মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর, ২০২৩
01 Apr 2025 11:06 pm
![]() |
বগুড়া থেকে সংবাদদাতাঃ-সরকারের সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর সরকার কর্তৃক নির্ধারিত নীতিমালা থাকলেও বগুড়ায় কতিপয় মাদকাসক্ত নিরাময় ও পুনার্বাসন কেন্দ্রের প্রধানদের নিজস্ব বিধিমালা ও আইন প্রণয়নের ফলে চিকিৎসাধীন মাদকাসক্তদের ভোগান্তীও হয়রানি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বগুড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অধীনে নিবন্ধিত ১৪ টি মাদকাসক্ত নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র রয়েছে অবশ্য ১৫ টি থাকলেও সম্প্রতি দুর্নীতি পরিচালকের স্বেচ্ছাচারিতা এবং নানা কারণে বি.এন.এ নামক মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিবন্ধন বাতিল করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বি এন এ রিহাব সেন্টার এর মত আরেক গুটিকয়েক নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের নানাবিধ অনিয়ম প্রচলন থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারনে দৌরাত্ব দিনদিন আরো বেড়েই চলেছে।
অভিযোগ রয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডি.এন.সি) কর্তৃক প্রত্যেক রোগীর জন্য খাবারের পরিমান নির্ধারিত থাকলেও অধিকাংশ কেন্দ্রগুলিতে দেয়া হয় না। সকালে নাস্তার পর বেলা ১১টাই হালকা নাস্তা ও দুপুরে মাথাপিছু দুইশ গ্রাম চালের ভাতের সাথে উন্নত মানের খাবার, বিকালে হালকা উন্নত মানের নাস্তা এবং রাতে মাথাপিছু ১৮০ গ্রাম চালের ভাতের সাথে উন্নত মানের খাবার পরিবেশনের জন্য তালিকা তৈরি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত আছে। আশ্চর্যজনক বিষয় যে অধিকাংশ পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোর এই খাবারের পরিমাণ রোগীদের অর্ধেকও দেয়া হয় না। তাছাড়া কর্তৃপক্ষের প্রতিদিনের খাবার মেনু নির্ধারণ করা হয়ে থাকে যা খুবই নিম্ন মানের । কোন রোগী এসব নিয়ে সমালোচনা করলে তাকে হয়রানির স্বীকার হতে হয়।
সম্প্রতি বগুড়া নামাজগড়স্থ একটি মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে সেন্টার পরিচালকের অসতর্কতার কারণে প্রায় ১৫ জন মাদকাসক্ত রোগী পালিয়ে গেলে রোগীর অভিভাবকদের বিভাগীয় ডি.এন.সি কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ করলেও স্থানীয় ডি.এন.সি কর্তৃপক্ষ উক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া থেকে বিরত থাকে যা রহস্যজনক।
বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলাধীন আশেকপুর ইউনিয়ন পরিষদের জোড়া মন্ডল পারাস্থ নিউ ওয়ার্ল্ড নামক একটি মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্র গোপন পরিদর্শন করে প্রতিষ্ঠানটির নাজুক অবস্থা চোখে পড়ার মত। প্রতিষ্ঠানটির ভিতরে এবং দ্বিতীয় তলায় মোট সাত টি শৌচাগার থাকলেও পয়নিষ্কাশন এর জন্য নেই কোন সেফটি ট্যাংক। ফলে প্রতিষ্ঠানের ভিতরে মাদকাসক্তদের দুর্গন্ধ সহ্য করতে হয়। এছাড়াও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্তৃক নিবন্ধনের সময় লাইসেন্স পত্রে সুস্পষ্টভাবে সার্বক্ষণিক একজন প্যারামেডিক চিকিৎসক সপ্তাহে তিন দিন একজন অভিজ্ঞ মাদকাসক্ত ও মানসিক বিশেষজ্ঞ দ্বারা রোগীদের নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা থাকলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তো দূরের কথা এখানে কখনোই প্যারামেডিক ডাক্তারের স্বাক্ষাতও মেলেনা। একজন অন্য রোগ বিশেষজ্ঞ দ্বারা মাসে এক থেকে দুইবার নামমাত্র চিকিৎসা দেয়া হয়।
পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোতে রোগীদের মাদকদ্রব্যের কুফল সম্পর্কে জানানোর জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্তৃক প্রদত্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন এডিকশন প্রফেশনাল দ্বারা নিয়মিত ক্লাস সেশন গুলো নেয়ার কথা থাকলেও নিরক্ষর ব্যক্তি দিয়ে সেশন গুলো পরিচালনা করা হয়। যা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের সম্পূর্ণ অপরাধ ও বেআইনী। আরো উল্লেখ্য যে মাদকাসক্ত নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোতে কোন প্রকার মানসিক রোগী ভর্তি নিষিদ্ধ থাকলেও এসব কেন্দ্রগুলো কোন রকম নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে দেদারসে মানসিক রোগী এরা ভর্তি করে। মানসিক রোগের চিকিৎসা ও সেবা প্রদানের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পৃথক লাইসেন্স থাকার নিয়ম থাকলেও দুইটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর কারো কোন প্রকার বৈধ কাগজপত্র নেই। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে সেন্টার পরিচালনা পরিষদের প্রধানদের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্তৃক সম্পূর্ণ ০৮ পর্বের ইকো প্রশিক্ষণ গ্রহণের বিধান থাকলেও বগুড়ার অধিকাংশ কেন্দ্র পরিচালকদের কোন প্রকার প্রশিক্ষণ নেই। বগুড়ার একটি মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রের নাম সর্বস্ব চেয়ারম্যান রাজশাহী বিভাগীয়
ডি এন সি'র অতিরিক্ত ও মহাপরিচালক কে তার মামা পরিচয় দিয়ে আইন অমান্য করে তার অনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বগুড়ার ঐ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নাটোর জজ আদালতে একটি মাদক মামলার রায় অপেক্ষায় রয়েছে।
বগুড়ার নিরাময় কেন্দ্র গুলোতে ১০ জন রোগী রাখার জন্য অনুমোদন দেয়া হলেও প্রতিটি কেন্দ্রের দুই থেকে ছয় গুন পর্যন্ত রোগী রাখলেও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তারা রহস্যজনক কারনে সবসময় নীরবতা পালন করে আসছে।
তাছাড়াও বগুড়া শহরের পূর্বাংশে মাটিডালি-লিচুতলা বাইপাস মহাসড়ক পার্শ্বে অবস্থিত সব কয়েকটি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র (ডিটক্স) গুলির কর্তৃপক্ষের সাথে স্থানীয় ডি.এন.সি কর্তৃপক্ষের সাথে সখ্যতার কারণে মাদক চিকিৎসা দিন দিন লাটে উঠছে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।
সংবাদের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বগুড়ার তিনটি (০৩) মাদকাসক্ত নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের সাথে ফোনে যোগাযোগ করার জন্য চেষ্টা করলে সংবাদ সংক্রান্ত কথা শোনার সাথে সাথে তাদের মুঠোফোন বন্ধ করে দেন।