বৃহস্পতিবার, ১৮ মে, ২০২৩
25 Nov 2024 12:18 pm
ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধাঃ- এ বছর বোরো ধান চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। সরকার নির্ধারিত ১ হাজার ২০০ টাকা মণে ধান বিক্রি করে মুখে হাসি ফুটেছে তাদের। প্রতি মণে কৃষকের লাভ হচ্ছে ২৮০ টাকা। এমনটি বলছে কৃষি ও খাদ্য বিভাগ। অধিকাংশ চাষির বক্তব্যও তাই। তবে, কোনো কোনো চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ব্লাস্টের আক্রমণে। ব্লাস্টের কারণে কাক্সিক্ষত ফলন পাননি তারা।
পলাশবাড়ী উপজেলার কৃষিবিদ কৃষি অফিসার ফাতেমি কাোসার মিশু জানিয়েছে, এ বছর বোরো চাষে প্রতি হেক্টর (সাড়ে সাত বিঘা) জমিতে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৭৪৫ টাকা। এসব খরচের মধ্যে রয়েছে বীজে ১ হাজার ৯৫০, ইউরিয়া সার ৫ হাজার ৮৩০, টিএসপি ৩ হাজার ৬৩০, এমওপি ১ হাজার ৮০০, জিপসাম ৯০০, দস্তা ১ হাজার ৮৭৫, জৈব সার ২ হাজার, বালাইনাশক ৩ হাজার, পারিবারিক শ্রম ১০ হাজার, ভাড়া শ্রম ৫০ হাজার, কর্ষণ ৬ হাজার ৭৫০, সেচ ২২ হাজার ৫০০, জমির ভাড়া ৩০ হাজার ও মূলধনের সুদ ৪ হাজার ৫১০ টাকা।
কৃষি বিভাগের দাবি এ বছর উপজেলায় প্রতি হেক্টরে গড়ে ৬ হাজার ৩০০ কেজি অর্থাৎ ১৫৭ মণ ৫ কেজি ধান উৎপাদন হয়েছে। সেই হিসেবে প্রতি বিঘায় ধান উৎপাদন হয়েছে ২১ মণ। খরচ হয়েছে ১৯ হাজার ২৯৯ টাকা। কৃষি বিভাগের হিসেব অনুযায়ী প্রতি কেজি ধানের উৎপাদন খরচ পড়েছে ২৩ টাকা।
সরকার এ বছর বোরো ধানের দাম নির্ধারণ করেছে প্রতি কেজি ৩০ টাকা। সেই হিসেবে কৃষকের প্রতি কেজি ধানে লাভ হচ্ছে ৭ টাকা। মণে ২৮০ টাকা লাভ হবে। আর প্রতি বিঘা জমিতে যদি ২১ মণ ধান হয় তাহলে লাভের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫ হাজার ৮৮০ টাকা। এ বছর যশোরে ১ লাখ ৬০ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধান উৎপাদন হয়েছে ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৬৬০ মেট্রিকটন।
খাদ্য বিভাগের দাবিও এ বছর লাভবান হবেন পলাশবাড়ীর কৃষক। বর্তমানে খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ১১০ টাকায়। তার দাবি, এখনো খাদ্য গুদামে ধানের দাম বেশি। তাছাড়া, এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় ধানে চিটা ও আর্দ্রতার পরিমাণ কম। ফলে, গুদামে ধান এনে অন্যান্য বছরের মতো আর্দ্রতার ঝামেলা থাকবে না বললেই চলে।
তিনি জানান, উপজেলার খাদ্য গুদামে চাষি ধান দেয়ার পরপরই ডব্লিউ কিউ এস সি স্লিপ পাবেন। ওই স্লিপ ব্যাংকে জমা দেয়ার সাথে সাথে টাকা পেয়ে যাবেন। কৃষক তার সুবিধামতো ছয়টি তফসিলি ব্যাংকের যেকোনোটি থেকে বিল নিতে পারবেন। একজন কৃষক খাদ্য গুদামে তিন মেট্রিকটন অর্থাৎ ৭৫ মণ ধান দিতে পারবেন। সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী নিবন্ধিত একজন কৃষক তার উৎপাদন খরচের উপর ২১ হাজার টাকা লাভ পাবেন। এ কারণে এ বছর খাদ্য গুদামে কৃষক ধান দিবেন বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
বোরো চাষ নিয়ে কথা হয় উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের লিপন মন্ডল, মিজানুর রহমান ও গোয়ালপাড়া গ্রামের আলম বিশ্বাসের সাথে।
কৃষক আলম জানান, এ মৌসুমে তিনি ২৬ কাঠা জমিতে বোরো ধান চাষ করেন। ২৬ কাঠায় ২৬ মণ ধান পেয়েছেন। খরচ হয়েছে ২২ হাজার টাকার মতো। ধান বিক্রি করেছেন ১ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে। সেই হিসেবে ৩১ হাজার ২০০ টাকা পেয়েছেন। তার লাভ হয়েছে ৯ হাজার ২০০ টাকা।
মিজান বলেন, তার এক বিঘা জমিতে খরচ হয় ২৫ হাজার টাকা। তিনি ধান পেয়েছেন ৩৫ মণ। খোলাবাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি করেছেন ১ হাজার ১৮০ টাকায়। সেই হিসেবে ৩৫ মণ ধান বিক্রি করে পেয়েছেন ৪১ হাজার ৩০০ টাকা। বোরো চাষ করে তিনি ১৬ হাজার ৩০০ টাকা লাভ করেছেন।
তবে, লোকসানের কথা বলেছেন লিপন মন্ডল। এ বছর তিনি সাড়ে ১৩ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ধান চাষ করেন। প্রতি বিঘা বর্গা নেন ৮ হাজার টাকায়। এক বিঘা জমিতে তার খরচ হয়েছে ২৪ হাজার টাকা। কিন্তু আশানুরূপ ফলন পাননি। ব্লাস্ট আক্রান্ত হওয়ায় তার ফলন বিপর্যয় হয়েছে। এ কারণে প্রতি বিঘায় তার ৮ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।