শনিবার, ০৪ মার্চ, ২০২৩
27 Nov 2024 08:25 pm
ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধাঃ নদীবেষ্টিত গাইবান্ধার মানুষকে বন্যা-খড়াসহ নানা দুর্যোগ মোকাবেলা করে বাঁচতে হয়। চরাঞ্চলসহ এ জেলার অধিকাংশ মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে। এরই মধ্যে ক্রমান্বয়ে লাগামহীনভাবে বাড়ছে বিভিন্ন পণ্য দ্রব্যের দাম। সবজি, চাল-ডাল, ডিজেল-বিদ্যুৎ, মাছ-মাংস, বস্ত্র, ওষুধ, প্রসাধনীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম এখন আকাশচুম্বী। এমতাবস্থায় খেটে খাওয়া ও মধ্যবিত্ত পরিবারে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তাদের দৈনন্দিন জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠেছে। যেন ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে হাঁসফাঁস।
সম্প্রতি গাইবান্ধা জেলা শহরসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে দেখা গেছে, দ্রব্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির চিত্র। অস্থিতিশীল দামের কারণে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণহীন। যেন সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষগুলোর। সেই সঙ্গে আসন্ন রমজান মাসে পণ্যসামগ্রীর দাম আরও বৃদ্ধির আশঙ্কায় তাদের কপালে পড়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ।
ভোক্তারা জানায়, বর্তমান বাজারে প্রতিকেজি চাল ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা, আটা ৬৫ টাকা, ব্রয়লার ২৪০, দেশি মুরগি ৬০০ টাকা, গরুর মাংস ৬৫০ টাকা, ছাগলের মাংস ৯০০ টাকা, ছোলা ১৫০ টাকা, চিনি ১১০ টাকা, ডাল ৯০ থেকে ১৪০ টাকা, সয়াবিন ১৮৫ টাকা, ফল ২০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া শাক-সবজি, সাবান, ডিটারজেন্ট পাউডার, প্রসাধনী, বস্ত্র, দুধসহ সকল প্রকার পণ্যসামগ্রীর দাম আগের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে। অর্থাৎ জীবন ধারণের উপযোগি প্রতিটি পণ্য অগ্নিমূল্য। এদিকে, সব ধরণের জিনিসের দামবৃদ্ধির প্রতিবাদে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বিক্ষোভ-মিছিল সমাবেশ অব্যাহত রেখেছে।
একাধিক ব্যক্তি জানায়, একটি পরিবারের জীবন-জীবিকার গতি নির্ভর করে তাদের আয়, চাহিদা এবং দ্রব্যমূল্যের ওপর। প্রতিটি পণ্যের দাম যখন সহনীয় পর্যায়ে থাকে তখন মানুষের জীবন কাটে স্বস্তিতে। আর যদি দাম ঊর্ধ্বগতি থাকে তখন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের বেড়ে যায় অশান্তি। বিশেষ করে খেতমজুর কিংবা দিন আনে দিন খাওয়া মানুষগুলো নাভিশ্বাস হয়ে ওঠেছে। তাদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা বিরাজ করছে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মধ্যবিত্তরা চরম বেকায়দায় পড়েছেন। আর গরীবরা হচ্ছেন আরও গরীব। যার কারণে ইদানিং বেড়েছে ভিক্ষবৃত্তি পেশা। একই সঙ্গে চুরি-ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কাণ্ডও বেড়েছে । সম্প্রতি গাইবান্ধা সদরে অটোবাইক চালক রাজুকে গলা কেটে হত্যা করে তার বাইকটি ছিনতাই করেছে দৃর্বৃত্তরা। শুধু রাজুই নয়, এ জেলা ছিনতাইকারীর কবলে পরে খুনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। বিশেষ করে গরীব পরিবারে জীবিকা নির্বাহে গ্রাম থেকে শুরু করে হাট-বাজার ও পার্কগুলোতে ভিক্ষুকের আনাগোনা অনেকটা বেড়ে গেছে।
ছইমন বেওয়া নামের এক বৃদ্ধা বলেন, এক সময়ে রিকশাচালক ছেলের বাড়িতে খেয়ে কোনমতে জীবন পার করতাম। এখন সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় ছেলেটা তেমন সংসার চালাতে পারছে না। তাই আমি ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমেছি।
খবির উদ্দিন নামের এক ক্ষেতমজুর বলেন, আমার ৬ সদস্যের সংসার। বর্তমানে যেভাবে জিনিপত্রের দাম বেড়েছে সেভাবে আয় বাড়েনি। এর আগে করোনা ধকল না সামলাতেই এখন জিনিপত্রের বেসামাল দামে দিনদিনে সংসারে ঋণের বোঝা ভারী হচ্ছে।
কৃষক আজগর আলী জানান, ধানসহ অন্যান্য কৃষি ফসল উৎপাদনে পরিবারের মৌলিক চাহিদাপূরণ করে আসছিলেন। এরই মধ্যে কৃষিপণ্যসহ সার-কিটনাশক, বিদ্যুৎ-ডিজেলের অস্বাভাবিক দামের কারণে চরম হিমসিম খাচ্ছেন তিনি।
আজাদুল ইসলাম নামের এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বলেন, ইদানিং সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে। এখন মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ না পারছে অধিক দামে জিনিস কিনতে, না পারছে কারও কাছে হাত পাততে। এই অস্থিতিশীল অবস্থা নিরসনে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।
সমাজসেবক শহিদুল ইসলাম মন্ডল বলেন, আগের তুলনায় মানুষের আয় বেড়েছে। কিন্তু জীবনযাত্রায় ব্যয়ও বেড়েছে অনেকটাই। তাই গ্রামীণ পর্যায়ে সহজ শর্তে ঋণদানসহ বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো দরকার।
স্থানীয় মাদরাসা সুপার মোসলেম উদ্দিন বলেন, আসন্ন পবিত্র রমজান মাস নাজাতের মাস হলেও এবার আতঙ্কের মাস মনে হচ্ছে। অগ্নিমূল্যে খাদ্যপণ্য কিনে রোজা করা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।
নিত্যপণ্যসামগ্রী বিক্রেতা নরেশ সাহা, রাজা, সুজন, রফিকুলসহ আরও অনেকে বলেন, ক্রমান্বয়ে সব কিছুর দাম বেড়ের যাওয়া বিক্রিও কমেছে। এমনকি দাম নিয়ে ভোক্তাদের সঙ্গে তর্কবিতর্ক বাঁধছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে।
গাইবান্ধা জাতীয় ভোক্তা অধিকার রংক্ষণ অধিদফতরের সরকারি পরিচালক আব্দুস সালাম বলেন, বাজার দর নিয়ন্ত্রণ রাখতে নজরদারি রাখা হয়েছে। এ নিয়ে অভিযানও চালানো হচ্ছে।