রবিবার, ০৫ মার্চ, ২০২৩
23 Nov 2024 08:07 am
শনিবার (৪ মার্চ) স্থানীয় সময় বিকেলে কাতার ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে (কিউএনসিসি) জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠককালে এ আহ্বান জানান তিনি।
স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ৫ম জাতিসংঘ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন কাতারের রাজধানী দোহায়। শনিবার স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টার কিছু পর তাকে বহনকারী বিমানটি সেখানকার হামাদ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান কাতারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরে নিরাপত্তা প্রহরা আর মোটর শোভাযাত্রায় হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।
সব ঠিক থাকলে কাতারে রোববার (৫ মার্চ) সকালে এলডিসি সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে যোগ দিয়ে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে শনিবার সফরের শুরুতেই স্থানীয় সময় বিকেলে ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
এতে মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জোর দাবি তোলেন প্রধানমন্ত্রী। এ যুদ্ধে পুরো দুনিয়া ভোগান্তিতে পড়েছে বলে জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে সংকটগুলো তুলে ধরা হয় বাংলাদেশের পক্ষে।
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।
এ কে আব্দুল মোমেন জানান, স্যাংশনের (যুদ্ধের) কারণে পণ্যের চালান সময়মতো না আসায় দেশে দেশে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। এতো মানুষের কষ্টে বা যুদ্ধে লাভবান দেশগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বানও জানান শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব যত দ্রুত সম্ভব চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে বিশেষ উদ্যোগ নিতে পারেন। তবে তিনি মত দেন যে, যুদ্ধ থেকে লাভবান দেশগুলোর দুর্ভোগ কমাতে অন্য দেশগুলোকে সহায়তা করা উচিত।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের নাগরিকরা যাতে তাদের স্বদেশে ফিরে যেতে পারেন, সেজন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতি আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা ভাসানচরে ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের বিষয়ে তার সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন। এ সময় তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবকে আরও রোহিঙ্গাকে সেখানে স্থানান্তর করতে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান।
প্রধানমন্ত্রী ও জাতিসংঘ মহাসচিব উভয়েই একমত হয়েছেন যে, সেখানে রাজনৈতিক অঙ্গনে কোনো পরিবর্তন আসুক বা না আসুক রোহিঙ্গাদের শিগগিরই মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে।
বৈঠকে আন্তোনিও গুতেরেস উন্নয়ন, কূটনীতি এবং কোভিড মহামারি মোকাবেলায় অভূতপূর্ব সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বলেন যে, ‘অর্জিত সাফল্যগুলো খুবই উৎসাহজনক’।
জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্বের জন্য তারা গর্বিত, যিনি কোভিড-১৯ পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবেলা করেছেন এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সংকট মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার বিকেলে (স্থানীয় সময়) কাতার জাতীয় কনভেনশন সেন্টারে ইউএনজিএ-র প্রেসিডেন্ট সাবা করোসির সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন।
ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা বৈঠকে সাউথ-সাউথ দেশগুলোকে সম্পৃক্ত করে একটি আন্তর্জাতিক ফোরাম গঠনের প্রস্তাব দেন, যাতে উন্নত দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি অনুয়ায়ী সেভাবে সাহায্য না করায় জনগণের কল্যাণে সম্ভাবনা ও করণীয় খুঁজে পাওয়া যায়।
এ প্রসঙ্গে তিনি একদিনের জন্য এ বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সহযোগিতা কামনা করেন।
জবাবে ইউএনজিএ সভাপতি পরবর্তী সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের আগে এ উদ্যোগ নেয়া উচিত বলে অভিমত দিয়ে বলেন, তারা আগামী জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বার্ষিক সমাবেশের কাজের জন্য নিযুক্ত থাকবেন।
বৈঠকে ইউএনজিএ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং এটিকে ‘একটি অলৌকিক ঘটনা’ বলে উল্লেখ করেন। দুই নেতা পানি ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়েও আলোচনা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর সফরের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, এ সম্মেলনে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে সহজ উত্তরণের জন্য বৈশ্বিক সমর্থন চাইবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ৫-৯ মার্চ দোহায় অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে ‘এ’ গ্রুপের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে এটি ঢাকার শেষ অংশগ্রহণ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে ফোরাম থেকে উত্তরণ লাভ করতে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। তিনি এলডিসি-৫ সম্মেলনে তার অংশগ্রহণ ছাড়াও কাতারের আমিরসহ অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।
বুধবার (৮ মার্চ) পর্যন্ত কাতারে অবস্থানকালে দেশটির আমিরের সঙ্গে তার বৈঠকের কথা রয়েছে। সেখানে জ্বালানি খাতে সহযোগিতাসহ দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলো আলোচনায় স্থান পাবে।