিকিৎসা তারা দিচ্ছেন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে জানান এই তরুণ চিকিৎসক।
এদিকে বিশেষায়িত চেম্বারের গুরুত্ব বাড়ার প্রসঙ্গে জেলা ভেটেরিনারি হাসপাতালের সার্জন ডাঃ মোঃ সাইদুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে যেভাবে বগুড়াসহ সারাদেশে পোষা প্রাণীর সংখ্যা বাড়ছে সে তুলনায় সরকারি পর্যায়ে চিকিৎসাকেন্দ্র অপ্রতুল। তাই সময়ের প্রয়োজনে তৃণমূলে এমন পেট এনিম্যাল চেম্বারের গুরুত্ব রয়েছে। তাই ধীরে ধীরে প্রণয়ন করা হচ্ছে এ সংশ্লিষ্ট নীতিমালাও যাতে করে পোষ্য পালনকারীদের কষ্ট অনেকটাই লাঘব হবে। তবে কেউ যেন সঠিক ডিগ্রী ছাড়া এমন চেম্বার খুলে বসতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বলেন। আর এ পেশায় এখন ডাক্তার আকাশের মতো তরুণেরা যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে তার তিনি ভূয়সী প্রশংসা করেন।
এছাড়াও এ প্রসঙ্গে জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ শফিউল আজম বলেন, শুধু প্রাণী পুষলেই নয় তাদের স্বাস্থ্যের যত্ন ও নিয়মিত হেলথ চেকআপের প্রয়োজন রয়েছে। জুনোটিক ডিজিস যা প্রাণী ও মানুষের মাঝে ছড়ায় তা প্রতিরোধে পেট এ্যানিমেল ডেডিকেটেড চেম্বারের অবশ্যই গুরুত্ব রয়েছে।
জানা যায়, মানুষের মনস্তাত্ত্বিক গঠনে পোষা প্রাণীর ভূমিকা রয়েছে। শহরে বসবাসরত পোষাপ্রাণীর মালিকরা- পোষাপ্রাণী নেই এমন নাগরিকদের চেয়ে ৪১ শতাংশ কম বিষন্নতায় ভোগেন এমনটি উঠে এসেছে বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণাতেও। তাইতো দিন দিন বাড়ছে পোষ্য পালনকারীদের সংখ্যা আর তার সাথেই পাল্লা দিয়ে গড়ে উঠতে শুরু করেছে এমন পেট এ্যানিমেল চেম্বারও।