সোমবার, ০২ জানুয়ারী, ২০২৩
22 Nov 2024 01:21 pm
৭১ভিশন ডেস্ক:- [২ জানুয়ারি, ২০২৩] দেশের ৩৪ জন নাগরিক আজ ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলাধীন চর মুজিবনগরে নৃশংসভাবে ভূমিহীন নারী হত্যার অপরাধীদের গ্রেফতার না করে তার সহযোদ্ধাদের হয়রানির করার প্রতিবাদে নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করেছেন।
“আমরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ করছি ভোলা জেলার চর মুজিবনগরের ভূমিহীনদের উপর অত্যাচর নিপীড়ন ক্রমাগত তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। একটি অপরাধীচক্র স্থানীয় এক শ্রেনীর পুলিশের সহায়তায় এই অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। ভোলা জেলার দুলারহাট থানার চর মুজিবনগর ইউনিয়নের (শিকদারের চর) এলাকায় গত ৩০ নভেম্বর দিবাগত আনুমানিক রাত ১ টা থেকে দেড়টার মধ্যে ১৪/১৫ জন সন্ত্রাসী ভূমিহীন নেতা আলম বাচ্চুর বাড়ীতে ধারালো অস্ত্র-শস্ত্রসহ আক্রমন করে তার স্ত্রী বকুলকে হত্যা এবং তার বড় বোন মুকুলকে গুরুতর রূপে আহত করে। আলম বাচ্চু সে সময় বাড়িতে ছিলেন না। মুকুল কয়েকদিন আগেই খুলনা থেকে বোনের বাড়ীতে বেড়াতে এসেছিলন। সন্ত্রাসীরা বাড়ীতে ঢুকে রাম দা, ছুড়ি প্রভৃতি ধারালো অস্ত্র দিয়ে বকুল এবং মুকুলকে উপর্যুপুরি কোপাতে থাকে। বকুলের শরীরে ২২ টি দা’য়ের কোপের চিহ্ন পাওয়া গেছে। বকুল মুুত্যুর আগে তার বোনকে খুনীদের যে কয়জনকে শনাক্ত করতে পেরেছিলেন তাদের নাম বলে গিয়েছেন যা মৃত্যুকালীন ঘোষণার সমতুল্য।
এরপর নিহত বকুলের স্বামী আলম বাচ্চু মামলা করতে গেলে থানা পুলিশ জানায় কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা যাবেনা। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। আলম বাচ্চু অভিযুক্তদের নামসহ অভিযোগ গ্রহণ করার অনুরোধ জানান। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তা অভিযুক্তদের নামসহ অভিযোগ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। এই সময় ভোলার তজিমুদ্দিন সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: মাসুম বিল্লাহ দুলারহাট থানায় উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে পুলিশ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামী করে ঐ এলাকার অলিল চৌকিদারকে বাদী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে, যাতে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করা যায়। এরই প্রেক্ষিতে আলম বাচ্চু বাদি হয়ে ভোলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে একটি পিটিশন কেস করেছে যার নম্বর ৭৩৭/২০২২। আদালত ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে দুলার হাট থানাকে সংশ্লিষ্ট নথি আদালতে সোপর্দ করার আদেশ দেন।
এ ঘটনার পর থেকে যাদের নামে অভিযোগ রয়েছে তারা চরে বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের কাউকে গ্রেফতার করেনি। কিন্তু গত ১৪ ডিসেম্বর, ২০২২ তারিখ ভোলা র্যাব কর্তৃপক্ষ মামলার অন্যতম আসামী আসলামকে গ্রেফতার করে পুলিশে সোপর্দ করে। অন্যদিকে যারা ভ‚মিহীন নেতা আলম বাচ্চুর সাথে ঘনিষ্ঠ এবং ভূমিহীন আন্দোলনে যুক্ত তাদেরকে পুলিশ অজ্ঞাতনামার তালিকায় গ্রেফতার করার হুমকি দিয়ে চলেছে। সর্বশেষ গত ২২ ডিসেম্বর, ২০২২ আলম বাচ্চুর সাথে ভূমিহীনদের আন্দোলনের সহযোগি উক্ত এলাকার ইউ পি সদস্য মো: আব্দুল মালেক ও চরের ভূমিহীন কর্মী মান্নানকে পুলিশ এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তাদের সাথে তাদের আতœীয় স্বজন বা এলাকার কাউকে দেখা করতে দেয়া হয়নি। মালেক মেম্বারের ছেলে মো: সোহাগ অভিযোগ করেছেন, তার পিতাকে এ হত্যা মামলার ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে দেখানোর জন্য পুলিশ অকথ্য নির্যাতন করছে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য। সেই সাথে যারা আলম বাচ্চুর স্ত্রী বকুল বেগমের হত্যার বিচারের জন্য দাবি করছে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা পুলিশ অব্যাহত রেখেছে।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য চর মুজিবনগরে ভূমিহীনরা জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের সম্পূর্ণ সম্মতিতে কৃষির আবাদ করেছেন। ঐ কৃষি জমি তাদেও মধ্যে নিয়ম অনুযায়ী বন্দোবস্ত দেবার প্রক্রিয়াও চলমান।
সর্বশেষ গত ২৪ ডিসেম্বর তারিখ ভোলা এস পি অফিসে সংবাদ সম্মেলন করে ভোলা জেলা পুলিশ সুপার মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, মালেক মেম্বার চরের জমি দখলের জন্য বকুলী বেগমকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছেন। এবং তারা এর স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো, বকুল বেগমের হত্যার সময় উপস্থিত তার বড় বোন মুকুল বেগম বারবার খুনীদের নাম উল্লেখ সত্ত্বেও অভিযুক্ত আসলাম পেয়াদা, বশির ও শাহজাহান সরদারের ছেলেদের পুলিশ দেখছেনা। অথচ প্রত্যক্ষদর্শী মুকুল বেগমের সাথে কথা না বলে এস পি সাহেব কিভাবে জানলেন যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত নয়, যারা ভ‚মিহীনদের সংগ্রামে সবসময় সাহায্য করছে তারা এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত? পুলিশের এই আচরন উদ্দেশ্য প্রনোদিত এবং অপরাধীদের আড়াল করার প্রচেষ্টার নামান্তর। সেই সাথে তাদের এই কর্মকান্ড সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারের পরপন্থী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকলের ন্যায় বিচার পাওয়ার নিশ্চয়তার যে কথা বলে চলেছেন তাকেও পুলিশের এ ধরনের পক্ষপাতদুষ্ট বক্তব্য প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তাদের এই ন্যাক্কারজনক পক্ষপাতিত্ব এবং প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার নগ্ন প্রচেষ্টার আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সেইসাথে ভোলার তজিমুদ্দিন সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: মাসুম বিল্লাহ এবং থানার ওসিকে তদন্ত প্রক্রিয়া থেকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছি। সাধারণ ভূমিহীন ও নিরীহ নাগরিক হয়রানির জন্য এস পি মো: সাইফুল ইসলামকে ভোলা থেকে অবিলম্বে অপসারন করতে হবে। চর মুজিবনগরে এই ভয়াবহ নারী হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত টীম গঠন করে চর মুজিবনগরের ভ‚মিহীন নারী হত্যার প্রকৃত অপরাধিদের গ্রেফতার এবং দ্রুত- সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ”
বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন-
১. সুলতানা কামাল, সভাপতি, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা
২. জেড আই খান পান্না, অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও সভাপতি, আইন ও সালিশ কেন্দ্র
৩. তবারক হোসেইন, সিনিয়র অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
৪. হোসেন জিল্লুর রহমান, নির্বাহী চেয়ারম্যান, পিপিআরসি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা
৫. রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৬. এড. সুব্রত চৌধুরী, সিনিয়র অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
৭. ব্যারিস্টার সারা হোসেন, অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক, ব্লাস্ট
৮. সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান নির্বাহী, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)
৯. শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, এএলআরডি
১০. মো. নূর খান, মানবাধিকার কর্মী ও নির্বাহী পরিচালক, আইন ও সালিশ কেন্দ্র
১১. অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি
১২. ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি
১৩. ড. স্বপন আদনান, সাবেক শিক্ষক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রফেশনাল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট, সোয়াস, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন
১৪. ড. শহীদুল আলম, আলোকচিত্রী
১৫. রেহনুমা আহমেদ, লেখক
১৬. জাকির হোসেন, প্রধান নির্বাহী, নাগরিক উদ্যোগ
১৭. শিরীন হক, সমাজকর্মী ও সাবেক সভানেত্রী, নারীপক্ষ
১৮. ড. সুমাইয়া খায়ের, অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৯. বদরুল আলম, সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন
২০. সঞ্জীব দ্রং, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম
২১. ড. মোহাম্মদ তানজিমুদ্দিন খান, অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২২. ড. জোবাইদা নাসরীন, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২৩. শরীফ জামিল, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)
২৪. রেজাউল করিম চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক, কোস্ট ট্রাস্ট
২৫. সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ, সুজন
২৬. তাসনীম সিরাজ মাহবুব, সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২৭. রোজিনা বেগম, গবেষক ও অধিকারকর্মী
২৮. দীপায়ন খীসা, তথ্য ও প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম
২৯. হানা শামস আহমেদ, গবেষক ও অ্যাক্টিভিস্ট
৩০. মুক্তাশ্রী চাকমা, কোর মেম্বার, সাংগত
৩১. জায়েদ ইকবাল খান, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন
৩২. ড. শামসুন্নাহার খান ডলি, সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষানী সভা
৩৩. অমলিক কিসকু, সভাপতি, বাংলাদেশ আদিবাসী সমিতি
৩৪. অধ্যাপক ড. পারভীন হাসান, উপাচার্য, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভারসিটি ও চেয়ারপার্সন, ট্রাস্টি বোর্ড, টিআইবি