সোমবার, ২৯ মে, ২০২৩
22 Nov 2024 01:49 pm
জাহাঙ্গীর আলম মানিক, সাপাহার নওগাঁ প্রতিনিধিঃ- নওগাঁর বরেন্দ্র এলাকা সাপাহার আমের বানিজ্যিক রাজধানী হিসেবে আম উৎপাদনে খ্যাতি অর্জন করেছে। বরেন্দ্র ভূমি হওয়ায় এই এলাকার আমও বেশ সুস্বাদু ও মিষ্টি যা এখন দেশের গুন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
জলবায়ুর পরিবর্তন ও ফরমালিনের অধিক ব্যবহারের ফলে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ আম নষ্ট হয়। নিরাপদ আম উৎপাদন নিশ্চিত না হওয়ায় বিদেশে আম রফতানি ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
শতভাগ নিরাপদ আম উৎপাদনে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে । আমের বাহ্যিক সৌন্দর্য বাড়ানো, কৃষকদের কীটনাশক প্রয়োগ বাবদ খরচ কমানো ও বিদেশে রফতানিযোগ্য আম উৎপাদনের লক্ষ্যে নওগাঁর সাপাহার উপজেলায় প্রতিবছরই বাড়ছে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতির ব্যবহার।
ফ্রুটব্যাগিং পদ্ধতিটি বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি। যে সময়ে আমচাষিরা চিন্তিত ও আতঙ্কিত ফল বাগানে কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ে। তখন দেশে আবিষ্কৃত হলো এই পদ্ধতির, যা পরিবেশবান্ধবও বটে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে, এ বছর নওগাঁয় ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আমচাষ হয়েছে। যার মধ্যে সাপাহার উপজেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে। বর্তমানে এই উপজেলার আম চাষীরা ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছেন। অধিক মুনাফা ও রোগ বালাইয়ের হাত থেকে আম রক্ষা করতে এই পদ্ধতি আমচাষিদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
সফল ও অভিজ্ঞ আমচাষীদের মতে, অধিক কীটনাশক স্প্রে, পোকামাকড় ও বিরূপ আবহাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আম রক্ষা করতে এই পদ্ধতি খুবই কার্যকর। এছাড়াও ফ্রুটব্যাগিং পদ্ধতি আম সংরক্ষণ করা একটি সহজ ও উপযুক্ত উপায় যা আমের গুণগত মান ও রং সতেজ রাখতে খুবই কার্যকর এবং এসব আমের গুনগত মান ভালো হওয়া বিদেশে ও পাঠানো হচ্ছে।
সাপাহার বাজার আম ব্যাবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান জানান, আম উৎপাদনে ফ্রুটব্যাগিং পদ্ধতি গত কয়েক বছর যাবৎ চলছে। প্রাথমিক অবস্থায় হাতে গোনা কয়েকজন চাষী এই পদ্ধতি ব্যবহার করলেও এখন এলাকার অনেক চাষীই এই পদ্ধতি ব্যবহার করে উৎপাদিত আম দেশের বাহিরে পাঠিয়ে অধিক লাভবানও হচ্ছেন ।
ফ্রুটব্যাগিং করা আমের চাহিদা ভোক্তাদের কাছে অনেক বেশি। কারণ ফ্রুটব্যাগিং এর কারনে আম থাকে কীটনাশক মুক্ত। পোকামাকড়, বিরূপ আবহাওয়া ও বাইরের ক্ষতিকর কোনও প্রভাব এই ব্যাগের মধ্যে ঢুকতে পারে না।
উপজেলার মদন শিং গ্রামের তরুণ আমচাষী মাসুদ রানা জানান ,বিগত বছরের ন্যায় এবার ও তিনি বাগানে ফ্রুটব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন এবং আম ফ্রুটব্যাগিং করার কারনে বাজারে চাহিদা বেশি থাকে বিভিন্ন পোকামাকড় থেকে আম রক্ষা পায়, আম থাকে বিষমুক্ত।
উপজেলা কৃষি সম্প্রারণ কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান টকি জানান, চলতি বছর ফ্রুটব্যাগিং প্রক্রিয়া এখন চলমান আছে তবে গত বছরের তুলনায় এবার ফ্রুটব্যাগিং এর হার দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান চলতি বছর ২৫০ থেকে ৩০০ মেট্রিকটন আম বিভিন্ন দেশে রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া মৌসুমের শেষের কিছু জাতের মধ্যে আশ্বিনা , বারি-৪ ও গৌরমতি আমেও ফ্রুট ব্যাগিং করা হয়।যার ফলে কৃষকগণ শেষে সময়ে ও বেশ ভালো দামে আম বিক্রি করতে পারে। বর্তমানে এলাকার আম চাষীদের মাঝে এই ফ্রুটব্যাগিং পদ্ধতি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।