শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
22 Nov 2024 12:51 pm
৭১ভিশন ডেস্ক:- হাফেজ আবুল ফজল শিহাবুদ্দিন ইবনে হাজর আসকালানী (রহ.) জগদ্বিখ্যাত মুহাদ্দিস, প্রখ্যাত আলেম। তিনি বুখারি শরিফের প্রসিদ্ধ শরাহ বা ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফতহুল বারীসহ ১৫০টি কিতাব লিখেছেন। তাঁর অন্যতম একটি লেখনী মুনাব্বেহাত। এ গ্রন্থটিতে প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় অনেক উপদেশপূর্ণ হাদিস শরিফ ও উপদেশ বাণী তিনি সংকলন করেছেন।
ইসলামের পথে চলা তথা সালেকিনদের জন্য এ ধরনের হাদিস শরিফ ও উপদেশ বাণী পাঠ করা ও জানা বিশেষ প্রয়োজন। আজ তাঁর কিতাব থেকে সংকলিত কয়েকটি মহামূল্যবান উপদেশ আমরা জানব এবং মানার চেষ্টা করব।
প্রিয় নবীজি হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এমন দু'টি স্বভাব আছে যার চেয়ে উত্তম আর কিছ নেই। ১. আল্লাহতায়ালার ওপর ইমান আনা, ২. মুসলমানদের উপকার করা। দু'টি স্বভাব আছে যার চেয়ে মন্দ আর কিছু নেই ১. আল্লাহতায়ালার সঙ্গে শিরক করা ২. মুসলমানদের অনিষ্ট করা।
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, আলেমের সঙ্গে উঠাবসা করা এবং জ্ঞানী লোকের কথা শোনা তোমাদের ওপর ওয়াজিব, কেননা আল্লাহতায়ালা হিকমতের নূর দ্বারা মুর্দা দিল জীবিত করেন, যেরূপ বৃষ্টির পানি মুর্দা জমিনকে জীবিত করে।
ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি বিনা সম্বলে (নেকিহীন) কবরে গেল সে যেন বিনা জাহাজে সমুদ্রে যাত্রা করল।
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ফারুক (রা.) বলেছেন, দুনিয়ার সম্মান অর্জন হয় সম্পদের দ্বারা আর আখেরাতের ইজ্জত লাভ হয় নেক আমল দ্বারা।
ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত ওসমান (রা.) বলেছেন, দুনিয়ার চিন্তা-ভাবনা দিলের অন্ধকার বা কালিমা সৃষ্টি করে আর আখেরাতের চিন্তা-ভাবনা দিলের নূর সৃষ্টি করে।
ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইলম তালাশ করে বেহেশত তাকে তালাশ করে। যে ব্যক্তি গুনাহ তালাশ করে দোজখ তাকে তালাশ করে।
প্রখ্যাত সাহাবি ইয়াহইয়া বিন মুয়াজ (রা.) বলেছেন, কোনো সম্মানী লোক গুনাহ করে না, আর কোনো বুদ্ধিমান দুনিয়াকে আখেরাতের ওপর প্রাধান্য দেন না।
সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিনটি বিষয় মুক্তিদান করে আর তিনটি বিষয় ধ্বংস করে। তিনটি বিষয় পদমর্যাদা বৃদ্ধি করে আর তিনটি বিষয় গুনাহের কাফফারা হয়।
মুক্তিদায়ক বিষয়- ১. প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহর ভয় করা, ২. দরিদ্রতা ও সচ্ছলতায় মধ্য পন্থা অবলম্বন করা, ৩. খোশ মেজাজ ও রাগ উভয় অবস্থায় ন্যায়বিচার করা।
ধ্বংসকারী বিষয়গুলো- ১. কঠোর কৃপণতা করা ২. নফসের খায়েশ বা কুপ্রবৃত্তির তাঁবেদারি করা ৩. আত্মগৌরব করা।
পদমর্যাদা বৃদ্ধিকারী কাজ হলো- ১. সালাম প্রচার করা, ২. ক্ষুধার্তকে আহার দান করা, ৩. লোকজন ঘুমালে রাত জেগে নামাজ পড়া।
গুনাহের কাফফারা হলো- ১. শীতকালে সকাল বেলায় পুরোপুরি অজু করা, ২. নামাজের জন্য পায়ে হেঁটে চলা, ৩. এক ওয়াক্ত নামাজ পড়ে অন্য ওয়াক্তের জন্য অপেক্ষা করা।
বিখ্যাত ফকিহ সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা তোমার ওপর যা ফরজ করেছেন তা আদায় কর, তাহলে তুমি সর্বাপেক্ষা বড় আবেদ হবে। হারাম বস্তু থেকে নিজেকে পরিহার কর তাহলে সর্বাপেক্ষা বড় জাহেদ (দরবেশ) হবে আর আল্লাহতায়ালা তোমার কিসমতে যা রেখেছেন তাতে রাজি থাক তাহলে সর্বাপেক্ষা বড় ধনী হবে।
হজরত সালেহ মারকাদি (রা.) কোনো পুরনো গৃহে গমন করে বললেন, হে গৃহ! তোমার প্রথম অধিবাসীগণ আজ কোথায়? তোমার পূর্ববর্তী নির্মাণকারীগণ আজ কোথায়? তোমার আগের বাসিন্দাগণ কোথায়? তখন গায়েবি আওয়াজ হলো- তাদের সব চিহ্ন বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং তাদের আমলগুলো তাদের গলার হার হয়ে রয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন
মুফতি মুহাম্মদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী