শনিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২৩
23 Dec 2024 04:41 pm
ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধাঃ চলতি বোরো মৌসুমে গাইবান্ধার শুরু হয়েছে চারা রোপণের কাজ। তবে এ কাজের শুরুতে কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
কারণ- বিদ্যুৎ, ডিজেল, সার-কিটনাশকের দাম বেড়েছে। যার ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর বোরো আবাদে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে বাড়তি খরচ হবে বলে জানিয়েছে কৃষক।
সম্প্রতি গাইবান্ধার বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায়, কৃষকদের কাঙ্ক্ষিত বোরো আবাদের চিত্র। ইতোমধ্যে কাঁদা মাটিতে রোপণ করছে ধানের চারা। অন্যান্য বছরে এই চাষাবাদের সময় তাদের মুখে হাসি দেখা গেলেও এ বছর রয়েছে মলিন মুখে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ, ডিজেল, সার-কিটনাশক ও শ্রমিকসহ অন্যান্য জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ বছর বোরো আবাদের অতিরিক্ত খরচে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর বোরো মৌসুমে ১ লাখ ২৭ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। এ বছরে ১ লাখ ২৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যার এ পর্যন্ত অর্জন হয়েছে ৪৫ ভাগ। লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া ওইসব কৃষকের জমিতে সেচ দিতে বিদ্যুৎচালিত গভীর সেচযন্ত্র ২৩৯টি, অগভীর ৩ হাজার ৫০টি, ডিজেল চালিত অগভীর ২ হাজার ৯৩২টি, এলএলপি বিদ্যুৎ ১৭ ও সোলার সেচযন্ত্র রয়েছে ৩৩ টি। এসব যন্ত্র দিয়ে বোরো চাষিদের সেচের চাহিদা মেটানো হবে।
কৃষক জহির উদ্দিন জানান, গত বোরোতে ১ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করছিলেন। এতে তার সর্বমোট খরচ হয়েছিল ৮২ হাজার ৫০০ টাকা। এ বছর তাতে হেক্টর প্রতি ৯০ হাজার টাকার বেশি খরচ হতে পারে। ফলে চলতি মৌসুমে বোরো ধান আবাদের অতিরিক্ত খরচ নিয়ে চরম হিমসিম খাচ্ছেন। কারণ গত বছরে বিদ্যুৎ চালিত সেচযন্ত্র মালিককে হেক্টর প্রতি ভাড়া দিয়েছিলেন ১২ হাজার ৩০০ টাকা। কিন্তু এ বছরে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়া সেটি মেশিন মালিক ১৭ হাজার ৩০০ টাকা নিধারণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, শুধু বিদ্যুতের দামই নয়, সম্প্রতি বীজ, সার-কিটনাশক শ্রমিকের দামও বেড়েছে অনেকটাই। এজন্য সবমিলে এ বছরে হেক্টর প্রতি অতিরিক্ত প্রায় সাড়ে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।
আরেক কৃষক জলিল উদ্দিন বলেন, প্রত্যেক বছরে বোরো ফসল ঘরে নিয়ে আমার পরিবারের চাহিদা পূরণ করি। কিন্তু এ বছরে সেই কাঙ্ক্ষিত আবাদ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি। বোরো আবাদের সবকিছুর উপকরণের দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে সার সংকট, বিদ্যুতের লোডসেডিং ও প্রাকৃতি দুর্যোগের প্রভাব পড়লে পথে বসা ছাড়া উপায় থাকবে না।
বিদ্যুৎ চালিত অগভীর সেচযন্ত্রের মালিক জামাত আলী বলেন, গত বোরো মৌসুমে গৃহস্থদের কাছ থেকে বিঘা প্রতি ১ হাজার ৬৫০ টাকা নেওয়া হয়েছে। এ বছরের বিদ্যুৎ ও যন্ত্রাংশের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকদের কাছ থেকে সেচ ভাড়াও বেশি নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এখনও বিদ্যুতের নতুন বিল হাতে পাওয়া যায়নি।
কৃষি বিভাগের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তানজিমুল হাসান বলেন, সেচে কৃষকের কিছুটা খরচ বাড়লেও তাদের লোকসান হবে না। তাদের ফলন বাড়াতে এবং খরচ কমাতে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক বেলাল উদ্দিন জানান, বোরো আবাদে কৃষকদের লাভবান করতে ইতোমধ্যে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কিছু কিছু জায়গায় সমলয় পদ্ধিতে চাষাবাদ শুরু করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে কৃষকরা বোরো ধান ঘরে তুলে অনেকটাই লাভবান হবেন।