সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৩
22 Nov 2024 01:34 pm
৭১ভিশন ডেস্ক:- এবার আর আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করবে না জাতীয় পার্টি। দলটি ঘোষণা দিয়েছে একক নির্বাচনের। জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু জানান, দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতেই এ সিদ্ধান্ত।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ–জাতীয় পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা এবার নির্বাচনে আসছেন। অন্যদিকে, বিএনপিসহ ১২ টি রাজনৈতিক দলের কোনো প্রার্থী এই নির্বাচনে নেই।
এবার জাতীয় পার্টির লাঙ্গল নিয়ে নির্বাচন করতে চেয়েছেন ৩০৪ জন। মোট ১৮ টি আসনে লাঙ্গলের বিপরীতে ২ জন করে প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বিএনপি এই নির্বাচনে না আসায় জাতীয় পার্টিকে দ্বিতীয় বড় দল হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর দাবি, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হলেই ভোট দেবে জনগণ।
চুন্নু বলেন, ‘অ্যান্টি আওয়ামী লীগ ভোট এদেশে বেশি। ভোটাররা যদি আসে তাহলে ডেফিনেটলি আমরা ভালো রেজাল্ট করবো। এরজন্য এখানে আসনের প্রশ্ন না। আমরা সব সময়ই কথাটা বলে এসেছি যে আমরা একটা নিশ্চয়তা চাই যে নির্বাচনের পরিবেশ হবে, যে পরিবেশে ভোটাররা আসবে। নিবিঘ্নে আসতে পারবে।’
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে জাতীয় পার্টি?নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে জাতীয় পার্টি?দলটির নেতারা বলছেন,আগের নির্বাচনগুলোতে জোটবদ্ধ হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জাতীয় পার্টি। লাভ হয়েছে আওয়ামী লীগের। তাই এবার সক্ষমতা অনুযায়ী প্রার্থী দেয়া হয়েছে।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘২৮০টা সিটেও যদি আমি নির্বাচন করতে পারি তাহলে আমার যদি ৫ হাজার, ৭ হাজার, ২০ হাজার করে ভোট আসে তাহলে আমি মনে করি, নতুন প্রজন্ম যারা লাঙলকে দেখেনি তাদের সে সুযোগ হবে। আমার এমপি দুটা আসলেও আমার সংগঠন কিন্তু দাঁড়িয়ে যাবে।’
সমঝোতার মাধ্যমে কিছু আসনে সুবিধা নেয়ার বিষয়টিও উড়িয়ে দেন জাতীয় পার্টির নেতারা।
নব্বইয়ের দশকে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের পর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট করেছে দলটি। ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সরকার গঠন করতে জাতীয় পার্টির সহায়তা নেয় আওয়ামী লীগ। সেই নির্বাচনে ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ১৪৬টি। জাতীয় পার্টি পায় ৩২টি এবং বিএনপির আসন ছিল ১১৬টি।
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের দুই বছর আগে বিএনপি, জামায়াত এবং ইসলামী ঐক্যজোটের সাথে জোট গঠন করে এরশাদের জাতীয় পার্টি। ভোটের ঠিক আগ মুহূর্তে জোট ছেড়ে বেরিয়ে যায় দলটি। তবে দল ভেঙে একটি অংশ বিজেপি নামে থেকে যায় সেই জোটের সাথে।
নির্বাচনে কারা এল, কারা এল নানির্বাচনে কারা এল, কারা এল না
২০০৭ সালে জাসদ, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরাম ও এলডিপির সাথে জাতীয় পার্টিকেও জোটে নেয় আওয়ামী লীগ। অবশ্য এই জোট টেকেনি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে বাদ পড়ে এলডিপি ও গণফোরাম। সে সময় জোটে জাতীয় পার্টিই ছিল আওয়ামী লীগের মূল শরিক।
সেই নির্বাচনে মহাজোটের কাছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট কোনো পাত্তাই পায়নি। নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে এই জোট।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের বর্জনের মধ্য দিয়ে ২০১৪ সালে আরেক দফা জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া আসনে ভোট করে জাতীয় পাটি। নির্বাচনের পর সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবেও মর্যাদা পায় দলটি। বিরোধী দলে থাকলেও দলটির বেশ কয়েকজন নেতা সেই সরকারে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এ নিয়ে সে সময় দলটিকে নানা সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।
এর পর বহুবার জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের জোট থেকে বের হয়ে যেতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত জোটেই থেকে যায়। ২০১৮ সালেও আওয়ামী লীগের সাথে অনেকটা সমঝোতা করেই নির্বাচনে আসে তারা। ওই নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি হলে ২২টি আসন নিয়ে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের স্থান ধরে রাখে জাতীয় পার্টি।