বৃহস্পতিবার, ০২ মার্চ, ২০২৩
24 Nov 2024 04:54 am
৭১ভিশন ডেস্ক:- জাতির স্বপ্নপুরুষ শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১৯৭১ সালের পহেলা মার্চ দুপুর থেকেই পাকিস্তানি শোষকদের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি তীব্র সংগ্রাম গড়ে তোলে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
বুধবার (১ মার্চ) সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে অগ্নিঝরা মার্চ নিয়ে স্ট্যাটাস দেন তিনি।
স্ট্যাটাসে জয় লিখেন, ‘‘স্বায়ত্তশাসনসহ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির ছয়টি দাবি নিয়ে, ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা করেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। এর অল্প সময়ের মধ্যেই দলের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। চষে বেড়াতে শুরু করেন বাংলার মাঠ-প্রান্তর। এ সময় ‘ছয় দফা: আমাদের বাঁচার দাবি’ শিরোনামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে দেশজুড়ে বিলি করা হয়। তুমুল গণজোয়ার শুরু হয় ছয় দফার পক্ষে। তা দেখে ভয় সৃষ্টি হয় পাকিস্তানি জান্তাদের মনে। ছয় দফা ঘোষণার পরের তিন মাসে দেশজুড়ে ৩২টি জনসভা করেন বঙ্গবন্ধু এবং প্রায় প্রতিবারই তাকে আটক করা হয়। অবশেষে বাঙালির জাগরণ দমানোর জন্য দীর্ঘ মেয়াদের জন্য জেলে ঢোকানো হয় জাতির স্বপ্নপুরুষ শেখ মুজিবকে। কিন্তু লাভ হয়নি। ছয় দফা ঘোষণা করে জাতীয় মুক্তির যে বীজমন্ত্র তিনি রোপণ করেছিলেন, তা ততদিনে শাখা-প্রশাখায় ছড়িয়ে গেছে প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে।’’
ছয় দফাকে কেন্দ্র করেই স্বাধীনতার স্বপ্নে পুরো জাতি বিভোর হয়ে ওঠে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা লিখেন, ‘এর প্রভাব পড়ে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের মোট ৩১৩ আসনের মধ্যে ১৬৭ আসনে জিতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে আওয়ামী লীগ। নৌকা প্রতীকের কান্ডারি হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে হয়ে ওঠেন অখণ্ড পাকিস্তানের সর্বোচ্চ নেতা। কিন্তু পাকিস্তানি জান্তা ও নির্বাচনে পরাজিত পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিকরা ষড়যন্ত্র করতে থাকে। অনেক টালবাহানার পর ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও স্বৈরাচার জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১ মার্চ দুপুরে সেই অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। এরপরই ফুঁসে ওঠে আপামর বাঙালি। চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু করার নির্দেশ দেন বঙ্গবন্ধু।’
‘মূলত, মার্চের প্রথম দুপুর থেকেই এই আন্দোলনের সূচনা। প্রথমে শান্তিপূর্ণভাবে পাকিস্তানি হানাদারদের অসহেযোগিতা করার নির্দেশ দেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু জান্তারা সেই আন্দোলনে গুলি চালিয়ে শতাধিক মানুষের রক্তে রাজপথ রক্তাক্ত করে তোলে। ক্রমেই কঠোর থেকে কঠোর অবস্থানের নির্দেশনা দেন বাঙালির সর্বোচ্চ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান,’ যোগ করেন জয়।
তিনি আরও লিখেন, ‘প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই এই ভূখণ্ডের সরকারি-বেসরকারি প্রশাসনের একক নেতৃত্ব চলে আসে বঙ্গবন্ধুর হাতে। দ্বিতীয় সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগেই পুরো দেশ চলতে শুরু করে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মেনে। বাস্তব অর্থে, শুধু সামরিক ছাউনিগুলো ছাড়া আর কোথাও পাকিস্তানিদের নিয়ন্ত্রণ ছিল না। ভেঙে পড়ে পাকিস্তানের সরকার ব্যবস্থা। বঙ্গবন্ধুই তখন বাংলাদেশের অঘোষিত রাষ্ট্রপ্রধান এবং ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি পরিণত হয় ‘বিকল্প রাষ্ট্রপ্রধান’-এর সদর দফতরে। অবস্থা বেগতিক দেখে, পাকিস্তানি জান্তা ও রাজনীতিকরা ঢাকায় এসে বঙ্গবন্ধুকে আলোচনার আহ্বান জানান। রাজনৈতিক কারণে বঙ্গবন্ধু তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন, কিন্তু দেশজুড়ে অসহযোগ আন্দোলনের কার্যক্রমও গতিশীল রাখেন। পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্রে পা না দিয়ে, সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ধাপে ধাপে নির্দেশনা দিতে থাকেন বঙ্গবন্ধু। সেসব নির্দেশ মেনে স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে মুক্তির স্বপ্নে মগ্ন সাত কোটি জনতা। অবশেষে ২৫ মার্চ কালরাতে হানাদার বাহিনী ঘুমন্ত বাঙালির ওপর আক্রমণ চালালে, বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এরপর তাকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে বন্দি করে রাখা হয়। কিন্তু তার নামেই পরিচালিত হতে থাকে মুক্তিযুদ্ধ।’