মঙ্গলবার, ২৭ জুন, ২০২৩
25 Nov 2024 02:12 am
ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধাঃ গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুর ইউনিয়নের কারেনবাজার এলাকায় তিস্তা নদীর তীর সংরক্ষণে প্রায় ছয় কোটি টাকার প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে প্রকল্পে ৭৫ কেজি গানি ব্যাগের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে ৩০ কেজির পাটের ব্যাগও।
এছাড়া ব্যাগে সিমেন্টের ভাগ দেওয়া হয়েছে খুবই কম, ব্যবহার করা হয়েছে মবিলযুক্ত-কালিমাখা পচা এবং ছেঁড়া-ফাটা ব্যাগ। এমনকি বালির পরিবর্তে কাদামাটি মিশ্রিত বালির ব্যবহার করা হয়েছে। শুধু তাই নয় ৭৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলানোর কথা থাকলে ফেলা হয়েছে ৫৫-৬০ হাজার ব্যাগ। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে এ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে টাস্কফোর্সের বাতিল করা বস্তাও।কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রতি বছর বর্ষায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ১১নং হরিপুর ইউনিয়নের কারেনবাজার এলাকায় নদীভাঙনে শত শত জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়। বাস্তুহারা হয় হাজার হাজার পরিবার। নদীভাঙনের হাত থেকে ওই এলাকাকে রক্ষায় কয়েক দফায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের ভাঙনকবলিত এলাকায় বৈঠক হয়। সর্বশেষ স্থানীয় সংসদ সদস্য, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা এবং এলাকাবাসীর সমাবেশ হয় কারেনবাজারে। নদীভাঙনের হাত থেকে ওই এলাকাকে রক্ষায় কারেনবাজারে তীর সংরক্ষণের দাবি করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
পরে ওই এলাকায় ভাঙন রোধে ৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকার জরুরি বিশেষ বরাদ্দ দেয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। বরাদ্দের টাকায় ১১নং হরিপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কারেনবাজারের পূর্ব ও পশ্চিমে এক কিলোমিটার তিস্তা নদীর তীর রক্ষায় ২৫০ কেজির ধারণক্ষমতার ৭৫ হাজার জিও ব্যাগ এবং ৭৫ কেজি ওজনের স্যান্ড (বালু) সিমেন্ট গানি ব্যাগ ৮১ হাজার ৭৪৬টি বসাতে কাজ শুরু হয় ২০২২ সালের ২৪ মে। কাজটি গাইবান্ধা জেলার মধ্যে হলেও কুড়িগ্রাম সংলগ্ন হওয়ায় তা বাস্তবায়ন করছে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। আর কাজের দায়িত্ব পায় রংপুরের ঠিকাদার হাসিবুল হাসান।স্থানীয়দের অভিযোগ, দরপত্র অনুযায়ী ৭৫ কেজি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন স্যান্ড (বালু) সিমেন্ট গানি ব্যাগের সঙ্গে ৩০ কেজি ওজনের চালের ব্যাগও দেওয়া হয়েছে। কাজের সময়ই সেসব ব্যাগ ছিঁড়ে গেছে। ব্যাগগুলো ছিল মবিল ভরানো, পুরাতন। এছাড়া ২৫০ কেজির ধারণক্ষমতার ৭৫ হাজার জিও ব্যাগের ফেলানোর কথা কিন্তু ফেলা হয়েছে ৫৫-৬০ হাজার বস্তা। গানি ব্যাগে সিমেন্টের ভাগ কম। জিও ব্যাগগুলোতে পাশে থেকেই মাটি ও কাদা মিশ্রিত বালু ভরে বসানো হয়েছে। কোনো কোনো ব্যাগ ভরানো হয়েছে শুধু মাটি দিয়ে। এছাড়া যেসব জিও বস্তা টাস্কফোর্স বাতিল করেছিল তাও ডাম্পিং করা হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। তারা জানান, যে মানের কাজ হয়েছে এ বছরের বন্যায় সব ভেসে যাবে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কেবল গচ্ছা গেল সরকারে ৬ কোটি টাকা। এতে করে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
কারেনবাজারের স্থানীয় বাসিন্দা ও মণ্ডলের হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তারেকুল ইসলাম বলেন, কাজে চরম অনিয়ম হয়েছে। বস্তায় সিমেন্ট মিশ্রিত খুবই কম ব্যবহার করা হয়েছে। অধিকাংশ জিও ব্যাগ মাটি ও কাদামাটি দিয়ে ভরাট করে বসানো হয়েছে। এ বছরের বন্যাতেই এসব ধসে যাবে।
স্থানীয় বাসিন্দা জাফর দেওয়ানী বলেন, এখন কী দেখবেন? বন্যার পানিতে তো সব তলিয়ে গেছে। যা আছে নিজের চোখেই দেখেন কী পরিমাণ দুর্নীতি করা হয়েছে। বাতিল করা বস্তাও ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা বাধা দিয়ে কাজ বন্ধ করেছিলাম। চিলমারীর সাব ঠিকাদার আনোয়ার চিলমারী থেকে কয়েক শ মাস্তান ভাড়া করে এনে আমাদের হুমকি দিয়েছে। চাঁদাবাজির মামলার ভয় দেখিয়েছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, কাজে ফাঁকি দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করতেই এই প্রকল্প দুই ভাগে ভাগ করে কাজ করা হয়েছে। এমপির প্রতিনিধি মিজানুর রহমান কারেনবাজারের পশ্চিম অংশে এবং চিলমারীর সাব ঠিকাদার আনোয়ার পূর্ব অংশে কাজ করেছে। দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে কাজের মূল ঠিকাদার হাসিবুল হাসানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।মন্তব্য জানতে কুড়িগ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুনেরর সঙ্গে মুঠোফোন কথা হলে স্যান্ড সিমেন্টের গানি ব্যাগের অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, অভিযোগের বিষয়ে ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কাজ এখনও শেষ হয়নি। পানি আসায় কাজ বন্ধ রয়েছে। এখন পর্যন্ত ২ কোটির কিছু বেশি টাকা ছাড় করা হয়েছে। বন্যা শেষ হলে এস্টিমেট মোতাবেক কাজ বুঝে নেওয়া হবে। বাকি কাজ সন্তোষজনকভাবে বুঝে না দেওয়া পর্যন্ত বিল ছাড় করা হবে না। তবে এ সময় ঠিক কতভাগ কাজ শেষ হয়েছে সেটি তিনি জানাতে পারেননি।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৪ মে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনও কাজ শেষ হয়নি।