বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০২৩
26 Nov 2024 03:30 pm
আসাদ সবুজ, বরগুনাঃ শাখা ও সিঁদুর পরানোর জন্য ওই নারীকে প্রায়ই মারধর করতো স্বপন দাশ। এমনকি শীতের দিনেও শাখা সিদুর পরানোর জন্য পানিতে চুবানো হতো মিষ্টি বেগম(ছদ্মনাম)কে। তারপরে স্বপন দাশের সহযোগীতায় আইউব আলী, মিনারা মেয়েটাকে অসামাজিক কাজ করাতে বাধ্য করে। এই কথাগুলো বলেন ওই আবাসনের সাবেক মহিলা সদস্যা জনৈক ছগীরের স্ত্রী খাদিজা বেগম।
হিন্দু হয়েও মুসলিম সেজে মুসলমান মেয়েকে বিয়ে। বাড়িতে নিয়ে এসে নির্যাতন করে ভুক্তভোগী ওই মুসলিম নারীকে জোর করে পরালেন শাখা ও সিঁদুর। অসাহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে করাচ্ছেন পর পুরুষের শয্যা সঙ্গী। ঘটনাটি জানাজানি হলে গা ঢাকা দিয়েছেন অভিযুক্ত স্বামী ও তার সহযোগীরা।
শিশু বয়সেই বাবা মাকে হাড়িয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জে পালিত চাচার কাছে থেকেই বড় হয়েছেন তিনি। ভাগ্য কখনই সহায় হয়নি কপালপোড়া ভুক্তভোগী ওই নারীর। এমনকি বিয়ের পরেও স্বামীর নির্যাতন ও স্বামীর পাতানো ভাইয়ের কথায় হাড়াতে হয়েছে সম্ভ্রম। অসহায়ত্ব, স্বামী ও স্বামীর পাতানো ভাই ও তার স্ত্রীর কথায় টাকার বিনিময়ে পরপুরুষের শয্যাসঙ্গী হতে হয়েছে তাকে। সে টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন স্বামীর পাতানো ভাই ও তার স্ত্রী। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন ভুক্তভোগী হতভাগা ওই নারী। এমনকি তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করছে তার স্বামী, তার পাতানো ভাই ও তার সহযোগিরা। সাংবাদিকদের সামনে অশ্রু সিক্ত চোখে এমনি বলেন ভুক্তভোগী ওই নারী। বলছি বরগুনা সদর উপজেলার ১নং বদরখালী ইউনিয়নের ফুলতলা আবাসনের এক অসহায় নারীর কথা। ভুক্তভোগী ওই নারীর নাম মিষ্টি বেগম (ছদ্মনাম)।
আড়াই- তিন বছর আগে ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকার হাসনাবাদে গিয়ে নও-মুসলিম সেজে ভুক্তভোগী ওই নারীকে বিয়ে করেন বরগুনা সদর উপজেলার ১নং বদরখালী এলাকার জনৈক গণেশ মিস্ত্রি'র ছেলে স্বপন দাশ। বর্তমানে স্বপন ওই একই ইউনিয়নের ফুলতলা আবাসনের ৩নং ব্রাকের ৯নম্বর বাসায় বসবাস করেন। অভিযুক্ত স্বপন দাশ পেশায় একজন ওয়ার্কশপ মিস্ত্রি। এরআগেও স্বপন একজন মুসলিম নারীকে বিয়ে করেন, ওই মুসলিম নারীর মৃত্যুর পরে মিষ্টি বেগম(ছদ্মনাম) কে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছু দিন পরে অভিযুক্ত স্বপন মিষ্টি বেগমকে ঢাকায় ফেলে রেখে বরগুনায় এসে আবার বরগুনায় ঢলুয়ার এক হিন্দু নারীকে বিবাহ করে। কিছুদিন পরে এই হিন্দু নারীকে ফেলে রেখে আবারও ঢাকায় মিষ্টি বেগমের কাছে গিয়ে প্রায় তিন মাস আগে মিষ্টি বেগমকে নিয়ে বরগুনার ফুলতলা আবাসনের বাসায় স্ব-স্ত্রীক বসবাস শুরু করে। আর সেখান থেকেই নির্যাতিত জীবনের অধ্যায় শুরু হয় ৩৫ বছর বয়সী মিষ্টি বেগমের।
ভুক্তভোগী মিষ্টি বেগম (ছদ্মনাম) অশ্রু সিক্ত চোখে বলেন, আমার চাচার বাসায় গিয়ে চাচার সাথে নামাজ পড়ে নিজেকে নওমুসলিম বলে দাবী করে আমাকে বিয়ে করে অভিযুক্ত স্বপন দাশ। বিয়ের কিছু দিন ভালো কাটলেও ফেলে রেখে বরগুনায় চলে আসে স্বপন। তিনমাস আগে ঢাকায় গিয়ে আবার আমাকে বরগুনায় নিয়ে আসে। আমি মুসলিম বিধায় আমাকে হিন্দুদের মত চলাফেরা করতে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে আমার স্বামী স্বপন। একপর্যায়ে আমার স্বামীর অমানুষিক শারিরীক নির্যাতনে আমি হিন্দু সম্প্রদায়ের বৌদের মত হাতে শাখা ও কপালে সিঁদুর পরতে বাধ্য হই। এরপরে আমার স্বামীর পাতানো ভাই প্রতিবেশী আইউব আলী ও তার স্ত্রী মিনারা আমাকে পর পুরুষে শয্যা সঙ্গী হওয়ার জন্য বলতে থাকে। বিষয়টি আমি আমার স্বামীকে জানালে আমার স্বামী তার পাতানো ভাই ও তার স্ত্রীর কথা শুনতে বলে। মাস দুয়েক আগে আমাকে মিনারা তাদের দোকানের পিছনের কক্ষে ডেকে নিয়ে জোর করে আমার সেলোয়ারের ফিতা খুলে দেয় আর আইউব আলী মিনারার সামনেই আমার সাথে দৈহিক সম্পর্ক করে। আমি আমার স্বামীকে জানালে তখনও সে তাদের কথা অনুযায়ী চলতে বলে। এর কয়েকদিন দিন পর থেকেই আইউব আলী ও মিনারা বাহিরের মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমাকে তাদের সাথে জোর করে মেলামেশা করতে বাধ্য করে। আমি দৈহিক মেলামেশা না করতে চাইলেও ভয়ভীতি দেখিয়ে বরগুনার বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গিয়ে আমার সাথে অন্য পুরুষদের সাথে মেলামেশা করতে বাধ্য করতেন তারা। এমনকি ইসলামিক জলসায় গিয়ে ফিরে আসার সময়ও তাদের হাত থেকে রক্ষা পাইনি। বর্তমানে আমার স্বামীও আমার কোন খোজ খবর রাখে না। এরমধ্যে আমাকে আমার স্বামী স্বপন, আইউব আলী, মিনারাসহ আরো কয়েকজন আমাকে বেতাগী নামকস্থানে রাতে ফেলে আসে। পরে আমি ওখানকার বাজারের নৈশ প্রহরীকে আমার ঘটনার বিষয় বললে আবাসনের পাশের বাসায় একজনকে ফোন দিলে, পরে আবাসনের লোকজন ও নৈশপ্রহরীর সহয়তায় আমি বাসায় ফিরে আসি। এখন আমাকে মেরে ফেলতে চায় অভিযুক্তরা। এসময় কান্না জড়িত কন্ঠে মিষ্টি বেগম তার সাথে ঘটে যাওয়া প্রতারণা ও হীন কৃতকর্মের জন্য তার স্বামীসহ অন্যান্য দায়ীদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।
ফুলতলা আবাসনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফারুক মিয়া বলেন,মিষ্টি বেগম(ছদ্মনাম) আমাদের এখানে আসার প্রথম কয়েকদিন ভালই ছিলো। কয়েকদিন পরে দেখি মিষ্টি শাখা সিঁদুর পরে আছে, আমি জানতে চাইলে মিষ্টি বলে আমি এগুলো না পরলে আমাকে মারধর করে আমার স্বামী। এমনকি এই শীতের মধ্যে শাখা সিঁদুর পরার জন্য আমাদের সামনেই স্বপন মিষ্টিকে ঠান্ডা পানিতে চুবিয়েছে। আমার প্রতিবেশী আইউব আলী ও স্ত্রী মিনারা, মনির নামের একজন মিষ্টিকে পরপুরুষের শয্যাসঙ্গী হতে বাধ্য করেছে। আমরা এই ঘটনার বিচার দাবী করছি।
গা ঢাকা দেওয়ায় অভিযুক্ত স্বপন, আইউব আলী, মিনারাসহ কাউকেই তাদের বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তবে জানা গেছে, এলাকার কিছু প্রভাবশালী ও জনপ্রতিনিধির বারত দিয়ে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি শালিশ বৈঠকের নামে ধামাচাপা দেওয়ার পায়তারা চালাচ্ছেন একটি বিশেষ মহল।
তবে জানা গেছে, অভিযুক্ত স্বপন উপজেলার ১নং বদরখালী ইউনিয়নের পাতাকাটা গ্রামে তার বোনের বাড়িতে গা ঢাকা দিয়ে আছেন।