শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর, ২০২৩
22 Nov 2024 04:56 pm
৭১ভিশন ডেস্ক:- জুমার নামাজ মুসলিম উম্মাহর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি ফরজ ইবাদাত। আর জুমার দিনের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য অন্যান্য দিনের চেয়ে অনেকগুণ বেশি।
তবে এ জুমার নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের জন্য শরিয়তের কিছু বিধান রয়েছে। যেমন-
জুমার নামাজ পুরুষদের জন্য ফরজ; নারীদের জন্য নয়। তাই নারীরা বাড়িতে জুমার সময়ে যথা নিয়মে জোহরের নামাজ পড়বে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের দিকনির্দেশনাও এমনই।
হাদিসে পাকে এসেছে- হজরত তারিক ইবনে শিহাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- الْجُمُعَةُ حَقٌّ وَاجِبٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ فِي جَمَاعَةٍ إِلاَّ أَرْبَعَةً عَبْدٌ مَمْلُوكٌ أَوِ امْرَأَةٌ أَوْ صَبِيٌّ أَوْ مَرِيضٌ
অর্থ: ‘জুমার নামাজ প্রত্যেক মুসলমানের উপর জামাতের সঙ্গে আদায় করা ওয়াজিব (অবশ্যক কর্তব্য)। কিন্তু তা চার প্রকার লোকের উপর ওয়াজিব নয়। (তারা হলো)-
১. ক্রীতদাস
২. নারী
৩. শিশু ও
৪. রুগ্ন ব্যক্তি।’ (আবু দাউদ ১০৬৭)
উল্লেখিত হাদিসের আলোকে এটা সুস্পষ্ট যে, নারীর জন্য জুমার নামাজ পড়া আবশ্যক নয়। তারা জুমার সময় জোহরের নামাজ আদায় করবে। তবে কোনো নারী যদি বাড়ির সন্নিকটে অবস্থিত তাদের জন্য আলাদা নিরাপদ নামাজের ব্যবস্থা থাকে তবে এমন মসজিদে জুমা আদায় করতে পারবে। তারা সেখানে স্বামী বা মাহরাম পুরুষ (তথা পিতা, ভাই, সন্তান, দাদা, চাচা) এর সঙ্গে জুমা সমজিদে যায় তাহলে সেখানে পুরুষের সঙ্গে আলাদা ব্যবস্থাপনায় একই সময়ে জুমার নামাজ পড়বে। যদিও নারীদের জন্য মসজিদে না গিয়ে বাড়িতে নামাজ পড়াই অধিক উত্তম।
নারীরা যদি জুমা মসজিদে যায় তবে তারা অবশ্যই পূর্ণ পর্দা সহকারে যাবে, পরপুরুষদের থেকে দূরে অবস্থান করবে এবং আতর-সুগন্ধি ব্যবহার করবে না। হাদিসের দিকনির্দেশনা এমনই।
হজরত আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- لاَ تَمْنَعُوْا إِمَاءَ اللهِ مَسَاجِدَ اللهِ ، وَلَكِنْ لِيَخْرُجْنَ وَهُنَّ تَفِلاَتٌ
অর্থ: ‘তোমরা আল্লাহর বান্দিদের মসজিদে যেতে নিষেধ করো না। তবে তারা যেন কোনো রকম সাজ-সজ্জা ও সুবাস-সুগন্ধ না লাগিয়ে বের হয়’। (আবু দাউদ ৫৬৫, মুসনাদে আহমাদ ২/৪৩৮)
আমাদের মনে রাখতে হবে- বাড়িতে শুধু নারীদের নিয়ে আলাদাভাবে জুমার নামাজ অথবা এককভাবে জুমার নামাজ বৈধ নয়। সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটির ফতোয়ায়ও তা বলা হয়েছে-
إذا صلت المرأة الجمعة مع إمام الجمعة كَفَتهَا عن الظهر ، فلا يجوز لها أن تصليَ ظهر ذلك اليوم ، أما إن صلت وحدها فليس لها أن تصلي إلا ظهرا ، وليس لها أن تصلي جمعة ” انتهى
অর্থ: ‘যদি কোনো নারী ইমামের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করে তাহলে তা জোহর নামাজের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। (অর্থাৎ পরে পুনরায় তার জোহর নামাজ পড়ার প্রয়োজন নাই)। আর সে যদি একাকি নামাজ পড়ে তাহলে সে কেবল জোহর পড়বে। এককভাবে তার জন্য জুমা পড়া বৈধ নয়’। (ফাতাওয়া লাজনাহ দায়েমা/৭৩৩৭)
উল্লেখ্য, জুমার সালাতের খুতবার সময় সালাত আদায় করা জায়েজ। নারীদের জন্য জুমার সালাতের শেষ হওয়ার অপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই, যেহেতু জুমার সালাত তাদের ওপর ওয়াজিব নয়। সুতরাং তারা জুমার সালাতের জন্য অপেক্ষা করবেন না, বরং যখনই আজান হবে, অর্থাৎ ওয়াক্ত হয়ে যাবে, তখনই জোহরের সালাত আদায় করে নেবেন, যদি তারা জুমায় অংশগ্রহণ না করেন। তবে নারীরা জুমাতে অংশগ্রহণ করলে তারা জুমার সালাতের জন্য অপেক্ষা করবেন এবং ইমামের সঙ্গে জুমার সালাত আদায় করবেন। দুটাই নারীদের জন্য জায়েজ।
নারীদের জুমাতে অংশগ্রহণ করার বিষয়েও আল্লাহর নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশনা রয়েছে এবং অংশগ্রহণ করতেও তিনি বাধা দেননি বা নিষেধ করেননি। যদি জুমাতে অংশগ্রহণ করেন, তাহলে তাদের পক্ষ থেকে জোহরের সালাত আদায় করা হয়ে যাবে, তাদের আর ভিন্নভাবে জোহর আদায় করতে হবে না। কিন্তু যদি তারা জুমার সালাতে অংশগ্রহণ না করেন, তাহলে জোহরের সালাত আদায় করতে পারেন। এর জন্য শর্ত নয় যে ইমাম সাহেব মসজিদে সালাত আদায় শেষ করবে অথবা খুতবা অথবা সালাত দুটোই শেষ করবে, তার পরে নারীরা ঘরে সালাত আদায় করবেন। বিষয়টি হলো যখনই ওয়াক্ত হয়ে যাবে, তখনই জোহরের সালাত আদায় করতে পারবেন নারীরা। এটি তাদের জন্য জায়েজ রয়েছে।
পবিত্র জুমা দিবসে মুসলমান ধনী-দরিদ্র, উচু-নীচু, ছোট-বড় সবাই একই কাতারে দাঁড়িয়ে জুমার নামাজ আদায় করে। কেন না মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা পবিত্র জুমার নামাজ আমাদের ওপর অপরিহার্য করেছেন।
সুতরাং জুমার নামাজ মুসলিম উম্মাহর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদাত। আর জুমার দিনের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য অন্যান্য দিনের চেয়ে অনেকগুণ বেশি। জুমার নামাজ এবং এ দিনের আমল বর্জন থেকে বিরত থাকা জরুরি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ দিনের নামাজ ও আমল যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।